শিয়ালদহ স্টেশন থেকে এ বার মেট্রোয় চেপেই যাওয়া যাবে সল্টেলেকের সেক্টর ফাইভ।
শিয়ালদহ থেকে এ বার মেট্রোয় চেপেই যাওয়া যাবে সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে। ২১ মিনিটেই পৌঁছনো যাবে শহরের তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্রে। নিত্যযাত্রীদের একাংশের দাবি, আগে অটো বা বাসে করে পৌঁছতে যে সময় লাগত, মেট্রোয় চেপে গেলে তার থেকে অন্তত আধ ঘণ্টা সময় বাঁচবে। কিন্তু বাড়বে খরচ। আর সে কারণেই মেট্রোয় যেতে অনীহা প্রকাশ করছেন যাত্রীদের অন্য একটা অংশ। তাঁদের আরও দাবি, শিয়ালদহ-সেক্টর ফাইভ মেট্রো পরিষেবা চালুর ফলে তেমন কোনও লাভ হবে না। সোমবার মেট্রো উদ্বোধনের দিন এ নিয়েই দ্বিধাবিভক্ত নিত্যযাত্রীরা। অনেকে বিভ্রান্তও।
এত দিন সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে যাওয়ার প্রধান পরিবহণ ব্যবস্থা বলতে ছিল, বাস, অটো বা অ্যাপ নির্ভর ক্যাব। মূলত বিধাননগর স্টেশন থেকে সল্টলেকের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার জন্য ভাঙা ভাঙা রুটে চলে অটো। বিধাননগর থেকে সেক্টর ফাইভ যেতে অটোভাড়া সাধারণত ২৫ টাকা। কখনও কখনও অটোচালকেরা পরিস্থিতি বুঝে বেশি ভাড়াও নেন বলে অভিযোগ। সোমবার অনীক কর্মকার নামের এক যাত্রী বলেন, ‘‘আমার বাড়ি ব্যারাকপুরে। বিধাননগরে নেমে সেক্টর ফাইভের অফিসে যাই। ভাড়া ২৫ টাকা। কিন্তু লকডাউনের পর থেকে রুটে অটোর সংখ্যা কমে গিয়েছে। ফেরার পথে তো অনেক দিন অটো পাই না। শেয়ার গাড়িতে ফিরি। তাতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। সব মিলিয়ে অফিস যাওয়ার জন্য অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এ বার থেকে ভাবছি বিধাননগরের বদলে শিয়ালদহে নেমে মেট্রো ধরে অফিস যাব।’’
তবে অনীকের সঙ্গে এক মত নন বেলঘরিয়ার দীপঙ্কর ঘোষ। কলেজ মোড়েই তাঁর অফিস। তাঁর কথায়, ‘‘মেট্রোয় কোনও লাভ হবে না। যেখানে মেট্রো স্টেশন হয়েছে, সেখান থেকে অফিস অনেকটাই দূরে। রিকশাও মিলবে না। আর মিললেও যে টাকা বাঁচাতে পারতাম সেটা খরচ হয়ে যাবে। তাই আমি মেট্রোয় যাওয়ার কথা ভাবছি না।’’
বারুইপুরের নবনীতা চক্রবর্তীও মেট্রোয় না যাওয়ার কথাই বলছেন। তিনি বলেন, ‘‘শিয়ালদহ থেকে বাসে চেপে সেক্টর ফাইভের কলেজ মোড়ে পৌঁছতে সময় লাগে ৫০ মিনিট। বাসের ভাড়া ১৫ টাকা। সেখানে এখন মেট্রোয় চাপতে গেলে ২০ টাকার টিকিট কিনতে হবে। মেট্রো থেকে নামতে হবে উইপ্রো মোড়। সেখান থেকে কলেজ মোড়ে পৌঁছতে উঠতে হবে রিকশায়। খরচ করতে হবে ২০ টাকা। বাসে উঠলে খরচ পড়বে অন্তত ১০ টাকা। আমি ট্রেনে শিয়ালদহ যাই মাঝে মাঝে। সেখান থেকে বাস ধরি। অথবা বারুইপুর থেকে টানা বাসে চলে যাই। মেট্রোয় আমার জন্য খুব একটা সুবিধা হবে না।’’
হুগলির শ্যাওড়াফুলি থেকে সেক্টের ফাইভের অফিসে আসেন নীলাঞ্জনা দাস। তিনি যদিও মেট্রোর এই পরিষেবা চালু হওয়ায় খুশি। তাঁর কথায়, ‘‘আসলে এখন হয়তো তেমন একটা সুবিধা হবে না। কিন্তু হাওড়ার সঙ্গে শিয়ালদহ জুড়ে গেলে আমার মতো প্রচুর মানুষের সুবিধা হবে। তখন তো হাওড়ায় নেমেই মেট্রো ধরে সোজা অফিস পৌঁছতে পারব।’’
তবে রানাঘাটের বাসিন্দা শৌভিক সেন জানাচ্ছেন, তিনি যাওয়ার সময় বিধাননগর নেমে অটোতেই অফিস যাবেন। ফেরার পথে মেট্রো ধরবেন। তাঁর যুক্তি, ‘‘যাওয়ার সময় যদি শিয়ালদহ যাই, ট্রেন অনেক সময় কারশেডে দাঁড় করিয়ে রাখে। দেরি হয়ে যেতে পারে অফিসে ঢুকতে। কিন্তু ফেরার পথে মেট্রো ধরলে শিয়ালদহ থেকে বসার জায়গা নিয়ে ট্রেনে বাড়ি ফিরতে পারব। খরচাও কম। সময়ও বাঁচবে।’’
মেট্রো কর্তৃপক্ষও যাত্রীদের এই ভাবনার কথা আঁচ করতে পারছেন। আপাতত রবিবার পরিষেবা পাওয়া যাবে না ওই রুটে। ভবিষ্যতে যাত্রীসংখ্যা বাড়লে তাঁরা রবিবার মেট্রো চালানোর কথা ভাবছেন। কাজের দিনেও যাত্রীসংখ্যা দেখেই রেকের সংখ্যাও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘যাত্রীসংখ্যার উপরেই অনেকটা নির্ভর করছে।’’ তবে হাওড়া অবধি মেট্রো পরিষেবা চালু হলে যে যাত্রীসংখ্যা বাড়বেই সে ব্যাপারেও অনেকটা নিশ্চিত তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy