তখনও আতঙ্কে মুন্সী দম্পতি। রবিবার, কেষ্টপুরে। নিজস্ব চিত্র
সিঁড়ির নীচে মিটার বক্সে দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। তিনতলার ফ্ল্যাটে অসুস্থ শয্যাশায়ী বৃদ্ধ স্বামীকে নিয়ে আটকে স্ত্রী। রবিবার সকালে কেষ্টপুরে এমনই অগ্নিকাণ্ডে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনল স্থানীয় ডাব বিক্রেতার উপস্থিত বুদ্ধি। বহুতলের বাসিন্দারা জানালেন, তিনি ট্রান্সফর্মারের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করতে না বললে আগুন আরও বড় আকার নিত। মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে কেষ্টপুর এলাকায় একই কায়দায় ফের আগুন লাগার ঘটনায় রাজ্য বিদ্যুৎবণ্টন সংস্থাকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন পশ্চিম প্রফুল্লকাননের বাসিন্দারা।
গত শুক্রবার কেষ্টপুরের রবীন্দ্রপল্লিতে দুপুর থেকে রাতের মধ্যে ১২টি বাড়ির মিটার বক্সে আগুন লেগেছিল। যার জেরে সন্ধ্যায় পথে নেমে বিদ্যুৎবণ্টন সংস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান আবাসিকেরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বাগুইআটি থানার পুলিশ। বিদ্যুতের তারে অতিরিক্ত চাপ পড়ে যাওয়ায় আগুন লেগেছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছিল পুলিশ। রবিবারের অগ্নিকাণ্ডের প্রেক্ষিতে সে দিনের ঘটনা থেকে বিদ্যুৎ দফতর কোনও শিক্ষা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন পশ্চিম প্রফুল্লকাননের বাসিন্দারা। স্থানীয় সূত্রের খবর, সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ আচমকা ওই আবাসনের ব্লক এ-র মিটার বক্সে ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা চিৎকার করে আবাসিকদের সচেতন করেন। কিন্তু আবাসন থেকে বেরোনোর মুখেই তো আগুন! ‘এ’ ব্লকের আবাসিক সুমন সিংহ বলেন, ‘‘দরজা খুলে কালো ধোঁয়ায় কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না। বাইরে যাব কী করে! প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। রাতে আগুন লাগলে কী হত, তা ভেবে শিউরে উঠছি।’’ তিনি জানান, তিনতলার বাসিন্দা ৮২ বছরের বৃদ্ধ প্রদীপ মুন্সী দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী। প্রদীপবাবুর স্ত্রী প্রভাতী মুন্সী বলেন, ‘‘জানলা দিয়ে পাশের বাড়ির বাসিন্দারা আমাকে দ্রুত নেমে আসতে বলেন। কিন্তু অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে নীচে নামব কী ভাবে? তাই অসহায় ভাবে ওঁর পাশেই বসে ছিলাম।’’
স্থানীয় বাসিন্দা সমীর রায় জানান, ওই বহুতলের পাশাপাশি এএ ১২১-এর বহুতলেও আগুন ধরতে শুরু করেছিল। সেখানে মিটার বক্সের তারে আগুনের ফুলকি দেখা যায়।
স্থানীয় সূত্রের খবর, পশ্চিম প্রফুল্লকাননের পাশাপাশি, নোনাপুকুর, নারায়ণতলার একাধিক আবাসনে এ দিন একই ভাবে আগুন লাগে। কিন্তু কোনওটিই বড় আকার নেয়নি। সমীরের অভিযোগ, ‘‘পুজোর সময় থেকেই এই সমস্যা চলছে। বিদ্যুতের দাম বাড়লেও রক্ষণাবেক্ষণে নজর দেওয়া হচ্ছে না।’’
রাজ্য বিদ্যুৎবণ্টন সংস্থা অবশ্য প্রাথমিক ভাবে আবাসনগুলির বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাতেই গলদ আছে বলে মনে করছে। বণ্টন সংস্থার আধিকারিকদের একাংশের দাবি, আবাসনগুলির ওয়্যারিংয়ে ত্রুটি আছে। যার জেরে লোড নিতে না পারায় বিদ্যুতের তারে আগুন ধরে যাচ্ছে। তবে বাসিন্দাদের পাল্টা যুক্তি, আবাসনগুলি নতুন হয়নি। আচমকা হঠাৎ এত দিন পরে কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হল, প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘কী কারণে বারবার এমন ঘটনা ঘটছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy