Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
KOLKATA MEDICAL COLLEGE

১৪ দিন পর জেদ ভাঙল কর্তৃপক্ষের, মেডিক্যালে অনশন ভাঙলেন ছাত্ররাও

কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে সর্বসম্মত ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, নতুন ১১তলা হস্টেলে সিনিয়র ছাত্রদের জন্য দু’টি তলা ছেড়ে দেওয়া হবে। প্রথম বর্ষের ছাত্র এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পড়ুয়াদের জন্যও ওই হস্টেলে দু’টি করে তলা দেওয়া হবে।

তাঁদের দাবি কর্তৃপক্ষ মেনে নেওয়ার পর বিজয় মিছিল মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়াদের।—নিজস্ব চিত্র।

তাঁদের দাবি কর্তৃপক্ষ মেনে নেওয়ার পর বিজয় মিছিল মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়াদের।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৮ ১৩:৪০
Share: Save:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। ছাত্র আন্দোলনের চাপের কাছে ফের পিছু হঠতে হল কর্তৃপক্ষকে। মেডিক্যাল পড়ুয়াদের টানা অনশনের ১৪ দিনের মাথায়, সোমবার, কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিলেন— নতুন হস্টেলে পুরনোদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে। সিদ্ধান্ত বদলের কথা জানতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে গোটা চত্বর। তার পরেই অধ্যক্ষ অশোক ভদ্র নিজের হাতে ফলের রস খাইয়ে দেন অনশনরত পড়ুয়াদের।

সুষ্ঠু হস্টেল বণ্টনের দাবি নিয়ে এ মাসের গোড়া থেকেই আন্দোলনে নেমেছিলেন মেডিক্যালের পড়ুয়ারা। সেই আন্দোলনের অঙ্গ হিসেবেই গত ১৪ দিন ধরে আমরণ অনশনে বসেন পড়ুয়াদের একটা অংশ। কিন্তু, তাঁদের সেই দাবি মানতে রাজি ছিলেন না কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, আন্দোলনের জেরে শেষ পর্যন্ত মতবদল করলেন তাঁরা। এ দিন দুপুরে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অশোক ভদ্র জানান, কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে সর্বসম্মত ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, নতুন ১১তলা হস্টেলে সিনিয়র ছাত্রদের জন্য দু’টি তলা ছেড়ে দেওয়া হবে। প্রথম বর্ষের ছাত্র এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পড়ুয়াদের জন্যও ওই হস্টেলে দু’টি করে তলা দেওয়া হবে। সেই সিদ্ধান্তের কথা ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান। এর পরেই গোটা মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে খুশির হাওয়া দেখা যায়। অনশনরত পড়ুয়ারা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরেন।

শনিবারই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন অশোক ভদ্র। সিদ্ধান্ত বদলের কথা জানিয়ে তিনি এ দিন বলেন, “নয়া সিদ্ধান্তের কথা লিখিত ভাবে স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানো হচ্ছে। নির্দেশ আসার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। আপাতত নতুন ভবনের দু’টি তলায় থাকবেন সিনিয়র ছাত্ররা। আর একটি হস্টেল তৈরি হচ্ছে। সেটি শেষ হয়ে গেলে সিনিয়র ছাত্রদের সেখানে স্থানান্তরিত করা হবে।”

দেখুন ভিডিয়ো:

আরও পড়ুন: ‘মমতাও মহিলা, কষ্টটা বুঝবেন’, প্রার্থনা দেবাশিসের মায়ের

এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই একটি নোটিস জারি করেন অধ্যক্ষ। সেখানে তিনি একই কথা জানান। তার পরেই অনশন আন্দোলন তুলে নেন পড়ুয়ারা। সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রছাত্রীরা সাধারণ সভায় বসেন। সেখানে তাঁদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়। এর পরেই বিজয়োল্লাসে মাতেন পড়ুয়ারা। খেলা হয় আবির।

বিজয়োল্লাসের মধ্যেই বারে বারে স্লোগান ওঠে। সেখানে বিধানসভায় স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রধান তথা রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান নির্মল মাজির বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে। পড়ুয়াদের অভিযোগ, হস্টেল নিয়ে কর্তৃপক্ষের এতদিনকার অনড় মনোভাব এবং ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনকে গুরুত্ব না দেওয়ার পিছনে আসলে নির্মলবাবুরই হাত রয়েছে। নির্মলবাবু এ বিষয়ে বলেন, ‘‘আমি এখন মেডিক্যাল কাউন্সিলের নির্বাচন নিয়ে খুব ব্যস্ত আছি। বিভিন্ন হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছি। আইএমএ-তে যাচ্ছি। আজও আমি কলকাতার বাইরেই আছি। কী হয়েছে, না হয়েছে আমার জানা নেই।’’ কিন্তু তাঁর নামে যে আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করছেন, কলেজ কর্তৃপক্ষের অনড় মনোভাবের পিছনে তিনিই সক্রিয় ছিলেন। নির্মলবাবু এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘এ সবের সঙ্গে আমার কোনও যোগ নেই।’’

গত কয়েক দিন ধরেই মেডিক্যাল কলেজের আন্দোলন নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন অনেকেই। রবিবার আন্দোলনকারীদের পাশে দেখা যায় কলকাতার বিদ্বজ্জনদের একটা অংশকে। সমস্যার মীমাংসায় কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন কবি শঙ্খ ঘোষ। এ দিন বিধানসভায় বিরোধীরা মেডিক্যালের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করে। এর পরেই রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বিষয়টি নিয়ে বিবৃতি দেন। কিন্তু তাঁর বিবৃতিতে অসন্তুষ্ট বিরোধীরা প্রথমে বিধানসভার ওয়েলে নেমে এসে প্রতিবাদ জানান। পরে তাঁরা সভা থেকে ওয়াকআউট করেন। চন্দ্রিমা জানিয়েছিলেন, মেডিক্যাল কলেজে হস্টেল বণ্টন নিয়ে যে আন্দোলন চলছে, তাতে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে না। গোটাটাই সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষের দেখার বিষয়। চন্দ্রিমা বলেছিলেন, ‘‘হস্টেল বণ্টন করার দায়িত্ব কলেজ কর্তৃপক্ষের। এতে সরকারের কোনও হাত নেই। মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার নির্দেশ মতো প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের আলাদা রাখাই নিয়ম। রবিবারই স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এটা পড়ুয়াদের প্রতীকী অনশন আন্দোলন।’’

হস্টেল জট কাটার পর অনশন তুলে ছাত্রদের উল্লাস।—নিজস্ব চিত্র।

এই ‘প্রতীকী অনশন আন্দোলন’ বলার পরেই বিরোধীরা ক্ষেপে ওঠেন। আব্দুল মান্নান, সুজন চক্রবর্তী-সহ সকলেই ওয়েলে নেমে পড়েন। তখনও চন্দ্রিমা বলে চলেছেন, ‘‘ডাক্তারির সিনিয়র পড়ুয়ারা হাসপাতালে রোগী দেখার কাজে যুক্ত থাকেন। কাজেই এই আন্দোলনে স্বাস্থ্য পরিষেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। পড়ুয়াদের অনুরোধ করছি, এই প্রতীকী আন্দোলন তুলে নেওয়া হোক।’’ চন্দ্রিমার বক্তব্যের মাঝেই বিধানসভা ওয়াক আউট করে বেরিয়ে যান বিরোধীরা।

আরও পড়ুন: অস্বাস্থ্যকর হস্টেলেই হবু ডাক্তারদের স্বাস্থ্যের পাঠ

এর পর বামফ্রন্টের একটি প্রতিনিধি দল মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছন। সেই দলে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুও ছিলেন। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত বদলের পর বিমানবাবু বলেন, ‘‘বিষয়টি এত দূর গড়ানোর মতোই নয়। পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে প্রথমেই মিটে যাওয়ার কথা ছিল।’’

যদিও এর মধ্যেই স্নাতকোত্তরের ছাত্রীরা একটা প্রশ্ন তুলেছেন। বিধুমুখী হস্টেলের তিন, চার এবং পাঁচতলায় তাঁদের ১৫০ জন থাকেন। এ দিনের সিদ্ধান্তের পর জানা গিয়েছে পাঁচতলার ঘরগুলি স্নাতক স্তরের পড়ুয়াদের জন্য ছেড়ে দিতে হবে। ওই ছাত্রীদের তরফে সীমন্তী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘স্নাতকোত্তরের আমরা মোট ১৫০ জন ছাত্রী আছি। ওই তলায় ৫০ জন ছাত্রী থাকেন। তাঁরা কোথায় যাবেন?’’ কলেজ কর্তৃপক্ষ যদিও এ বিষয়ে কিছু জানাননি।

তবে এত দিনের আন্দোলন শেষে তাঁদের দাবি মেনে নেওয়ায় খুশি পড়ুয়ারাও। পড়ুয়াদের তরফে সায়ন্তন মুখোটি বলেন, ‘‘আমাদের দাবি কর্তৃপক্ষ মেনে নিয়েছেন। আমরা খুশি। ডাক্তারি পড়ুয়াদের আন্দোলনের এটা একটা বড় জয়।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE