Advertisement
০১ মে ২০২৪
East West Metro

বৌবাজারে মেট্রোর থমকে থাকা কাজ আদৌ শুরু হবে কি চলতি মাসে

চলতি বছরের অক্টোবরে বিপর্যয়ের মুখে পড়া বৌবাজারের মদন দত্ত লেন এবং বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের সংযোগস্থল ছাড়াও আরও দু’টি সংযোগকারী সুড়ঙ্গ তৈরিরকাজ এখনও বাকি।

মেট্রোর কাজ চলছে বৌবাজারে। নিজস্ব চিত্র

মেট্রোর কাজ চলছে বৌবাজারে। নিজস্ব চিত্র

ফিরোজ ইসলাম 
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৩২
Share: Save:

নভেম্বর মাসে আবহাওয়া শুকনো থাকলেও বৌবাজার এলাকায় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর থমকে থাকা কাজে আদৌ হাত দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে বাড়ছে সংশয়। মেট্রোর সুড়ঙ্গ নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার আধিকারিকেরা পরোক্ষে মানছেন, পর পর তিন বার প্রায় কাছাকাছি জায়গায় বিপত্তির পরে তাঁদের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরেছে। নকশা অনুযায়ী শিয়ালদহ থেকে বৌবাজারের মধ্যে তিনটি ক্রস প্যাসেজ তৈরি করা আদৌ সম্ভব হবে কি না, উঠছে সেই প্রশ্নও। উল্লেখ্য, মেট্রো পরিষেবা শুরু হওয়ার পরে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে পূর্ব এবং পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গের মধ্যে সংযোগকারী পথ হিসাবে দেড় মিটার চওড়া এবং তিন মিটার উঁচু আর্চ আকৃতির ওই সুড়ঙ্গ তৈরি করা যাত্রী-নিরাপত্তার স্বার্থেই জরুরি। পাশাপাশি অবস্থিত পূর্ব এবং পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গের পারস্পরিক দূরত্বের সাপেক্ষে সংযোগকারী সুড়ঙ্গগুলির দৈর্ঘ্য ৬-১০ মিটারের মধ্যে।

চলতি বছরের অক্টোবরে বিপর্যয়ের মুখে পড়া বৌবাজারের মদন দত্ত লেন এবং বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের সংযোগস্থল ছাড়াও আরও দু’টি সংযোগকারী সুড়ঙ্গ তৈরিরকাজ এখনও বাকি। তার মধ্যে একটি ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া মোড়েরকাছে, অন্যটি নির্মলচন্দ্র স্ট্রিটের নীচে। এই দু’টি সুড়ঙ্গ নির্মাণের ক্ষেত্রে নতুন করে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করা নিয়েই আশঙ্কায় রয়েছে নির্মাণ সংস্থা। একাধিক প্রস্তুতি নেওয়ার পরেও যে ভাবে গত ১৪ অক্টোবর মদন দত্ত লেন এবং বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের সংযোগস্থলে বিপর্যয় হয়েছে, তার পরে ওই কাজে নতুন করে হাত দেওয়া নিয়েই শঙ্কায় সংশ্লিষ্ট আধিকারিকেরা। এ বিষয়ে একাধিক বিশেষজ্ঞ সংস্থার পরামর্শ নেওয়া হলেও সমস্যা এড়ানোর নিশ্চিত দিশা মেলেনি বলেসূত্রের খবর।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্রস প্যাসেজ বা সংযোগকারী সুড়ঙ্গ তৈরি করার পরিকল্পনার বদলে বিকল্প ভাবনা শুরু হয়েছে। ভাবা হচ্ছে একাধিকবিকল্প। তার মধ্যে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারের ধাঁচে বৌবাজারে স্থায়ী শ্যাফট তৈরির পরিকল্পনাও ভাবনায় রয়েছে আধিকারিকদের। তবে এই বিকল্প রেল বোর্ড এবং মেট্রো প্রকল্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার অনুমোদন সাপেক্ষ। ফলে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, বিকল্প উপায় ভেবে সেটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো এবং তা গৃহীত হওয়া-সহ গোটা প্রক্রিয়া চলতি মাসের মধ্যে শেষ হওয়া এক প্রকার অসম্ভব। পাশাপাশি, প্রস্তাব অনুমোদিত হলেও তার পরে ভেন্টিলেশন শ্যাফট তৈরির জন্য জমির বন্দোবস্ত করার বিষয়টি থাকবে। যার জন্য এই পরিকল্পনা কত দূর বাস্তবসম্মত এবং কতটা গৃহীত হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে মেট্রোর আধিকারিকদের মধ্যেই।

উল্লেখ্য, বৌবাজারের মাটির চরিত্র নিয়ে খোঁজখবর করে গিয়েছেন আইআইটি, রুরকির বিশেষজ্ঞেরা। সোম এবং বুধবার বৌবাজারে যান দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশনের নির্মাণ বিভাগের ডিরেক্টর দলজিৎ সিংহ। তিনি দিল্লিতে ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজে যুক্ত ছিলেন। বৌবাজারের বিপর্যস্ত এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখেন তিনি। তবে, করণীয় স্থির করে এ সম্পর্কে রিপোর্ট পেতে অন্তত আরও দু’সপ্তাহ লাগতে পারে বলে মেট্রো সূত্রের খবর। বুধবার কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে কর্পোরেশন লিমিটেড (কেএমআরসিএল)-এর আধিকারিকদের সঙ্গে ওই মেট্রোকর্তার বৈঠক হয় বলে সূত্রের খবর।

প্রসঙ্গত, মেট্রো নির্মাণ এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে চলতি বছরেই দিল্লি মেট্রোরেল কর্পোরেশন লিমিটেড মেট্রো নির্মাণের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ভাবে পরামর্শদাতা সংস্থা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ফলে বৌবাজারের সঙ্কট কাটানোর ক্ষেত্রে দিল্লি মেট্রোর আধিকারিকেরা কী পরামর্শ দেন, তা নিয়ে কৌতূহল থাকছে। তবে নির্মাণ সংস্থার নিজস্ব সমীক্ষা এবং দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশনের আধিকারিকদের পরামর্শ যা-ই হোক, চলতি মাসে বৌবাজারে কাজ শুরু হওয়া নিয়ে আশঙ্কা কিন্তু যাচ্ছে না। নভেম্বরে কাজ না এগোলে মেট্রো প্রকল্প সময়মতো সম্পূর্ণ না-ও হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE