Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Milk Price Hike

লকডাউনেও অটুট উষ্ণ ‘চা-সম্পর্কে’ এ বার ছেঁকা দুধের চড়া দামে

বাজেটের পরের দিন দুধের দাম বাড়ার ঘোষণা হতেই চায়ের দোকানে আর আগের দরে চা মিলছে না। সর্বত্রই ভাঁড়ের আয়তন-পিছু দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে দুই থেকে তিন টাকা।

A photograph of a Tea Shop

উৎসুক: চা তৈরির অপেক্ষায় ক্রেতারা। বুধবার, চাঁদনি চকে।  ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:০৫
Share: Save:

করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের মধ্যেও যে সম্পর্কের উষ্ণতা কমতে দেয়নি বাঙালি, এ বার সেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে গিয়েই যেন জিভ পুড়ছে! অভিযোগ, বাজেটের পরের দিন দুধের দাম বাড়ার ঘোষণা হতেই চায়ের দোকানে আর আগের দরে চা মিলছে না। সর্বত্রই ভাঁড়ের আয়তন-পিছু দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে দুই থেকে তিন টাকা। চুমুক দেওয়ার মুখেই ছেঁকা খেতে হচ্ছে দাম শুনে! কোথাও নির্দিষ্ট মূল্যের চা ভরে দিতে বললে হতাশ হতে হচ্ছে আরও বেশি।

শহরের চা-চিত্রের খোঁজ নিতে বেরিয়েই দেখা গেল হতাশার নানা ছবি। প্যাকেটজাত দুধে চা তৈরি হয়, ভুগতে হচ্ছে মূলত এমন দোকানে গিয়ে। কলেজ স্ট্রিট এলাকার এমনই একটি দোকানে বিকেলে বেশ ভিড়। বড় পাত্রে চা তৈরিতে ব্যস্ত মালিক। কিছু ক্ষণ পরে ১০টি ছোট ভাঁড়ে চা ভরে দিতে উদ্যোগী হলেন তিনি। পাশে রাখা হল তার চেয়ে আর একটু বড় মাপের আরও ১০টি ভাঁড়। ছোটগুলো কত করে? এক ক্রেতার প্রশ্নের উত্তরে বিক্রেতা বললেন, ‘‘ওগুলো আজ সকাল থেকেই আট টাকা করে বিক্রি করছি।’’ ‘‘কী? পাঁচ টাকার ভাঁড় আট টাকায়?’’— বলেই হাঁটা দিলেন দুই ক্রেতা। বিরক্ত বিক্রেতার মন্তব্য, ‘‘আপনারা আছেন কোথায়? দুধের দাম দু’-তিন টাকা বেড়ে গিয়েছে।’’

হেদুয়ার একটি দোকানে এমনি সময়েই চা পেতে অন্তত ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। নানা কায়দায় চা ভাঁড়ে ঢালেন বিক্রেতা। তিনি বলছেন, ‘‘ছেকাঁ খেলে হবে না। ১২ মাসে তিন বার দুধের দাম বেড়েছে। একটু বেশি দিয়েই ভাল চা খেতে হবে।’’ বেশি কত? ক্রেতার প্রশ্নের উত্তরে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আগে পাঁচ টাকার ভাঁড় ছিল সব চেয়ে কম দামি, এখন সেটাই সাত টাকার।’’ বাগবাজারের কাছে এক দোকানদার আবার নিজেই বললেন, ‘‘ক্রেতারা রেগে যাচ্ছেন। কিন্তু কিছু করার নেই। জল মিশিয়ে তো আর চা হয় না!’’ চাঁদনি চক এলাকার চায়ের বিক্রেতা আবার দাম শুনে কেউ নাক সিঁটকোলে সহজ সমাধান দিচ্ছেন, ‘‘দুধের চা ছাড়ুন। কালো চা খান। শরীর ভাল থাকবে, দাম শুনেও শরীর খারাপ করবে না!’’

রবীন্দ্র সরণি, গিরিশ পার্ক, জোড়াসাঁকো, বড়বাজার এলাকার বেশ কিছু চায়ের দোকানে ঘুরে আবার দেখা গেল, সেখানে দামে বিশেষ কোনও রদবদল হয়নি। এক বিক্রেতা হিন্দিতে বললেন, ‘‘বছরখানেক ধরে আমাদের সব চেয়ে কম দামের ভাঁড় সাত টাকার।’’ তবে তিনি যে ভাঁড় দেখালেন, তা এতটাই ছোট যে, প্রতিবাদ হতে বাধ্য। কিন্তু কেউই কিছু বলছেন না। কেন? ওই বিক্রেতাই বললেন, ‘‘মূল সমস্যা হচ্ছে স্বাদের। এ দিকের বেশির ভাগ দোকানেই মোষের দুধের চা হয়। একটু পাতলা চা যাঁরা খান, তাঁরা মূলত প্যাকেটের দুধ দিয়ে চা বানানো হয় যে সমস্ত দোকানে, সেখানে যান। বৃহস্পতিবার থেকে আমুলের দুধের প্যাকেটের দাম দু’টাকা বাড়ানো হয়েছে। একই পথে হাঁটতে চলেছে এই রাজ্যের প্যাকেটজাত দুধের সংস্থাগুলি। ফলে সব দুধের দামই দু’-তিন টাকা বাড়তে চলেছে। আর মোষের দুধ তো প্রতিদিনই বাড়ে-কমে!’’

রবীন্দ্র সরণির জোড়াসাঁকো দুধ ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য বিনয় সিংহ বললেন, ‘‘এখানে প্রতিদিন চাহিদার উপরে ভিত্তি করে দুধের দাম ঠিক হয়। এক দিন ৭০ টাকা লিটার থাকলে পরের দিনই দাম বাড়তে পারে বা কমতে পারে। অনেকে মোষের দুধের সঙ্গে প্যাকেটের দুধ মিলিয়ে চা বানান। তাতে স্বাদ হয় আবার হিসাবও ঠিক থাকে। এখন প্যাকেটের দুধও মোষের দুধের মতো ৭০ টাকা লিটারে চলে এলে, তখন চায়ের দাম বাড়বেই।’’

লকডাউনের মধ্যে ‘আমরা কি চা খাব না?’ বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ‘চা কাকু’ ওরফে মৃদুল দেব পরে নিজেই চায়ের দোকান খোলেন। তিনি বললেন, ‘‘দাম বাড়লেও কি চা খাওয়া থামে? প্রথম প্রথম ছেঁকা লাগবে। তার পরে ঠিক সয়ে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Milk Tea Tea shop Price Hike milk
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE