ভিড়াক্কার: সরস্বতী পুজো ও ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে তরুণ-তরুণীদের ভিড় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে। বুধবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
গঙ্গার পাড়ে সারি সারি বসার চেয়ারগুলির একটিও ফাঁকা নেই। খোঁজাখুঁজির পরেও জায়গা না পেয়ে ভিড় ঠেলে বান্ধবীর হাত ধরে প্রিন্সেপ ঘাট থেকে বেরিয়ে আসছিলেন যুবক। কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘‘যা অবস্থা, জায়গা পাব বলে মনে হল না! ভ্যালেন্টাইন্স ডে এবং সরস্বতী পুজো একই দিনে হওয়ায় দু’দিন বেড়ানোর সুযোগটা মাটি হয়েছে। গঙ্গার পাড়ে চেয়ারের অপেক্ষায় থাকলে দিনটাও মাটি হবে। এটা না হয় অন্য দিনের জন্য তোলা থাক।’’
সরস্বতী পুজো এবং ভ্যালেন্টাইন্স ডে একই দিনে পড়ায় ঘুরতে যাওয়ার একটা দিন নষ্ট হওয়ার এই আক্ষেপ নিয়েই সকাল থেকে উৎসবে মাতল শহর। প্রিয়জনকে নিয়ে দিনভর চক্কর কেটে বিকেলে বাড়ি ফেরার পথ ধরার সময়ে কেউ কেউ বলেই ফেললেন, ‘‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে-টা কি এ বছরে অন্য দিনে করা যেত না?’’
যদিও সকাল থেকে মেঘ-রোদ্দুরের খামখেয়ালির মধ্যে বুধবারটা ছিল আর পাঁচটা দিনের থেকে আলাদা। একে সরস্বতী পুজো, তার উপরে ভ্যালেন্টাইন্স ডে— ‘জোড়া দিবস’-এর সুবাদে শহরের পথঘাট থেকে শুরু করে প্রিন্সেপ ঘাট, ময়দান চত্বর ছিল কমবয়সিদের দখলে। বেলা যত বেড়েছে, ততই ভিড় বেড়েছে ওই সব এলাকায়। সকালের দিকে ভিড় ছিল স্কুল-কলেজের সামনেও। বেলা বাড়তেই সেই ভিড় চলে আসে ভিক্টোরিয়া, প্রিন্সেপ ঘাট, বাগবাজারের দিকে। তবে পুলিশের গাড়ি রাখতে না দেওয়ার শাসানিতে ময়দানে ভিড় ছিল অন্যান্য জায়গার থেকে তুলনামূলক ভাবে কম। দুপুরে সব থেকে বেশি ভিড় ছিল প্রিন্সেপ ঘাটে। গঙ্গাপাড়ের রাস্তায় ভিড় ঠেলে হাঁটতে রীতিমতো বেগ পেতে হয়েছে। বন্ধুর সঙ্গে সেখানে এসেছিলেন বেসরকারি সংস্থার কর্মী ঐশী দে। সরস্বতী পুজো এবং ভ্যালেন্টাইন্স ডে একই দিনে হওয়ার আক্ষেপ ঝরে পড়ল তরুণীর গলাতেও। তাঁর কথায়, ‘‘কাজের চাপে এমনিতেই তো বেরোনো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ দিক-ও দিক করে যা-ও দুটো দিন হত, এ বছর তা-ও হবে না।’’ তবে উল্টো সুরও শোনা গেল। বান্ধবীর হাত ধরে ঘুরতে ঘুরতেই অনেককে বলতে শোনা গেল, ‘‘সরস্বতী পুজোয় বেরোনো গেলেও ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে ধরা পড়ার ভয় থাকে। এ বছর তা-ও এক ঢিলে দুই পাখি মারা গিয়েছে।’’
কমবয়সিদের ভিড়ে ভিক্টোরিয়া প্রাঙ্গণ ছিল লোকারণ্য। চলেছে দেদার নিজস্বী তোলা। বন্ধুর হাত ধরে ভিক্টোরিয়ার লাইনে দাঁড়িয়ে নিজস্বী তুলতে ব্যস্ত এক তরুণী বললেন, ‘‘কলেজের নামে বেরিয়েছি। তুই এই ছবি এখানে সেখানে পোস্ট করে দশ জনকে জানাস না। বাবার কানে গেলে কিন্তু রক্ষা থাকবে না!’’
যদিও উৎসবের নামে পথের বিধি ভাঙার ছবির বদল হয়নি এ বছরও। বরং পুলিশের সামনেই সকাল থেকে দেদার বিধি ভাঙার ছবি দেখা গিয়েছে। বিনা হেলমেটে বাইক চালাতে যেমন দেখা গিয়েছে, তেমনই ছিল বেপরোয়া গাড়ির দাপট। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘রাস্তায় পুলিশ ছিল। বিশেষ নজরদারিও চালানো হয়। ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy