যন্ত্রণা: হাঁটু সমান জল ঠেলে জীবিকার সন্ধানে। বুধবার, উত্তর কলকাতার বিদ্যাসাগর স্ট্রিটে। ছবি: রণজিৎ নন্দী
দুপুরে টানা দু’ঘণ্টা বৃষ্টি। আর তাতেই ফের ভাসল শহর। গত সপ্তাহে নিম্নচাপের বৃষ্টিতে শহরের একাধিক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, নিকাশির ত্রুটিই কি বার বার শহর জলমগ্ন হওয়ার কারণ?
কলকাতা পুরসভার নিকাশি দফতর মেনে নিচ্ছে যে, ব্রিটিশ আমলে তৈরি নিকাশি নালা থেকে পলি এবং বর্জ্য তোলার কাজে ঘাটতি রয়েছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যথাযথ ভাবে খাল সংস্কার না-হওয়ার সমস্যা। পুরসভার নিকাশি বিভাগের প্রাক্তন ডিজি (নগর পরিকল্পনা) দীপঙ্কর সিংহের মতে, ‘‘শুধু বর্ষাকালে নিকাশি সমস্যার সমাধানে জোর দিয়ে কোনও লাভ নেই। বছরভর ধারাবাহিক ভাবে এই কাজ চালিয়ে যেতে হবে। তবেই জমা জলের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলবে শহরবাসীর।’’ দীপঙ্করবাবু জানাচ্ছেন, শহরের ক্ষেত্রে বৃষ্টির জল মূলত খালপথে প্রবাহিত হয়। কিন্তু সংস্কার যথাযথ ভাবে না হওয়ায় খালগুলি নাব্যতা হারিয়েছে। ভাল ভাবে খাল সংস্কার না করলে আগামী দিনে বিপদ বাড়বে বলেই তাঁর মত।
সাম্প্রতিক যা পরিস্থিতি, তাতে আসন্ন বিপদ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন শহরবাসী। কিছু দিন আগে নিম্নচাপের টানা বৃষ্টিতে যেমন জলবন্দি ছিল শহর, অনেকটা তেমনই পরিণতি হল বুধবারের কয়েক ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতেই। তবে এ দিন দক্ষিণের তুলনায় উত্তরের একাধিক রাস্তা দীর্ঘক্ষণ জলমগ্ন ছিল বলে জানিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। চিত্তরঞ্জন
অ্যাভিনিউ, আমহার্স্ট স্ট্রিট, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট, গণেশ টকিজ়, মহাত্মা গাঁধী রোড, কলুটোলা স্ট্রিট ছাড়াও বাইপাসের কিছু অংশ, মানিকতলা আন্ডারপাস, উল্টোডাঙার একাধিক গলিপথে জল জমে যায়। দুপুরে বহু ক্ষণ কলেজ স্ট্রিট, সুকিয়া স্ট্রিটে হাঁটু সমান জল ছিল। দীর্ঘক্ষণ ডুবে ছিল ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, ক্যামাক স্ট্রিট, ইলিয়ট রোড, নর্দার্ন পার্ক, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের মোড়। জমা জলের কারণে রাস্তায় যানজট ছিল ভালই। শহরের ভিতরে একাধিক অলিগলি চলে যায় জলের নীচে। শহরবাসীর একাংশের অভিযোগ, সম্প্রতি এমন এমন জায়গায় জল জমতে দেখা যাচ্ছে, যেখানে আগে কখনও জল দাঁড়াত না।
বুধবার সকাল থেকে দুপুর তিনটে পর্যন্ত সব থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে উল্টোডাঙায় (১১১ মিলিমিটার)। পামারবাজারে বৃষ্টি হয়েছে ১০৮ মিলিমিটার। বীরপাড়ায় ৮৩ মিলিমিটার, বেলগাছিয়ায় ৮৭ মিলিমিটার। মানিকতলা, ঠনঠনিয়া এবং বালিগঞ্জে ৯৯ মিলিমিটার করে বৃষ্টি হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে।
চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, কলেজ স্ট্রিট, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট-সহ বিভিন্ন বড় রাস্তায় ভারী বৃষ্টি হলে আগেও জল জমত। তবে উত্তরের বাসিন্দাদের দাবি, গত দু’বছর ধরে অল্প বৃষ্টিতেই এই সব রাস্তা দীর্ঘক্ষণ জলমগ্ন হয়ে থাকছে। কলেজ স্ট্রিটের প্রবীণ বাসিন্দা নব মণ্ডলের আবার অভিযোগ, ‘‘আগে এই এলাকায় সারা বছর ম্যানহোল খুলে পলি তোলার কাজ হত। এখন কিন্তু তেমন কিছু করতে দেখি না।’’
পুর নিকাশি দফতরের আধিকারিকদের একাংশের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘মানুষের অসচেতনতাও এই জল জমার জন্য কিছুটা দায়ী। জল মূলত গালিপিট দিয়ে বার হয়ে যায়। মানুষের যত্রতত্র ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক এবং আবর্জনায় সেগুলি আটকে থাকায় জল স্বাভাবিক গতিতে বেরোতে পারছে না।’’ অসচেতনতার সেই নমুনা দেখা গিয়েছিল মাস দুয়েক আগে খিদিরপুরে ম্যানহোল খুলে। সেখান থেকে বালির বস্তা উদ্ধার হয়েছিল! দিন কয়েক আগে আবার পুরসভার ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের ম্যানহোল খুলে নিকাশিকর্মীরা পেয়েছিলেন বালির বস্তা, লেপ, তোশক!
সংশ্লিষ্ট দফতরের এক আধিকারিকের ক্ষোভ, ‘‘নাগরিকদের একাংশের উদাসীনতার জন্যই জমা জল বেরোতে বাধা পাচ্ছে।’’ শহরে জমা জলের প্রসঙ্গে অবশ্য পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তারক সিংহের দাবি মিলছে না পুর আধিকারিকদের একাংশের সঙ্গে। তারকবাবু বলেন, ‘‘চলতি বছরে দফায় দফায় ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। জল জমলেও কিন্তু দ্রুত তা নেমে যাচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy