Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

বিদেশিরাও মুগ্ধ কার্নিভালে

প্রথমে অবশ্যই আসন্ন অনূর্ধ্ব ১৭ যুব বিশ্বকাপ। প্রায় প্রত্যেক পুজো কমিটির শোভাযাত্রায় ছিল বিশ্বকাপ নিয়ে কিছু না কিছু উপস্থাপনা।

আলোকপথে: বিসর্জনের শোভাযাত্রা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, রেড রোডে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

আলোকপথে: বিসর্জনের শোভাযাত্রা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, রেড রোডে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:০৪
Share: Save:

দিল্লিতে এক বন্ধুর কাছ থেকে কলকাতার বিসর্জন কার্নিভালের খবর পেয়েছিলেন স্পেনের ডেভিড। তড়িঘড়ি বিমানের টিকিট কেটে এসেছেন। গাঁটের কড়ি কড়ায়-গণ্ডায় উসুল হয়েছে বলে দাবি ডেভিডের। বললেন, ‘‘অবিশ্বাস্য! এমন শোভাযাত্রা দেখব, সত্যিই ভাবিনি!’’

মাসখানেক আগেই কলকাতায় জার্মানির ভাইস-কনসাল হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছেন লিজা লোরেঞ্জ। মঙ্গলবার রেড রোডে স্বামীকে নিয়ে হাজির লিজা। বললেন, ‘‘আসার পর থেকে কার্নিভালের গল্প শুনছি। তাই দেখতে এলাম। দারুণ লেগেছে।’’

লিজা, ডেভিডরাই শুধু নন। এ দিন রেড রোডে দেখা গেল একঝাঁক বিদেশি পর্যটককে। শোভাযাত্রা শুরু হতেই অনেকে ছবি তোলার জন্য দেশি জনতার সঙ্গে বসে পড়লেন রাস্তায়।

আরও পড়ুন: দিলীপের সফর নিয়ে কি নতুন চাপে গুরুঙ্গরা

‘ফ্রিড’ এবং আইসিসিআর সূত্রের খবর, তাদের উদ্যোগে এ দিনের কার্নিভালে হাজির ছিলেন প্রায় জনা ষাটেক বিদেশি। এ ছাড়াও, ইতালি, আমেরিকা, রাশিয়া, চিন, জার্মানি, ব্রিটেন, বাংলাদেশ-সহ বেশ কয়েকটি দেশের কনসাল জেনারেলের প্রতিনিধিরা দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। এসেছিল ফিফা-র একটি প্রতিনিধি দলও। তাদের সঙ্গে ছিলেন চিলে ও ইংল্যান্ডের যুব বিশ্বকাপ দলের কয়েক জন কর্মকর্তা এবং খেলোয়াড়।

কাঁটায় কাঁটায় ৪টে ৫৫ মিনিটে ‘চেতলা আলাপী’র শোভাযাত্রা দিয়ে শুরু হল কার্নিভাল। তার পরে গায়ক অভিজিতের ঢাক আর শুভশ্রীর নাচ দিয়ে আসরে হাজির ‘শ্রীভূমি’। পিছনে বড়-ছোট-মাঝারি মিলিয়ে একে একে ৬৬টি পুজোর শোভাযাত্রা চলল রেড রোডে। তিন ঘণ্টা ধরে। যার ‘থিম’ও দু’তিনটে বিষয়েই আটকে রইল।

প্রথমে অবশ্যই আসন্ন অনূর্ধ্ব ১৭ যুব বিশ্বকাপ। প্রায় প্রত্যেক পুজো কমিটির শোভাযাত্রায় ছিল বিশ্বকাপ নিয়ে কিছু না কিছু উপস্থাপনা। এর বাইরে দ্বিতীয় স্থানে সরকারের সব চেয়ে সফল প্রকল্প হিসেবে পরিচিত ‘কন্যাশ্রী’। কিছু শোভাযাত্রায় ছিল ‘জল ধরো, জল ভরো’ এবং ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রকল্পের প্রচারও। সঙ্গে অনেক পুজো কমিটির শোভাযাত্রাতেই বেজে উঠল মুখ্যমন্ত্রীর লেখা ও সুর দেওয়া গানের কলি। মাথা নেড়ে তাল দিলেন মুখ্যমন্ত্রীও।

এত কিছু জৌলুসের মধ্যেও তাল কাটল পুজো কমিটিগুলির বিরুদ্ধে পুলিশের নির্দেশ না-মানার অভিযোগে। লালবাজার সূত্রের খবর, পুলিশের তরফে প্রতিটি পুজো কমিটিকে বলা হয়েছিল, চারটি গাড়ি এবং পঞ্চাশ জনের বেশি সদস্য না আনতে। কিন্তু এ দিন অনেক পুজো কমিটিই তা মানেনি। ফলে, অনেক ছোট পুজোরই অনুষ্ঠান কাটছাঁট করতে হয়েছে পুলিশকে।

তবে কার্নিভাল নিয়ে এ দিন বিরোধীরা কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘‘কথায় আছে, মহম্মদ যেতে না পারলে পর্বত আসবে মহম্মদের কাছে। মহালয়া থেকে উদ্বোধন করেও দিদি সব দেবী দর্শন করে উঠতে পারেননি। তাই দেবীদের আনা হয়েছে দিদি-দর্শনে। এতে বিজেপি অক্সিজেন পেল।’’

সিপিএমের সুরে অনুষ্ঠানের সরাসরি বিরোধিতা করেনি বিজেপি। বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলেন, ‘‘কার্নিভাল নিয়ে আপত্তির কিছু নেই। তবে ছুটির দিনে হলে ভাল হত। পুজোর পরে প্রথম কাজের দিনে নিত্যযাত্রীদের হয়রানি পোহাতে হত না।’’ বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘কার্নিভাল ভাল। কিন্তু রাজ্যে কর্মসংস্থান নেই। তাই, মুখ্যমন্ত্রী মহালয়া থেকে উৎসব টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। খেলা-মেলা-উৎসব দিয়ে মানুষকে ভুলিয়ে রাখতে হচ্ছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE