নিজস্ব চিত্র
সাদামাটা একটি কার্ড। তা দেখালেই খুলে যাচ্ছে যাবতীয় ট্র্যাফিক আইনকে বুড়ো আঙুল দেখানোর রাস্তা।
বিভিন্ন রঙের কার্ড। দেখতে অনেকটা ভিজিটিং কার্ডের মতো। উপরে একটি গাড়ির ছবি ও কার্ডের মেয়াদের তারিখ। এ ছাড়াও বড়বড় করে লেখা কয়েকটি ইংরেজি শব্দের আদ্যক্ষর। এগুলি আসলে সাঙ্কেতিক শব্দ। আর এই ‘ভিভিআইপি’ কার্ড দেখিয়েই চলছে দেদার ট্র্যাফিক আইন ভাঙা। শাস্তির বিন্দুমাত্র ভয় ছাড়াই।
‘দাদা’দের সঙ্গে মাসিক ব্যবস্থাপনায় হাওড়া থেকে কলকাতা এবং শহরতলির কয়েকটি জায়গায় চালু হয়েছে এই কার্ড। গাড়িতে অতিরিক্ত পণ্য বহন বা কোনও ট্র্যাফিক আইন ভাঙার মতো অপরাধ করলেও পুলিশকে ওই কার্ড দেখালেই কেল্লাফতে। হবে না কোনও ফাইন। চার জনের বেশি যাত্রী তুললেও আইনের কোনও ধারায় অভিযুক্ত
করা হবে না।
কী ভাবে ঘটছে এই অবৈধ কাজ?
ট্যাক্সিচালক, ট্যাক্সিচালকদের সংগঠন এবং পুলিশ সূত্রে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য থেকে যা জানা গিয়েছে, শনিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত হাওড়ার মঙ্গলাহাটে মালপত্র ও লোকজন নিয়ে কলকাতা ও শহরতলি থেকে ট্যাক্সি যাওয়া-আসা করে দিনে ৫০০টিরও বেশি। বিশেষ করে মেটিয়াবুরুজ এলাকায় ঘরে ঘরে নানা রকম পোশাক তৈরি হওয়ায় সেখান থেকে বেশি মালপত্র হাটে নিয়ে আসা হয়। হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলাহাটকে কেন্দ্র করে ওই চার দিনে হাওড়া ময়দান এলাকায় আনাগোনা করা ট্যাক্সির সংখ্যা প্রায় ২০০০ ছাড়িয়ে যায়। এত ট্যাক্সি ও হাটের ব্যবসায় যে লক্ষ লক্ষ টাকা লেনদেন হয় তাকে কেন্দ্র করেই হাওড়ায় প্রথম সূত্রপাত হয় এই কার্ড চক্রের। এর পরে চক্রটি ক্রমশ ডালপালা মেলেছে মেটিয়াবুরুজ-সহ হাওড়া ও কলকাতার কয়েকটি থানা এলাকায়।
ট্যাক্সিচালকদের একাংশের বক্তব্য, হাট থেকে বেশি পরিমাণ মাল গাড়িতে তুললে বা চার জনের জায়গায় পাঁচ জন যাত্রী নিয়ে গেলে তাঁদের লাভের গুড় পিঁপড়েতে খেয়ে যেত। তোলা দিতে হত রাস্তার পুলিশকে। ওই ট্যাক্সিচালকেরা জানাচ্ছেন, শেষে পুলিশ ও শাসকদলের স্থানীয় নেতৃত্বের মধ্যস্থতায় এই সমস্যার সমাধান হয় মাসোহারার ব্যবস্থা করে। সেই থেকেই চালু হয় ওই ‘ভিভিআইপি’ কার্ড ব্যবস্থা। সূত্রের খবর, ওই কার্ড পেতে আগে দিতে হত মাসে ৩০০ টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০ টাকায়।
কিন্তু কী ভাবে মেলে ওই কার্ড? বিভিন্ন থানা এলাকার পুলিশ কী দেখে ছেড়ে দেয় ওই কার্ড ব্যবহারকারীদের?
অনিয়ম: এই কার্ড (ডান দিকে) দেখিয়েই অবাধে চলে অতিরিক্ত পণ্য বা যাত্রী বহন। নিজস্ব চিত্র
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্যাক্সিচালক বলেন, ‘‘এই কার্ড সাধারণত বিলি করা হয় কোনও গুমটি চায়ের দোকান বা খাবারের দোকান থেকে। যাতে সহজে কেউ বিষয়টি বুঝতে না পারেন। হাওড়ায় এই কার্ড পাওয়া যায় বঙ্গবাসীর কাছে পেট্রোল পাম্পের পাশে একটি চায়ের দোকান থেকে।’’ ওই ট্যাক্সিচালক জানান, কার্ডের পিছনে দু’টি নাম ও নম্বর থাকে। এক জন লোকাল এজেন্ট আর এক জন গোটা চক্রের মাথা, যাঁর নামের পাশে ডিজি লেখা থাকে। ট্র্যাফিক আইনভঙ্গকারী ওই নাম ও নম্বরে ফোন করার পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া কর্তব্যরত পুলিশকর্মীর আর কোনও উপায় থাকে না। কারণ ওই নাম ও নম্বর দেওয়া থাকে সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ কর্তাদের কাছেও।
এই বেআইনি কাজ শুরু হওয়ায় বিরক্ত শাসকদলের ট্যাক্সি সংগঠনের নেতৃত্ব। এ ব্যাপারে প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শম্ভুনাথ দে বলেন, ‘‘এমন অভিযোগ আমাদের কাছেও এসেছে। কিছু পুলিশ এ সব কাজ করছে। আমরা পুলিশের ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে আগেও এ নিয়ে বলেছি, আবার বলব। এমন অনৈতিক কাজ অবিলম্বে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।’’
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে হাওড়ার ডিসি (ট্র্যাফিক) জাফর আজমল কিদোয়াই বলেন, ‘‘এমন ঘটনা আমি শুনিনি। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy