কুয়াশা যখন। ভোরের ময়দান। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।
দিনে-রাতে মালুম হচ্ছে হিমেল হাওয়া। থার্মোমিটারের পারদও নিম্নমুখী! রাত বাড়লেই শীত-শীত ভাব হচ্ছে। অনেকেই গভীর রাতে ফ্যান বন্ধ করছেন। ভোরে বাইরে বেরোতে গায়ে চাপাচ্ছেন মোটা জামা। দেখা যাচ্ছে কুয়াশাও।
এই পরিস্থিতিতে শীতের আগমনি শুরু হয়েছে জনমানসে। এ বার আলিপুর হাওয়া অফিসও সেই বার্তা দিয়ে দিল। আবহবিদেরা বলছেন, শীত হাজির হওয়ার অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হতে শুরু করেছে। উত্তুরে হাওয়াও বইছে। এই হাওয়ার হাত ধরেই ধাপে ধাপে পারদ নামবে। ধীরে ধীরে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে জাঁকিয়ে বসবে শীত।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথের ব্যাখ্যা, শীত একেবারে হাজির হয় না। নভেম্বর থেকেই বায়ুপ্রবাহের দিক বদলে যায়। অর্থাৎ, বর্ষার সময়ে দক্ষিণা হাওয়া বইতে থাকে। আর এ সময়ে অভিমুখ বদলে হাওয়া উত্তর দিক থেকে বইতে শুরু করে। হিমেল হাওয়ার হাত ধরে ধাপে ধাপে তাপমাত্রা নামতে থাকে। ‘‘এই হিম-হিম পরিস্থিতিটা শীতের আগমনি বার্তা নিয়ে আসে,’’ জানাচ্ছেন গোকুলবাবু। তাঁর পূর্বাভাস, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এখন ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করবে। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকবে ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে।
আবহবিদদের অনেকেই বলছেন, শীত পড়ার ক্ষেত্রে কতগুলো পরিস্থিতি তৈরি হওয়া দরকার। উত্তুরে হাওয়া বয়ে আসার পাশাপাশি আকাশে মেঘ থাকলে চলবে না। মেঘমুক্ত আকাশের ফলে চড়চড়ে রোদ উঠবে। মাটি গরম হবে। আবার সূর্য ডুবলেই মাটির গরম পুরোপুরি বিকিরিত হতে পারবে। তার ফলে রাতের তাপমাত্রা অনেকটা নামবে। ‘‘দিন ও রাতের তাপমাত্রায় ফারাক যত বাড়বে, ততই শীতের অনুভূতি বেশি মালুম হবে,’’ বলছেন এক আবহবিজ্ঞানী।
এই সূত্র ধরেই হাওয়া অফিসের অনেকে বলছেন, ডিসেম্বরের শেষ কিংবা জানুয়ারির শুরুতে যে কড়া ঠান্ডা পড়ে, তার জন্য মেঘমুক্ত আকাশ ও দিন রাতের তাপমাত্রার ফারাক অনেকটা দায়ী। ওই সময়ে কলকাতায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে ২৫-২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাতের তাপমাত্রা নেমে যায় ১০-১১ ডিগ্রিতে। ‘‘এই ১৫-১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ফারাকেই হাড় হিম হয়ে যায় মানুষজনের,’’ মন্তব্য এক আবহবিজ্ঞানীর।
এখনও অবশ্য পুরোপুরি মেঘমুক্ত আকাশ মিলছে না দক্ষিণবঙ্গে। উপকূলবর্তী জেলা-সহ দক্ষিণবঙ্গের অনেক জায়গাতেই মাঝেমাঝে আকাশে মেঘ জমছে। হাওয়া অফিস বলছে, দক্ষিণবঙ্গের উপরে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা রয়েছে। তার ফলেই সাগর থেকে জলীয় বাষ্প ঢুকছে। সেই জোলো হাওয়া ঘনীভূত হয়েই মেঘ তৈরি হচ্ছে। পরিমণ্ডলের পরিস্থিতি খতিয়ে আবহবিদেরা বলছেন, এই অক্ষরেখার প্রভাব আরও দিন দুয়েক থাকবে। নিম্নচাপ অক্ষরেখা কেটে গেলে হিমের হাওয়ার প্রভাব আরও বাড়বে বলে মনে করছেন আবহবিজ্ঞানীরা।
অনেকেই অবশ্য বলছেন, আচমকা হাজির হওয়া নিম্নচাপ কিংবা পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জেরে থমকে যেতে পারে হিমেল হাওয়া। স্বস্তিদায়ক আবহাওয়ার বদলে হাজির হতে পারে গুমোট পরিস্থিতি। যেমনটা দিন কয়েক আগেই হয়েছিল। উত্তর ভারত থেকে ঝাড়খণ্ডে বয়ে আসা ঝঞ্ঝার জেরে মেঘলা আকাশ তৈরি হয়েছিল। বৃষ্টিও হয়েছিল। এ বারও কি তেমনটা হতে পারে?
‘‘আপাতত তেমন কোনও আশঙ্কা নেই,’’ বলছেন গোকুলবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy