সচেতনতা: বিপজ্জনক বাড়ির বিপদ এড়াতে সারা শহরে এমনই বিজ্ঞাপন দিতে চলেছে পুরসভা। —নিজস্ব চিত্র।
পুরনো বাড়ির সুস্বাস্থ্য, নজর রাখুন গৃহস্থ — বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে ফেলার আগে এমনই বিজ্ঞাপন দিয়ে জনমত তৈরিতে নামছে পুর প্রশাসন। আগামী সপ্তাহেই শহরে লাগানো হবে হোর্ডিং, ব্যানার, ফ্লেক্স। বিজ্ঞাপনে বলা হচ্ছে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিপজ্জনক বাড়িতে বাস করবেন না। পুরসভার বক্তব্য, বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙায় পুর আইনে নতুন ধারা আনা হয়েছে। তা প্রয়োগের আগে জনমত গড়তেই এই ব্যবস্থা।
গত বছর সেপ্টেম্বরে উত্তর কলকাতার পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে একটি বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে দু’জনের মৃত্যু হয়। তার পরেই ওই ধরনের বাড়ি ভেঙে স্থায়ী সমাধানের পথ বার করতে পুর প্রশাসনকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শহরের বুকে বিপজ্জনক বাড়ি মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকলেও আগে তা নিয়ে কার্যত কোনও হেলদোল দেখা যেত না পুরসভার তরফে। বরং পুরকর্তারা বলতেন, বাড়ি বিপজ্জনক হলেও মানবিক কারণে বাসিন্দাদের সরানো যেত না। তাই কেবল পুরসভার বিল্ডিং আইনের ৪১১ ধারায় বাড়িটিকে বিপজ্জনক বলে নোটিস ঝোলানো হতো। ফলে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাড়িতে ওই ধরনের নোটিস ঝুলছে আজও। কোনওটি তিন বছর, কোনওটি বা ৮-১০ বছর ধরে ঝুলছে। তেমনই একটি বাড়ি পাথুরিয়াঘাটায় ভেঙে পড়ার পরে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন মমতা। বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার ক্ষমতা দিয়ে বিল্ডিং আইনে নতুন ধারা ৪১২-এ যুক্ত হয়।
তবে গত এপ্রিলে আইন হলেও তা প্রয়োগ নিয়ে গড়িমসি ছিল পুরসভার। কিন্তু কেন?
পুরসভার বিল্ডিং দফতরের এক অফিসার জানান, সংযোজিত ওই আইনের ধারায় বলা হয়েছে, বাড়ির মালিক তা ভেঙে নতুন করে গড়তে রাজি না হলে, কলকাতা পুরসভা টেন্ডারের মাধ্যমে দ্বিতীয় কোনও প্রোমোটার সংস্থাকে ওই কাজের ভার দেবে। এবং বিপজ্জনক বাড়ির জায়গায় নতুন করে বিল্ডিং গড়ার ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ বাড়তি ছাড় মিলবে। অর্থাৎ, বিপজ্জনক বাড়ির মোট এলাকা এক হাজার বর্গফুট হলে দু’হাজার বর্গফুট গড়ার অধিকার দেওয়া হবে। ওই আইন প্রয়োগ করতে পুরসভা একটি স্কিমও তৈরি করে। তাতে বলা হয়, নতুন করে কাজ চলার সময়ে বিপজ্জনক বাড়ির ভাড়াটেদের অন্যত্র বসবাসের ব্যবস্থা করে দিতে হবে নির্মাণকারী সংস্থাকে। আর তা যাতে সুষ্ঠু ভাবে হয়, দেখবে পুরসভা।
কিন্তু স্কিমে তা বলা থাকলেও সম্প্রতি মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, বাড়ি তৈরির সময়ে ভাড়াটেদের থাকার ব্যবস্থা তাঁদের নিজেদেরকেই করতে হবে। তা নিয়ে পুরো প্রক্রিয়া ঘোরালো হয়ে ওঠে। এ দিকে শহর জুড়ে যে ভাবে বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে পড়তে থাকে, তাতে চিন্তা বাড়ে স্থানীয় কাউন্সিলর, মেয়র পারিষদ এবং বিধায়ক তথা মন্ত্রীদেরও। রাজ্যের ক্রেতাসুরক্ষামন্ত্রী সাধন পাণ্ডে মঙ্গলবার বলেন, ‘‘তিন মাস আগে আইন তো হয়েছে। প্রয়োগ করতে এত দেরি কেন, বুঝছি না। দ্রুত তা প্রয়োগ না করলে দুর্ঘটনা তো আরও বাড়তে পারে।’’ এ ব্যাপারে পুর প্রশাসনের তৎপর হওয়া দরকার বলেও জানান তিনি।
পুরসভার এক কর্তা বুধবার জানান, বাড়ি বিপজ্জনক জেনেও অনেক বাসিন্দা সেই সব বাড়িতে রয়েই যাচ্ছেন। তাঁদের সাবধান করতেই বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। বিজ্ঞাপনের মূল কথা হল, নিজেদের বিপদ থেকে বাঁচাতে বিপজ্জনক বাড়ি ছেড়ে দিন। বাড়ি গড়া হলে ফের সব ভাড়াটেকে পুনর্বাসন দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। তবে নির্মাণ চলার সময়ে কোথায় থাকবেন তাঁরা, তা নিয়ে বিজ্ঞাপনে কিছু বলা নেই। পুর অফিসারদের মতে, বিজ্ঞাপন দেওয়া হলেও ধন্দ থেকেই যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy