Advertisement
২২ মে ২০২৪
water logging

Water Logging: জমা জলের ফাঁদে বাস পড়লেই খরচ লক্ষাধিক

স্বপন ঘোষ নামে ওই ব্যক্তিই বুধবার পাতিপুকুর আন্ডারপাসের জমা জলে আটকে যাওয়া কেবি-১৬ রুটের বাসের মালিক।

মারো টান: অবশেষে বৃহস্পতিবার ক্রেন এনে সরানো হল পাতিপুকুর আন্ডারপাসের জমা জলে আটকে থাকা বাসটি। ছবি:বিশ্বনাথ বণিক

মারো টান: অবশেষে বৃহস্পতিবার ক্রেন এনে সরানো হল পাতিপুকুর আন্ডারপাসের জমা জলে আটকে থাকা বাসটি। ছবি:বিশ্বনাথ বণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২১ ০৬:১৩
Share: Save:

কোমর সমান জলে দাঁড়িয়ে আশপাশের পুলিশকর্মীদের উদ্‌ভ্রান্তের মতো জিজ্ঞাসা করে চলেছেন এক ব্যক্তি— ‘‘দাদা ক্রেন কখন আসবে? এ বেলায় তুলবেন তো?” অবশেষে বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ এসে পৌঁছনো ক্রেন যখন ডুবে থাকা বাসকে টানতে শুরু করেছে, তত ক্ষণে পরনের শার্ট খুলে এসেছে ওই ব্যক্তির। ক্রেনচালককে আকুতির সুরে বললেন, ‘‘দাদা, দেখবেন যাতে না ভাঙে। আর চাপ নিতে পারছি না।’’

স্বপন ঘোষ নামে ওই ব্যক্তিই বুধবার পাতিপুকুর আন্ডারপাসের জমা জলে আটকে যাওয়া কেবি-১৬ রুটের বাসের মালিক। বৃহস্পতিবার বাসটি বার করা গেলেও ফেরত পাননি তিনি। পুলিশি মামলা-মোকদ্দমার পরে কবে সেটি পাওয়া যাবে, তা-ও তাঁর জানা নেই। তাঁর কথায়, ‘‘এখন বাস চালানো মানে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর অবস্থা। তেলের এত দাম যে, খরচ উঠছে না। তার মধ্যে জলের জন্য যা হল, তাতে এখন কত টাকা লাগবে কে জানে!’’

দিন কয়েক আগে ৪৭বি রুটের এক বাসমালিক প্রবীর মাইতির একই রকম অভিজ্ঞতা হয়েছিল ওই আন্ডারপাসেই। সে দিন কোনও ক্রমে বাস থেকে বেরিয়ে বেঁচেছিলেন চালক ও কন্ডাক্টর। ওই রুটের বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা হল বাবুয়া সাউ নামে ওই কন্ডাক্টরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘ওই আন্ডারপাসের নীচ দিয়ে যাতায়াত করতে বুক কাঁপে। গাড়িতে হু হু করে জল ঢোকার দৃশ্য চোখ বুঝলেই দেখতে পাই।’’ একই অভিজ্ঞতা শোনালেন মালিক প্রবীর। তাঁর কথায়, ‘‘বাস ধূলাগড়ে পাঠাতে হয়েছে। ইঞ্জিন পুরো নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশে জল ঢুকে গিয়েছে। দেড় লক্ষ টাকার বেশি লাগতে পারে বলা হয়েছে। বিমা করানো আছে। তবু কতটা পাওয়া যাবে জানি না।’’

শহরের যান-যন্ত্রণা গত কয়েক দিনে আরও বেড়েছে একের পর এক গাড়ি জমা জলে আটকে যাওয়ায়। পরিস্থিতি এমন যে গাড়িতে জল ওঠার ভয়ে বাড়ি থেকে অনেক দূরের উঁচু জায়গায় গাড়ি রেখে আসছেন মালিক। সুমন ঘোষ নামে এমনই এক ভুক্তভোগীর দাবি, ‘‘জলে ইঞ্জিন বন্ধ হওয়া তো ছেড়েই দিন, জলে কিছু দূর চললেই গাড়ির ‘সার্ভিসিং কস্ট’ ১৫০০-২০০০ টাকা বেড়ে যায়।’’

একটি গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থার মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, জলের কারণে যে কোনও গাড়ির এ, বি এবং সি —তিনটি স্তরে ক্ষতি হতে পারে। গাড়ির বাম্পার ছুঁই ছুঁই জলে ক্ষতি হয় ‘এ’ পর্যায়ের। সেই মেরামতির খরচ কম। গাড়ির ইঞ্জিন ডুবে ক্ষতি হলে সেটি ‘বি’ পর্যায়ভুক্ত। গাড়িটি সম্পূর্ণ ডুবে গেলে ক্ষতি ‘সি’ পর্যায়ের ও তার খরচ সব থেকে বেশি। ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘ইঞ্জিন বিগড়োলে খরচ কম করে ৭০-৮০ হাজার। বড় গাড়িতে এই খরচ প্রচুর। সব ক্ষেত্রে বিমা সংস্থা সেই টাকাও দেয় না।’’

‘ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস অ্যান্ড মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বসু বলছেন, ‘‘বাসের ক্ষেত্রে এমন জমা জলের জন্য হওয়া সমস্যা মেটাতে খরচ বহু গুণ। পাতিপুকুর আন্ডারপাসে যে বাসগুলি আটকায় সেগুলির দেড় থেকে দু’লক্ষ টাকা খরচ হয়। একটি বাসের এক বছরের বিমার খরচ অন্তত ৬০ হাজার টাকা। বহু বাসমালিক এখন সেই টাকা দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। মালিক বিমা করাতে পারছেন না বলে হাজার হাজার বাস দাঁড়িয়ে থাকছে। তার মধ্যে এ বারের বিধি-নিষেধে ৪৫ দিন তো গাড়ি বসেই থাকল।’’ এর পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘সরকারকে এ ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার জন্য বলেছি। কোনও উত্তর পাচ্ছি না। এ ভাবে চললে জলবন্দি বাস জলেই পড়ে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bus water logging
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE