উদ্ধার হওয়া অস্ত্র। নিজস্ব চিত্র
যেন একটি ‘বিজনেস চেন’! ঠিক সেই কায়দাতেই কলকাতা এবং শহরতলিতে বেআইনি অস্ত্রের ব্যবসা ফেঁদেছিল পুলিশের হাতে ধৃত অস্ত্র কারবারিরা। ধৃতেরা জেরায় জানিয়েছে, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছিল ওই ব্যবসা। তিলজলার পাশাপাশি শহরতলির রবীন্দ্রনগরেও ধৃতেরা অস্ত্র তৈরি করত বলে পুলিশ দাবি করেছে। গত বছর ওই এলাকায় সিআইডি এবং জেলা পুলিশের দল হানা দিলে সেখান থেকে তারা পালিয়ে যায় বলে জেরার মুখে দাবি করেছে ধৃতেরা। পরে নতুন করে আবার অস্ত্র কারখানা তৈরি করেছিল তারা।
কী ভাবে চলত অস্ত্রের ওই ব্যবসা?
পুলিশ জানায়, তিলজলার চন্দ্রনাথ রায় রোডের ওই কারখানায় অস্ত্র তৈরির পরে তা পাঠিয়ে দেওয়া হত ধৃত ইমতিয়াজ আহমেদের কাছে। সেখানে ওই সব অস্ত্রে ‘ফিনিশিং টাচ’ দেওয়া হত। পরে মুঙ্গেরের এক বড় অস্ত্র কারবারির নির্দেশে শহরের বিভিন্ন দুষ্কৃতীদের কাছে তা বিক্রি করত অন্য একদল দুষ্কৃতী। ধৃতদের জেরা করার পরে পুলিশের দাবি, অস্ত্র তৈরি বা বিক্রি করা কিংবা সরবরাহ করার সঙ্গে যুক্তেরা কেউ কাউকে চিনত না। মুঙ্গের থেকে আসা নির্দেশ মতো মাল তৈরির পরে তা হতবদল হয়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছে যেত বলে পুলিশ দাবি করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার ভোরে তিলজলার ওই কারখানায় হানা দিয়ে মুঙ্গেরের বাসিন্দা চার দুষ্কৃতী মহম্মদ সোনু, সৌরভ কুমার, মহম্মদ রাজু এবং সরফরাজ আলমকে গ্রেফতার করে পশ্চিম বন্দর থানার পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় আটটি ৭.৬৫ এমএম সেমি-অটোমেটিক পিস্তল, ৫০ রাউন্ড কার্তুজ, ১৬টি ম্যাগাজিন এবং প্রচুর যন্ত্রাংশ। এর আগে পুলিশ ওই কারবারের সঙ্গে যুক্ত ইমতিয়াজ আহমেদ ও আফরোজ আহমেদ নামে দু’জনকে গ্রেফতার করে। তারা রবীন্দ্রনগরে ঘাঁটি গেড়ে অস্ত্রে ‘ফিনিশিং টাচ’ দেওয়ার কাজ করত।
তদন্তকারীদের দাবি, গত এক বছরের বেশি সময় ধরেই ওই কারবার চলছিল। ধৃত ইমতিয়াজ দাবি করেছে, পঞ্চাশটিরও বেশি অস্ত্র গত কয়েক মাসে সে তৈরি করেছে। যা পরে মুঙ্গেরের ওই ব্যবসায়ীর নির্দেশে নিয়ে যায় কয়েক জন। পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃতেরা ভুয়ো পরিচয় দিয়েই তিলজলা এবং রবীন্দ্রনগরে বাড়ি ভাড়া করেছিল। দু’টি ক্ষেত্রেই তাদের বাড়ি ভাড়া পেতে সাহায্য করেছিল এলাকার কয়েক জন যুবক। তদন্তকারীদের দাবি, ওই যুবকদের খোঁজ চলছে। সেই সঙ্গে মুঙ্গেরের ওই ব্যবসায়ীর খোঁজেও তল্লাশি শুরু হয়েছে।
এর পাশাপাশি পুলিশ জানিয়েছে, গত বছর পুজোর সময়ে খিদিরপুরের একটি বাসের মধ্যে থেকে বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করেছিল পুলিশ। সেই সব অস্ত্রও ওই চক্র পাচার করেছিল বলে তদন্তকারীদের অনুমান। এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য শনিবার পশ্চিম বন্দর থানায় যান ওয়াটগঞ্জ থানার দুই তদন্তকারী অফিসার। সেখানে ধৃত ইমতিয়াজ এবং সরফরাজকে জেরা করেন তাঁরা। তদন্তকারীদের দাবি, যে ভাবে প্লাস্টিকে মুড়ে ওই অস্ত্র বাসে করে পাচার করা হচ্ছিল, তার সঙ্গে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মিল রয়েছে। তাই ধৃতদের ওয়াটগঞ্জ থানার পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নিয়ে ওই ঘটনার তদন্ত নতুন করে শুরু করবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy