রক্তাক্ত: টাকি বয়েজ় স্কুলের সামনে বোমাবাজির পরে আহতের পায়ের ছাপ। রবিবার, শিয়ালদহে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
স্কুলবাড়ির একতলায় পরপর চারটি বুথ। তারই তিন নম্বর বুথের ভিতরে ব্যাপক জটলা। তত দূর পৌঁছে বুথে ঢুকেও ভোট দিতে না পেরে অনেকে তখন চিৎকার জুড়েছেন। অভিযোগ, তাঁদের বলে দেওয়া হচ্ছে, ‘‘অন্য ঘরে দেখুন। এই ঘরে আপনাদের ভোট নেই।’’ এর মধ্যেই দুই ব্যক্তিকে দেখা গেল, ইভিএমের ঘেরাটোপে ঢুকে কিছু একটা করছেন।
ওই ঘেরাটোপে কেন দু’জন?— প্রশ্ন শুনে প্রিসাইডিং অফিসার বললেন, ‘‘কেউ তো কোনও অভিযোগ করেননি! আমি কী করে বলব?’’ বুথের গেটে দাঁড়ানো এক পুলিশকর্মী গোটাটাই প্রত্যক্ষ করছিলেন। তিনিও বললেন, ‘‘আমাদের ভিতরে ঢোকার অনুমতিই নেই। আমিই বা কী করব?’’
রবিবেলায় ভোটের শহরে উত্তর কলকাতার টাকি বয়েজ় স্কুল ঘিরে দেখা গেল এমনই দৃশ্য। কলকাতা পুরসভার ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের এই বুথেই সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ আবার বোমা পড়ার অভিযোগ ওঠে। জখম হন তিন জন। ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা গেল, স্কুলের কাছেই এ জে সি বসু রোডের উপরে পরপর দু’টি দাগ। চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে সেই দাগ পর্যবেক্ষণ করছেন ডিসি (ইএসডি) প্রিয়ব্রত রায়। মুহূর্তে ভেসে এল চিৎকার। এক যুবককে পাঁজাকোলা করে কয়েক জন তখন ছুটতে শুরু করেছেন। আহত যুবকের বাঁ পায়ের পাতার খানিকটা অংশ উড়ে মাংস বেরিয়ে এসেছে, রক্ত ঝরছে। এ জে সি বসু রোডেই দ্রুত ট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে যাত্রীকে নামিয়ে আহত ব্যক্তিকে তুলে দেওয়া হল। তাঁকে পাঠানো হল নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। দীপু দাস নামের আহত ওই ব্যক্তি জানান, তিনি অ্যাপ-ক্যাব চালক। কিছু ক্ষণ আগেই গাড়ি দাঁড় করিয়ে পান খেতে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে এই বিস্ফোরণ। একই ভাবে আহত হন অর্পণ নন্দী এবং অমিত দত্ত নামে আরও দু’জন। তাঁদেরও একই হাসপাতালে পাঠানো হয়।
অভিযোগ মেলে শিয়ালদহের খন্না হাইস্কুলের কাছেও দু’টি বুথের বাইরে দু’টি বোমা পড়েছে। তবে হতাহতের খবর নেই। এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, দূর থেকে কয়েক জন দু’টি বোমা ছুড়ে রেললাইনের দিকে চলে যায়। পুলিশের দাবি, বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে তার নাম-পরিচয় জানানো হয়নি।
উত্তর কলকাতা জুড়ে বুথে বুথে এ দিন যে দৃশ্য দেখা গিয়েছে, তাতে নানা মহল থেকে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাত নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী ভুজেশ ঝায়ের সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতির ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভুজেশের অবশ্য দাবি, ‘‘এজেন্টদের বুথে বসতে দিচ্ছিল না। প্রার্থীকেও বার করে দেওয়া হচ্ছিল। প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলাম।’’ বেলায় বড়তলা থানার সামনে বাম, বিজেপি এবং কংগ্রেস প্রার্থী ও কর্মীরা ধর্নায় বসেন। বেলেঘাটায় বাম এজেন্টকে মেরে মুখ ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগও ওঠে।
এ দিন বিকেলে বুথ দখলের অভিযোগ পেয়েই ফের যাওয়া হয়েছিল টাকি বয়েজ় স্কুলে। কোনও মতে ঢুকে দেখা যায়, ভিতরে যখন ইভিএমের ঘেরাটোপে একাধিক লোক ভোট দিচ্ছেন, বাইরে তখন দলবল নিয়ে বসে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী তথা বেলেঘাটার বিধায়ক পরেশ পাল। অন্য ওয়ার্ডে কেন? ভিতরে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ উঠছে? পরেশের উত্তর, ‘‘ভাল ভোট হচ্ছে শুনে দেখতে এলাম।’’ এর কিছু পরেই এলাকা ছাড়েন পরেশ।
এর পরেই বাহিনী নিয়ে এলাকায় ঢুকে ভিড় ফাঁকা করাতে দেখা যায় পুলিশকর্মীদের। ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে যেখানে, সেখানে কোনও প্রার্থী দলবল নিয়ে বসেন কী ভাবে? ডিসি (ইএসডি) প্রিয়ব্রত বলেন, ‘‘সব কিছুরই রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে। গাফিলতি হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy