Advertisement
১৯ মে ২০২৪

শিশুর মৃত্যুতেও বদল নেই এলাকার লরি-রাজ

যদিও এই মৃত্যুর পরেও হুঁশ ফেরেনি পুলিশ-প্রশাসনের। বুধবারও পুলিশের নাকের ডগায় ক্যানাল ইস্ট রোডের ওই অংশে খালের ধারেই সার দিয়ে দাঁড়িয়েছিল লরি।

অবহেলা: ক্যানাল ইস্ট রোডে খালের পাশে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে লরি। ছবি দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

অবহেলা: ক্যানাল ইস্ট রোডে খালের পাশে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে লরি। ছবি দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৮ ০২:১৫
Share: Save:

পাউরুটির উপরে দুধের সর। সেই ‘মালাই-রুটি’ খাবে বলেই বাবার কাছ থেকে টাকা চাইতে গিয়েছিল ক্যানাল ইস্ট রোডের বাসিন্দা বছর ছয়েকের ফারজানা খাতুন। বাবার দেওয়া পাঁচ টাকা নিয়ে ফেরার পথেই মঙ্গলবার লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় তার। প্রিয় মালাই-রুটি আর খাওয়া হয়নি ফারজানার। যদিও এই মৃত্যুর পরেও হুঁশ ফেরেনি পুলিশ-প্রশাসনের। বুধবারও পুলিশের নাকের ডগায় ক্যানাল ইস্ট রোডের ওই অংশে খালের ধারেই সার দিয়ে দাঁড়িয়েছিল লরি।

ক্যানাল ইস্ট রোডের ওই এলাকা থেকে নারকেলডাঙা থানা ঢিল ছোড়া দূরত্বে। খালের উপরে নারকেলডাঙা ব্রিজের কাছেই রাতদিন চলে ট্র্যাফিক পুলিশের নজরদারি। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, মালবাহী লরি দেখলেই দাঁড় করিয়ে তল্লাশির তুফান তোলেন পুলিশকর্মীরা। তবে ওই পর্যন্তই। অভিযোগ, খুব প্রয়োজন না পড়লে ক্যানাল ইস্ট রোডের কসাই বস্তির ধারের কাছে ঘেঁষে না পুলিশ। ছ’মাসে, ন’মাসে এক বার দেখা যায় স্থানীয় পুর-প্রতিনিধিকে। ক্ষোভ উগরে এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘আমরা কী ভাবে বেঁচে, কেউ দেখতে আসেন না। একটা বাচ্চা মরে গেল তবু কারও কিছু যায় আসে না।’’

৩৫/১/এ, ক্যানাল ইস্ট রোডে বাবা-মা আর ছয় ভাইবোনের সঙ্গে থাকত ফারজানা। বাবা শেখ নাসির গা়ড়ি সাফাইয়ের কাজ করেন। মা রাইলা বিবি প্লাস্টিক কুড়িয়ে সংসার চালান। ওই এলাকারই একটি প্রাথমিক স্কুলে সদ্য ভর্তি হয়েছিল শিশুটি। চোখের জল মুছতে মুছতে রাইলা বলেন, ‘‘সোমবার রাতে তেমন কিছু রান্না করতে পারিনি। ভেবেছিলাম, ইদে ভাল খাওয়া হবে। মঙ্গলবার সকালে বাবার থেকে টাকা নিয়ে খেয়ে আসতে বলেছিলাম বাচ্চাদের।’’ ওই খেতে গিয়েই সব শেষ! নাসির বলেন, ‘‘পাঁচ টাকা দিলাম ফারজানাকে। বলল, দিদিকে নিয়ে রুটি-মালাই খেতে যাবে। কিছু ক্ষণ পরে শুনি ওকে লরিতে চাপা দিয়েছে।’’ স্থানীয়েরাই ফারজানাকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এই জায়গাতেই ফারজানাকে পিষে দিয়েছিল লরি। ছবি দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

লালবাজার সূত্রের খবর, ওই সময়ে কসাই বস্তি সংলগ্ন এলাকায় একাধিক লরি দাঁড়িয়েছিল। একটি লরি পিছনে সরতে গেলে ফারজানাকে পিষে দেয়। ওই এলাকায় যে লরিগুলি দাঁড় করানো থাকে সেগুলির কী ব্যবস্থা হল? উত্তর মেলেনি লালবাজারের তরফে। বুধবারও পুলিশের সদর দফতর এ নিয়ে চুপ। নারকেলডাঙা থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক অবশ্য বললেন, ‘‘এলাকাটা অন্যরকম। সব বিষয়েই ঢুকে পড়া যায় না। রাতেই ওখানকার সব গাড়ি সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।’’

যদিও বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, খালের পাড়েই দু’টি লেনে পরপর দাঁড়িয়ে ছ’চাকা, দশ চাকার লরি। তার পিছনে ঢাকা পড়ে ফারজানাদের ঘর। সামনেই খোলা ভ্যাট। এমন পরিস্থিতি কেন? এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি। তবে ওই এলাকা বদলানো খুব কঠিন। অনেক ব্যাপার রয়েছে ওখানে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Child Death Narkeldanga
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE