Advertisement
২১ মে ২০২৪
Electric Wires

তারের জটের যন্ত্রণায় জেরবার শহর, মুক্তি আদৌ মিলবে কি?

টালা থেকে টালিগঞ্জ, বেহালা থেকে বেলেঘাটা— শহরের সর্বত্রই তারের জটের চেহারাটা একই রকম। শহরের প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলা ও তার আশপাশে তারের জট এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, যে কোনও মুহূর্তে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

An image of Wires

বিপজ্জনক: কাশীনাথ দত্ত রোডের ফুটপাত জুড়ে পড়ে তারের কুণ্ডলী।বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:০২
Share: Save:

সঙ্কীর্ণ ফুটপাতে হাঁটাই দায়। তার উপরে গত কয়েক দিন ধরে কেব্‌ল সংযোগের তারের জট বাতিস্তম্ভ থেকে ছিঁড়ে ফুটপাত ও রাস্তার বেশ কিছুটা অংশ দখল করে পড়ে রয়েছে। জট পাকানো তার ওই ভাবে পড়ে থাকায় সমস্যায় পড়েছেন পথচারীরা। অভিযোগ, তারের জটে পা আটকে অনেকেই রাস্তায় মুখ থুবড়ে পড়েছেন। বুধবার সকালে বরাহনগর লাগোয়া কলকাতা পুরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত কাশীনাথ দত্ত রোডে গিয়ে এই ছবিই চোখে পড়ল। রাস্তার এক দিকের ফুটপাত কলকাতা পুরসভার এলাকাভুক্ত। অন্য দিকের ফুটপাত বরাহনগর পুরসভার অন্তর্গত।

শুধু এক নম্বর ওয়ার্ডেই নয়, সারা শহরেই কেব্‌ল সংযোগের তার নিয়ে এই সমস্যা রয়েছে। এ নিয়ে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন কেব্‌ল অপারেটর এবং এমএসও (মাল্টিপল সিস্টেম অপারেটর)-দের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন পুরকর্তারা। বিদ্যুতের খুঁটি থেকে সমস্ত তার সরিয়ে মাটির নীচে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছিল পুরসভা। কিন্তু তা যে বাস্তবায়িত হয়নি, শহরের আনাচকানাচে ঘুরলেই তা টের পাওয়া যায়। পুরসভার আলো বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘আমরা শহর থেকে ধাপে ধাপে মাটির উপরের তার সরিয়ে ফেলার কাজ শুরু করেছি। ইতিমধ্যেই তিনটি পর্যায়ে শহরের প্রায় ৬০ কিলোমিটার রাস্তায় এই কাজ করা হয়েছে। দক্ষিণ কলকাতার একাধিক রাস্তায় কেব্‌ল সংযোগের তার মাটির নীচে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শহরের বাকি অংশেও ধীরে ধীরে তা সরানো হবে।’’ আলো বিভাগের কর্তা এমন দাবি করলেও কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় তারের জটের দৃশ্যদূষণ যে ভয়ানক চেহারা নিয়েছে, সে অভিযোগ করছেন অনেকেই। সম্প্রতি কসবায় রাসবিহারী কানেক্টরের একটি শপিং মলের সামনে ফুটপাতে পড়ে থাকা তারের কুণ্ডলীতে পা জড়িয়ে রাস্তায় পড়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় এক বাসিন্দা। এর পরে বাধ্য হয়ে ওই দলা পাকানো তার সরাতে পুলিশের দ্বারস্থ হন তিনি। পুলিশের উদ্যোগে কেব্‌ল সংযোগের সেই তার সরানো হয়।

টালা থেকে টালিগঞ্জ, বেহালা থেকে বেলেঘাটা— শহরের সর্বত্রই তারের জটের চেহারাটা একই রকম। শহরের প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলা ও তার আশপাশে তারের জট এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, যে কোনও মুহূর্তে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বছর ছয়েক আগে পার্ক সার্কাসের চার নম্বর সেতুর উপরে পড়ে থাকা তারের জটে মোটরবাইকের চাকা জড়িয়ে যাওয়ায় মৃত্যু হয়েছিল বেনিয়াপুকুরের বাসিন্দা এক যুবকের। একই ভাবে কাশীনাথ দত্ত রোডের ফুটপাতেও গত কয়েক দিন ধরে পড়ে থাকা তারের জটে পা আটকে একাধিক পথচারী আহত হয়েছেন বলে স্থানীয়েরা অভিযোগ করেছেন। স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, ‘‘টানা পাঁচ দিন ধরে তারগুলো পড়ে রয়েছে। অথচ, প্রশাসনের কোনও পরোয়া নেই।’’ স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি কার্তিক মান্না অবশ্য দ্রুত তার সরিয়ে ফেলার আশ্বাস দেন। যদিও দুপুর পর্যন্ত সেই তার সরানো হয়নি বলেই খবর।

পুরসভার মেয়র পারিষদ (আলো) সন্দীপরঞ্জন বক্সী বললেন, ‘‘শহরে মাটির নীচে কেব্‌ল, ব্রডব্যান্ড ও অন্যান্য তার নিয়ে যাওয়ার জন্য বছর দেড়েক আগেই কাজ শুরু হয়েছে। ধর্মতলা, মৌলালি, পার্ক স্ট্রিট, বিধান সরণি ও পার্ক সার্কাস এলাকার বেশ কিছু রাস্তায় শীঘ্রই এই প্রকল্পের পাইপ বসবে।’’ পুরসভার আলো বিভাগের এক আধিকারিক জানান, ধর্মতলা সংলগ্ন লেনিন সরণি, এস এন ব্যানার্জি রোড, এ জে সি বসু রোড, সিআইটি রোড-সহ একাধিক রাস্তায় মাটির নীচে ওই পাইপ বসানোর কাজ শুরু হবে।

মেয়র পারিষদ (আলো) বা পুর আধিকারিকেরা তারের জঞ্জাল সরানোর আশ্বাস দিলেও সাধারণ নাগরিকদের প্রশ্ন, গত কয়েক বছর ধরে পুর কর্তৃপক্ষ তারের জঞ্জাল সরানোর বিষয়ে শুধু বৈঠকই করে চলেছেন। কাজের কাজ হবে কবে? মেয়র পারিষদের (আলো) বক্তব্য, ‘‘পুরসভা ধাপে ধাপে তার সরাবে। তার জন্য একটু সময় লাগবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Road accidents Danger
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE