কলেজ পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ যে নিয়মিত মাদক সেবন করছেন, তার উদাহরণ পাওয়া গিয়েছে কয়েক দিন আগেই। নার্কোটিক কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি) শহর থেকে মাদক চোরাচালানকারীদের গ্রেফতার করার পরে সেই তথ্য উঠে আসে।
শনিবার রাতে শহরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা কাঁকুড়গাছির একটি হুকা বারে হানা দিয়ে রাজ্য আবগারি দফতরের অফিসারেরা দেখেন, সেখানে বেআইনি ভাবে লাইসেন্স ছাড়াই মদ বিক্রি করা হচ্ছে এবং সেই পানশালায় জড়ো হয়েছেন মূলত কলেজ পড়ুয়ারাই। আবগারি দফতরের কলকাতার কালেক্টর সুব্রত বিশ্বাস জানিয়েছেন, রাতে তাঁর দফতরের অফিসারেরা হানা দিয়ে দেখেন, সেখানে গ্রাহকদের গড় বয়স ২১ বছরের কম। অথচ ২১ বছরের কম বয়সীদের মদ সরবরাহ করা আইনত অপরাধ।
শনিবার রাতেই ওই হুকা বারটি সিল করে দিয়েছে আবগারি দফতর। এ ভাবে কোনও হুকা বার সিল করে দেওয়ার ঘটনা শহরে এই প্রথম বলে জানিয়েছেন সুব্রতবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘লাইসেন্স ছাড়াই নিয়মিত হুইস্কি, রাম, বিয়ার বিক্রি হচ্ছিল। এমনকী, মদ বিক্রির পরে রীতিমতো রসিদও দেওয়া হচ্ছিল। ওই পানশালার সামনের সিসিটিভি ফুটেজ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেই ফুটেজেও দেখা গিয়েছে, বেআইনি ওই পানশালার প্রধান গ্রাহকই ছিল ২১ বছরের কমবয়সীরা।’’
জানা গিয়েছে, বহু দিন ধরে ওখানে হুকা বার চলছিল। ওই বারের মালিক বিশাল ছাবারিয়া বছর দেড়েক আগে মদ বিক্রির লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করেন। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ তিনি ছ’মাসের জন্য অস্থায়ী লাইসেন্স পান। সুব্রতবাবু জানান, প্রথম ছ’মাস নিয়ম মেনে পানশালা চালালে তবে পাকা লাইসেন্স দেয় সরকার। কিন্তু প্রথম ছ’মাসের মধ্যেই অভিযোগ উঠে যায় ওই পানশালার বিরুদ্ধে। অভিযোগ, রাত বারোটার পরে নিয়ম ভেঙে মদ বিক্রি করছে তারা। সাধারণত লাইসেন্সপ্রাপ্ত পানশালা রাত বারোটা পর্যন্ত গ্রাহকদের মদ সরবরাহ করতে পারে। তার পরে আরও দু’ঘণ্টা, মানে রাত দু’টো পর্যন্ত মদ সরবরাহের অনুমতি দেয় সরকার। তবে তার জন্য টাকা দিয়ে বিশেষ অনুমতি নিতে হয়। অভিযোগ, এ ক্ষেত্রে কাঁকুড়গাছির ওই পানশালা সেই অনুমতি নেয়নি, টাকাও দেয়নি।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ওই পানশালায় হানা দেন আবগারি অফিসারেরা এবং তার অস্থায়ী লাইসেন্স বাতিল হয়ে যায়। পাকা লাইসেন্স দেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। রাজ্যের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হন পানশালার মালিক। সেই মামলা এখনও চলছে। তবে পানশালার লাইসেন্স না পেয়ে সেটি হুকা বার হিসেবেই চলছিল। কিন্তু তারা লুকিয়েচুরিয়ে মদ বিক্রি করছে বলে সম্প্রতি অভিযোগ আসে আবগারি দফতরের কাছে। সেই অভিযোগ পেয়েই শনিবার রাতে হানা দেয় আবগারি দফতর।
সুব্রতবাবুর কথায়, ‘‘কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক-সহ বেশ কিছু নথিপত্র ও মদের বোতল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। লালটু প্রসাদ ও মুকেশ শাহ নামে ওই বারের দুই কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বারের মালিক বিশাল ছাবারিয়াকে ডেকে পাঠানো হয়েছে।’’ হুকা বার হিসেবে এটি ডিএসটি-ও ফাঁকি দিচ্ছিল বলে প্রমান পাওয়া গিয়েছে এবং তা সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুব্রতবাবু। যে বাড়িতে ওই পানশালাটি চলছিল, সেই বাড়ির মালিক আবগারি দফতরকে জানিয়েছেন, ওই বার মালিকের সঙ্গে তিনি চুক্তি বাতিল করে দেবেন।
ওই হুকা বারের মালিক বিশালকে ফোনে ধরা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি ওই বার ছেড়ে দিয়েছি।’’ কবে ছাড়লেন? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘আপনার সঙ্গে পরে কথা বলব।’’ এই বলে ফোন কেটে দেন তিনি। এর পরে তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy