স্বাদু: বড়দিনে চাহিদা বেড়েছে ব্ল্যাক ফরেস্ট কেকের। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
বেকারিতে ঢোকার মুখেই থামিয়ে দিলেন এক জন। এগিয়ে দিলেন মাথা ঢাকার একটি টুপি। ভিতরে ঢুকে দেখা গেল, পরপর কেক তৈরি হচ্ছে। শেষ মুহূর্তের ‘ফিনিশিং টাচ’ দেওয়ার কাজও চলছে। সব কর্মীরা গ্লাভস ও টুপি পরে রয়েছেন।
কলকাতা পুরসভার একটি দল গত সপ্তাহে পরিদর্শনে এসে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কেক তৈরি হতে দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল। নোটিসও দেওয়া হয়েছিল পুরসভার তরফে। তার পর থেকেই রাতারাতি বদল ঘটেছে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের ওই নামী কেকের দোকানে। সংশ্লিষ্ট সংস্থা কর্মীদের উদ্দেশ্যে নির্দেশ জারি করেছে, মাথায় টুপি বা হাতে গ্লাভস না পরে কোনও কেক-পেস্ট্রিতে হাত দেওয়া যাবে না।
ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের ওই সংস্থার ম্যানেজার সুরজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘গত বছরের তুলনায় এখনও পর্যন্ত কেক বিক্রি ২০ শতাংশের মতো কম হয়েছে।’’ ওই দোকানের কর্ণধার টনি প্রধান বলেন, ‘‘পুরসভা বলার পরেই আমরা কর্মীদের জন্য গ্লাভস, টুপির ব্যবস্থা করেছি। বিশেষ হ্যান্ড-ওয়াশও ব্যবহার করা হচ্ছে।’’
পরিচ্ছন্নতা নিয়ে বিতর্ক যাই উঠুক, এ বারের কেকের বাজারে বৈচিত্র কিছুটা বেশি। বড়দিন মানেই ফ্রুট কেক— এই তত্ত্বে গত তিন-চার বছরে বদল এসেছে বলে জানাচ্ছেন শহরের কেক বিক্রেতারা। তাঁদের মতে, ফ্রুট কেকের একাধিপত্যে ভাগ বসিয়েছে ভ্যানিলা, কেশর-পেস্তা, চকলেট, বাটারস্কচ কেক। তাঁরা জানাচ্ছেন, কোনও কোনও ক্ষেত্রে বাটারস্কচ কেকের বিক্রি অনেকটাই বেশি। আবার নিউ মার্কেটেরই একটি কেকের দোকানে শুধুমাত্র ব্ল্যাক ফরেস্টের জন্যই তৈরি হয়েছে ‘ইমার্জেন্সি কাউন্টার’। চাহিদা সামাল দিতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সেখানে শুধু ওই কেকটিই তৈরি হচ্ছে।
নিউ মার্কেটের দোকানে কেক কিনতে লাইন। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
নামী দোকানের কেকই হোক বা ফুটপাতে বিক্রি হওয়া কেক, বাঙালি এখন বৈচিত্র-প্রত্যাশী। ফুটপাতের এক কেক বিক্রেতা বলেন, ‘‘আমাদের স্টক বেশি নয়। তাই অনেকে যখন ফ্রুট-কেকের বাইরে অন্য ধরনের কেক চাইছেন, আমরা দিতে পারছি না। তাঁরা চলে যাচ্ছেন।’’
আর এক বিক্রেতা বলেন, ‘‘বড়দিনে বাঙালি কেক খাবেই। সে যে ধরনের কেকই হোক। তবে গত কয়েক বছরে কেকের চাহিদায় বদল এসেছে এটা সত্যি।’’ নিউ মার্কেটের শতাব্দীপ্রাচীন কেক সংস্থার অন্যতম কর্ণধার আইজ়্যাক নাহুমও বলেন, ‘‘অন্য স্বাদের কেকের চাহিদা বেড়েছে অনেকটাই। রিচ ফ্রুট কেকের বিক্রি সবচেয়ে বেশি হলেও ব্ল্যাক ফরেস্ট বা অন্য কেকেরও চাহিদা রয়েছে।’’
উৎসব-প্রিয়তাই বাঙালিকে কেকমুখী করেছে, বলছেন বড়দিনে পার্ক স্ট্রিট উৎসবের অন্যতম উদ্যোক্তা শেন কালভার্ট। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের জীবনের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য ভাবে জুড়ে গিয়েছে কেক। জন্মদিনের কেককে আমরা বার্থ-ডে কেক বলি। ক্রিসমাস কেকের সঙ্গেও কিন্তু যিশুর জন্মদিনের বিষয়টি জড়িত।’’
কেকের এই সংস্কৃতিই যেন মিলিয়ে দিচ্ছে দুই প্রজন্মকে। ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের দোকানটির উত্তরসূরি বরুণ প্রধান সদ্য হসপিট্যালিটি ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেছেন। ব্যবসা বোঝার জন্য দোকানে আসা-যাওয়া করছেন তিনি। বরুণ বলছেন, ‘‘দেখছি কী ভাবে কেক তৈরি হয়। মানুষ কত ভালবাসেন কেক।’’ ওই দোকানের ৫০০ মিটারের দূরত্বে বসে আইজ়্যাক নাহুম বলছেন, ‘‘কেক থাকবেই। পরম্পরার মতো, ভালবাসার মতো।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy