ফুলকুমারী মারিকের (ইনসেটে) সন্তানকে নিয়ে প্রতিবেশীরা। শুক্রবার, মুরারিপুকুর রোডে। নিজস্ব চিত্র
দুপুরে বাড়ির কাজ ও রান্নার পাট চুকিয়ে একটু বিশ্রাম নিতে নিজের ঘরে গিয়েছিলেন বছর বাইশের গৃহবধূ। কিছু ক্ষণ পরে দেখা যায়, মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা উঠছে তাঁর। অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন ফুলকুমারী মারিক নামে ওই তরুণীকে। বৃহস্পতিবার মানিকতলার বাসিন্দা ওই গৃহবধূর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে তাঁর পরিজনদের অভিযোগ, পণের দাবিতে খুন করা হয়েছে ফুলকুমারীকে।
মানিকতলা থানায় দায়ের করা ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ শুক্রবার গ্রেফতার করেছে ফুলকুমারীর স্বামী দীপক মারিককে। পুলিশ সূত্রের খবর, জেরার দীপক স্বীকারও করেছে যে, ঘটনার দিন সকালে স্ত্রীয়ের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল তার। তবে পণের জন্য অত্যাচারের কোনও প্রমাণ এখনও পর্যন্ত মেলেনি। ওই গৃহবধূর দেহ ইতিমধ্যেই ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মানিকতলা থানা এলাকার ৪এ বাসন্তী কলোনির বাসিন্দা, পেশায় অটোচালক বাপি হালদারের ছোট মেয়ে ফুলকুমারী। ২০১৫ সালে তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয় ৪১এ/৩৯ মুরারিপুকুর রোডের বাসিন্দা দীপকের। সে সময় দীপক একটি গেঞ্জি কারখানায় কাজ করত। কিন্তু সেই কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আপাতত ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ করত সে। ফুলকুমারী ও দীপকের বছর দেড়েকের একটি পুত্র সন্তানও রয়েছে।
ওই গৃহবধূর পরিবারের অভিযোগ, বিয়ের সময়ে এক লক্ষ টাকা বরপণ চেয়েছিল দীপকের পরিবার। কিন্তু তা দিতে না পারায় স্বামী নিয়মিত অত্যাচার করত। অভিযোগ, দীপকের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথা ফুলকুমারী জেনে গিয়েছিলেন। তার জন্যেও স্ত্রীকে নির্যাতন করত দীপক। এমনকি, ফুলকুমারীর মোবাইল ফোনও কেড়ে নিয়ে ভেঙে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর বাবা বাপিবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘বৃহস্পতিবার সকালে ওর শাশুড়ির মোবাইলে ফোন করে ওর সঙ্গে কথা বলি। পরে দেড়টা নাগাদ ওর মামিশাশুড়ি ফোন করে আরজি কর হাসপাতালে যেতে বলেন। বলেন, মেয়েকে ভর্তি করানো হয়েছে!’’
আরজি করে পৌঁছে বাপুবাবুরা জানতে পারেন, মেয়ে আর বেঁচে নেই। ফুলকুমারীর শ্বশুরবাড়ির লোকজন সেখানে তাঁদের জানান যে, ওই গৃহবধূ বিষ খেয়েছেন। কিন্তু মেয়ে বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন, এ কথা মানতে রাজি নন বাপিবাবু। যদিও পণের দাবিতে অত্যাচারের অভিযোগ অস্বীকার করেছে দীপকের পরিবার। মৃতার মামাশ্বশুরের দাবি, শ্বশুরবাড়িতে কোনও দিনই মারধর করা হয়নি ওই ফুলকুমারীকে। এমনকি, বিয়েতে বরপণ নেওয়ার অভিযোগও মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy