প্রায় সাত কোটি টাকার কোকেন সহ ইউক্রেনের এক মহিলা ধরা পড়লেন কলকাতা বিমানবন্দরে। মঙ্গলবার রাতে তিনি এতিহাদ বিমানসংস্থার উড়ানে আবুধাবি থেকে কলকাতায় নামেন।
জানা গিয়েছে, পার্ক স্ট্রিট এলাকার এক হোটেলে থাকার কথা ছিল নাতালিয়ার। বুধবার সকালে সেই হোটেল থেকেই এক ব্যক্তির কোকেন নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। নারকোটিক কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি)-র পূর্বাঞ্চলের অধিকর্তা দিলীপ শ্রীবাস্তব এ দিন জানান, রাশিয়ান ভাষায় অনর্গল কথা বলে গেলেও নাতালিয়া জানিয়েছেন ইংরাজি তিনি জানেন না। বুধবার এক অনুবাদককে এনে তাঁর বয়ান রেকর্ড করার পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, ইংরেজি না জানলে কলকাতার হোটেলে থেকে স্থানীয় লোককে কী করে তিনি কোকেন সরবরাহ করতেন?
জানা গিয়েছে, নিজের সঙ্গে একটি ট্যাব নিয়ে ঘোরেন নাতালিয়া। নিজে যা বলতে চান তা রাশিয়ান ভাষায় সেই ট্যাবে লিখে দেন। সেই ট্যাব-ই তা ইংরাজিতে অনুবাদ করে দেয়। একই ভাবে কোনও প্রশ্ন থাকলে তা ইংরাজিতে ট্যাব-এ লিখে দিলে ট্যাব-ই তা রাশিয়ান ভাষায় অনুবাদ করে দেয়। মঙ্গলবার রাত থেকে কার্যত এ ভাবেই এনসিবি অফিসারেরা জেরা চালিয়ে গিয়েছেন নাতালিয়াকে।
কলকাতা বিমানবন্দরে আটক করা সাত কোটি টাকার কোকেন।
তিনি যে কোকেন নিয়ে কলকাতায় আসছেন তা জানা গিয়েছিল সোমবার। জানা গিয়েছিল, ব্রাজিলের সাওপাওলো থেকে কোকেন নিয়ে তিনি আবুধাবি ঘুরে কলকাতায় আসবেন। নাম নাতালিয়া আব্রেলেনকো। বয়স ৪৩। তাঁর পাসপোর্ট নম্বর পেয়ে গিয়েছিলেন কলকাতায় (এনসিবি)-র অফিসারেরা। গত সেপ্টেম্বর মাসেও কলকাতা বিমানবন্দরে কোকেন সমেত ধরা পড়েছিলেন আরও এক বিদেশি মহিলা।
মঙ্গলবার রাতে কলকাতায় নামার পরে নাতালিয়াকে আটকাতে বেশি বেগ পেতে হয়নি। তবে, বিদেশে চকোলেটের বাক্সে, চকোলেটের মোড়কে যে ভাবে তিনি কোকেন নিয়ে এসেছিলেন, তা দেখে অবাকই হয়েছেন অফিসারেরা। জানা গিয়েছে, চকোলেটের বাক্সে, ছোট ছোট চকোলেট বোমার সাইজের কোকেন সাজিয়ে নিয়ে এসেছিলেন নাতালিয়া। এরকম প্রায় ৫-টি বাক্সে মোট ৯০টি বোমা সাইজের কোকেন ছিল তাঁর কাছে। বুধবার সকালে তা কলকাতার স্থানীয় এক ব্যক্তির হাতে তুলে দিয়ে সন্ধ্যার উড়ানে তাঁর মুম্বই যাওয়ার কথা ছিল। সেখান থেকে আবুধাবি হয়ে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল ইউক্রেনের রাজধানি কিয়েভে। সেখানেই তাঁর বাড়ি।
প্রাথমিক জেরায় নাতালিয়া জানান, তিনি বিশ্ব-ভ্রমণে বেরিয়েছেন। ব্রাজিলের সাওপাওলো-র এক বন্ধু তাঁকে এত চকোলেট সঙ্গে রাখার জন্য দিয়েছেন। কিন্তু, পরে কোকেন পাচারের কথা স্বীকার করেন। তাঁর কাছ থেকে মোট ১ কিলোগ্রাম ২০০ গ্রাম কোকেন পাওয়া গিয়েছে। এনসিবি সূত্রের খবর, ভারতে এই কোকেনের দাম ৭ কোটি টাকা। কলকাতায় নাতালিয়ার কাছ থেকে যে ব্যক্তির কোকেন নেওয়ার কথা ছিল, তিনি বুধবার সকালে ওই হোটেলে ফোন করে নাতালিয়া এসেছে কি না জানতে চান। সেখান থেকে সেই ব্যক্তির ফোন নম্বর পেয়েছেন এনসিবি অফিসারেরা। ওই ব্যক্তির খোঁজ চলছে।
গত সেপ্টেম্বর মাসে গোভেন্দর সাবিত্রী নামে দক্ষিণ আফ্রিকার এক মহিলা কলকাতায় নামার পরে তাঁর কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছিল ৩ কিলোগ্রাম ৭৫০ গ্রাম কোকেন। সেই কোকেন নাইজেরীয় যুবক অ্যানেকওয়ে চিনওয়েজ অ্যালেক্স-এর হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল সাবিত্রীর। অ্যালেক্স তখন সল্টলেকের একটি গেস্ট হাউসে ছিলেন। কিন্তু, ফাঁদ পেতে অ্যালেক্সকে ধরতে পারেননি এনসিবি অফিসারেরা। অ্যালেক্সকে ধরতে লুক আউট নোটিশ জারি করা হয়েছিল। কিন্তু, আজ পর্যন্ত তাঁর কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy