অস্থায়ী পুনর্বাসনের জন্য তৈরি দোকানঘর।
আঠেরো মাসে বছর নয়, কাজ শেষ হবে বারো মাসেই— দক্ষিণেশ্বরের স্কাইওয়াক তৈরি নিয়ে এমনই ইঙ্গিত দিলেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যেই দক্ষিণেশ্বরের রানি রাসমণি রোডের দোকানগুলি ফাঁকা হয়ে যায়। রাতে শুরু হয় ভাঙার কাজ। শনিবার কয়েকজন দোকানিকে অস্থায়ী দোকান সাজাতেও দেখা যায়। এ দিন সকালেই পানিহাটিতে এক জল প্রকল্পের উদ্বোধনে এসে ফিরহাদ হাকিম দাবি করেন, আঠেরো মাস সময়সীমা থাকলেও স্কাইওয়াকের কাজ শেষ হবে এক বছরের মধ্যেই। তিনি বলেন, ‘‘তাড়াতাড়ি কাজ শেষের বিষয়ে বলা হয়েছে কেএমডিএ-র আধিকারিকদেরও।’’
প্রশাসন সূত্রে খবর, শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে প্রায় সব দোকানের মালপত্র খালি হতে দেখে রাতেই সেগুলি ভাঙার কাজের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। অবশ্য তার আগেই ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার, পুরসভার চেয়ারম্যান, কেএমডিএ-র আধিকারিকদের সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ নেতাদের একপ্রস্থ বৈঠক হয়। সেই মতো কলকাতা পুরসভা থেকে ৬টি বুলডোজার, বিপর্যয় মোকাবিলার দল, ইঞ্জিনিয়ারেরা দক্ষিণেশ্বরে এসে উপস্থিত হন। হাজির ছিলেন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, পুর-কমিশনার খলিল আহমেদ, মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবব্রত মজুমদার-সহ অন্য আধিকারিকেরা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশও সব দিক থেকে প্রস্তুত ছিল। ছিলেন পুলিশ কমিশনার নীরজ সিংহ, ডিসি (ডিডি) অজয় ঠাকুর-সহ ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ঊর্ধ্বতন কর্তারা। রাখা হয়েছিল সাধারণ লাঠিধারী পুলিশকর্মীদের পাশাপাশি র্যাফ, কমব্যাট ফোর্স, জলকামান। এমনকী কোনও কারণে ব্যারিকেড তৈরির প্রয়োজনে কলকাতা পুলিশের কয়েক হাজার গার্ডরেলও নিয়ে আসা হয়।
দোকান ভাঙার তদারকিতে কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ও মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবব্রত মজুমদার।
ওই রাত সাড়ে ৯টা থেকেই দক্ষিণেশ্বর রানি রাসমণি রোডে ঢোকা ও বেরোনোর সমস্ত রাস্তা, গলি পুলিশ দিয়ে আটকে দেওয়া হয়। রাস্তার পাশের রেল আবাসন, বস্তির ভিতরেও পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এর পরেই বুলডোজার দিয়ে ভাঙার কাজের জন্য শুধুমাত্র দোকানঘরগুলির বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়। পুলিশ, রাজ্য ও স্থানীয় প্রশাসনের সমস্ত কর্তাদের উপস্থিতিতে রাত সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলে ফাঁকা হয়ে যাওয়া দোকান ভাঙার কাজ। কলকাতার মেয়র তথা কেএমডিএ-র ভাইস চেয়ারম্যান শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা উচ্ছেদে বিশ্বাস করি না। দোকানদারদের পুনর্বাসন দিয়েই একটি সুন্দর প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে। এমনকী, পরে আবার তাঁরা দোকান ফিরে পাবেন। কেএমডিএ-র পরিকাঠামো তৈরি রয়েছে। জায়গা খালি হয়ে গেলেই কাজ শুরু হবে।’’
তবে ওই রাতেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়ানো এবং বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশকে ইট মারার অভিযোগে চার জনকে ধরেছে বেলঘরিয়া থানার পুলিশ। এমনকী শনিবার সকালেও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বিশাল বাহিনী ছিল। পুলিশ কমিশনার-সহ টহল দেন অন্যান্য কর্তারাও।
শনিবার সকালে কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের গোপাল সাহা বলেন, ‘‘কলকাতা হাইকোর্ট এ দিনের মধ্যে দোকান খালি করতে নির্দেশ দিয়েছিল। প্রায় সব দোকানদরেরাই শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে তাঁদের মালপত্র সরিয়ে নিয়েছিলেন। তাই আমরাও সময় নষ্ট না করে ওই রাত থেকেই কাজে নেমেছি।’’ এ দিনই পানিহাটিতে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘একটু দেরিতে হলেও দোকানিদের শুভ বুদ্ধি হয়েছে। এটা মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প। কিছু রাজনৈতিক দলের উস্কানিতে দোকানিরা নিজেদের ভালটা বুঝতে পারছেন না। তবে ওঁরা ঠিক বুঝবেন।’’
পুরসভা সূত্রে খবর, কয়েকজন দোকানদার অস্থায়ী দোকানের চাবি নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দু’তিন জন ইতিমধ্যেই টিনের তৈরি দোকানঘরে ব্যবসা সাজানোর কাজও শুরু করেছেন। শনিবার ১২৬ নম্বর স্টলে দোকান সাজানোর কাজ করতে দেখা গেল পোড়ামাটির মূর্তির ব্যবসায়ী তাপস প্রামাণিককে। বললেন, ‘‘পেট তো চালাতে হবে। তাই প্রতিবাদে যাইনি। আর সরকার তো উচ্ছেদ করছে না। কাজের জন্য পুনর্বাসন দিচ্ছে। কাজ শেষ হলে তো ফের জায়গা দেবে বলেছে।’’ এ দিন ভাঙা দোকান থেকে শেষ জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়ার কাজে ব্যস্ত কয়েকজন দোকানদারও অবশ্য আর প্রতিবাদ-বিক্ষোভে যেতে রাজি নন। তাঁদের দাবি, ‘‘পেটে তো গামছা বেঁধে রাখতে পারব না। পরিবার রয়েছে। তাই হয়তো এ বার ভাবনা-চিন্তা করতে হবে।’’ তবে দক্ষিণেশ্বর রানি রাসমণি রোড দোকানদার সমিতির সম্পাদক অজিত সিংহ বলেন, ‘‘১৯ তারিখ পর্যন্ত দোকান খালির সময় ছিল। তার আগের দিনই ভেঙে দেওয়া হল। ২১ ডিসেম্বর কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা পড়বে। আমরা ডিভিশন বেঞ্চেও আবেদন করেছি। এ বার আদালতের নির্দেশের জন্যই অপেক্ষা করছি।’’
— নিজস্ব চিত্র
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy