Advertisement
২৪ মে ২০২৪
Price Hike

Price Rise: জ্বালানির দাম বাড়ায় শহরে আগুন আনাজ, মাছ-মাংসও

গত বছর দুর্গাপুজোর কিছু দিন আগে থেকে নাগাড়ে বৃষ্টি হওয়ায় আনাজের দাম এক লাফে বেড়ে গিয়েছিল অনেকটা।

শিয়ালদহের কোলে মার্কেটে চলছে আনাজ কেনাকাটা। সোমবার।

শিয়ালদহের কোলে মার্কেটে চলছে আনাজ কেনাকাটা। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২২ ০৬:৩৫
Share: Save:

লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে জ্বালানির দাম। পেট্রল, ডিজ়েলের দাম মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে চলায় আনাজ ও ফলের দাম তো বটেই, বেড়েছে মাছ-মাংসের দামও। সব মিলিয়ে যেন সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়।

গত বছর দুর্গাপুজোর কিছু দিন আগে থেকে নাগাড়ে বৃষ্টি হওয়ায় আনাজের দাম এক লাফে বেড়ে গিয়েছিল অনেকটা। অনেকে ভেবেছিলেন, শীত পড়লে বুঝি দাম খানিকটা কমবে। কিন্তু শীতেও আনাজের দাম বিশেষ কমেনি। শীত চলে গিয়ে গরম পড়ে যাওয়া সত্ত্বেও অবস্থার কোনও পরিবর্তন নেই। আনাজের দাম যে কমছে না, তা স্বীকার করে নিয়ে ‘শিয়ালদহ কোলে মার্কেট ভেন্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি তথা আনাজের দাম নিয়ন্ত্রণে গঠিত রাজ্য সরকারের টাস্ক ফোর্সের সদস্য কমল দে বললেন, ‘‘গত দু’সপ্তাহে ১২ বার পেট্রল, ডিজ়েলের দাম বেড়েছে। সেই কারণে গ্রামাঞ্চল থেকে আনাজ গাড়িতে করে শহরে আনার খরচও অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। এক দিকে চাষিরা তাঁদের আনাজের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। অন্য দিকে, পরিবহণের খরচ বেড়ে যাওয়ায় খুচরো বাজারেও দাম নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। করোনার পর থেকে লোকাল ট্রেনের ভেন্ডার কামরায় আনাজ পরিবহণের অনুমতি মিলছে না। গাড়িতে করে আনাজ আনতে অনেক বেশি টাকা লেগে যাচ্ছে।’’

শহরের বিভিন্ন বাজারে আলু, পেঁয়াজ, পটল, ঝিঙে থেকে শুরু করে বেগুন, ক্যাপসিকাম, কাঁচালঙ্কা— কোনও আনাজেরই দাম কমার কোনও লক্ষণ নেই। বর্তমানে খুচরো বাজারে জ্যোতি আলুর দাম ২০-২২ টাকা প্রতি কেজি। অথচ, এই দাম ১৫-১৮ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। একই ভাবে পেঁয়াজ বিকোচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়। পটল, ঝিঙে, বেগুন ৫০ টাকার কমে মিলছে না। ‘ফোরাম অব ট্রেডার্স অর্গানাইজ়েশন’-এর সভাপতি তথা আনাজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য রাজ্য সরকারের টাস্ক ফোর্সের আর এক সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে বললেন, ‘‘এখন সমস্ত আনাজের দামই স্বাভাবিকের তুলনায় কেজিতে ২০-২৫ টাকা করে বেশি।’’ আনাজের দাম বাড়ার পিছনে রবীন্দ্রনাথবাবুও জ্বালানির বেলাগাম মূল্যবৃদ্ধিকেই দায়ী করেছেন।

আনাজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ফলের দামও। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, গত রবিবার থেকে রমজান মাস শুরু হয়েছে। এমনিতেই রমজান মাসে ফলের দাম তুলনায় বেশি থাকে। জ্বালানির দাম যেন সেই আগুনে দামেই ঘৃতাহুতির কাজ করেছে। এখন ফল কিনতে গেলেই চড়া দাম হাঁকছেন ব্যবসায়ীরা। যে শসা অন্য সময়ে ২০-৩০ টাকা কেজি দরে বিকোয়, এখন সেটাই ৫০-৮০ টাকা। খেজুর, আপেল, আঙুর, নাশপাতি, বেদানা, আনারস— সবেরই দাম বাড়ায় ফল কিনতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। মেছুয়ার ফল বাজারের ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ডিজ়েলের দাম এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, ভিন্ রাজ্য থেকে ট্রাকে করে ফল আনতে গিয়ে অতিরিক্ত ৪০-৫০ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। ফলে দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন বিক্রেতারা।

শহরের বিভিন্ন বাজারে মাছের দামও বেশ বেড়েছে। মাছ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি তো আছেই, সেই সঙ্গে সমুদ্রে মাছ ধরায় বিধিনিষেধ জারি হওয়ায় পর্যাপ্ত সামুদ্রিক মাছ আসছে না। আবার ভিন্ রাজ্য থেকে মাছ এলেও গরমে সেই মাছের একাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে সব মিলিয়ে মাছের দাম বাড়ছে। মানিকতলা বাজারের মাছ বিক্রেতা প্রদীপ মণ্ডলের কথায়, ‘‘রুই, কাতলা থেকে সমস্ত রকমের সামুদ্রিক মাছ এখন প্রতি কেজিতে ৩০-৪০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। গরমে প্রতি বছরই এই অবস্থা থাকে। তবে এ বছর জ্বালানির দামটা মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েছে।’’

রেহাই পায়নি মুরগির মাংসও। দোলের আগে পর্যন্ত এক কেজি মুরগির মাংসের দাম ২০০ টাকার নীচে ছিল। এখন তা ২০০-২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বরাহনগরে মুরগির মাংসের বড়সড় দোকানের
পাশাপাশি উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটে একাধিক পোলট্রি খামার রয়েছে পলাশ সাহার। তাঁর কথায়, ‘‘পোলট্রির মুরগি চাষে খরচ বেড়েছে। ভুট্টা, সয়াবিন ছাড়াও এক রকমের তেল খেয়ে ওই মুরগিরা
বংশবৃদ্ধি করে। প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়ায় পোলট্রি চাষিরাও
এখন বিপর্যস্ত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Price Hike Petrol Diesel Price Hike Vegetables
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE