প্রতিশ্রুতি, তা পূরণ না হওয়া, দায় এড়াতে চেনা চাপান-উতোর। তারই ফাঁকে সদর্পে বহাল অটো-রাজ।
২০১১ সালে এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে অটো-শাসনে ভুরি ভুরি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তৈরি হয়েছে দু’টি কমিটি। তবে সেটুকুই। এ শহরে এখনও রোখা যায়নি অটোর দাদাগিরি। পরিবহণ কর্তারা বলছেন, এর জন্য দায়ী শাসক দলের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব। আর শাসক দলের নেতাদের দাবি, তাঁরা অন্যায়কে প্রশ্রয় দিচ্ছেন না। প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে, তারা বাধা দেবেন না।
বাম আমলে চালু হওয়ার পরে প্রথমে দেশের আর পাঁচটা রাজ্যের মতো এখানেও ট্যাক্সির মতো মিটারে চলার কথা ছিল অটোর। কিন্তু কলকাতায় মিটারের বদলে অটো চালু হয় রুটের ভিত্তিতে। রুট ভিত্তিক ইউনিয়নও গড়ে ওঠে। স্বভাবতই বাম আমলে ওই সব ইউনিয়নই ছিল সিটুর দখলে। এখন রাজ্যে পালাবদলের পরে তার সিংহভাগেরই দখল নিয়েছে শাসক দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি। পরিবহণ দফতর শুধু রুট ঠিক করে দেয় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে। কাটা রুট থেকে ভাড়া— অটোর আর সব কিছুই ঠিক করে ইউনিয়ন।
রাজ্যে পালাবদলের পরে এই ব্যবস্থা ভাঙতে পরিবহণ দফতরের তদানীন্তন যুগ্মসচিব আশিস ঠাকুরের নেতৃত্বে একটি কমিটি গড়েন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। অটোকে নিয়ন্ত্রণে আনাই ছিল ওই কমিটির লক্ষ্য। তিন মাসের মধ্যেই ওই কমিটি রিপোর্ট জমা দেয়। তাতে বলা হয়েছিল, কলকাতার অটোকে কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করা হোক। যার বাইরে কোনও অটোই যেতে পারবে না। এ ছাড়া, দেশের অন্য শহরের মতো ধীরে ধীরে কলকাতার অটোকেও আনা হোক মিটারের আওতায়। তা হলে, অটোর দাদাগিরি অনেকটাই কমবে বলে দাবি করেছিল ওই কমিটি। এমনকী, অটো ভাড়া নিয়ন্ত্রণেও নির্দিষ্ট সুপারিশ করেছিল তারা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওই রিপোর্ট দিনের আলো দেখেনি।
গত বছর পরিবহণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কলকাতা পুলিশের বিশেষ কমিশনার সৌমেন মিত্রকে নিয়ে ফের একটি কমিটি তৈরি করা হয়। ওই কমিটির সুপারিশ ছিল, প্রত্যেক অটোচালককে নেভি-ব্লু রঙের জামা-প্যান্ট পরতে হবে। অটোচালকের জামার পকেটে তাঁর নাম এবং লাইসেন্স নম্বর লেখা থাকবে। প্রতিটি অটোয় লাগানো হবে ‘হাই সিকিওরিটি নম্বর প্লেট’। ফলে যে কোনও রকম ঘটনায় সংশ্লিষ্ট অটোচালককে চিহ্নিত করা সহজ হবে। এই কাজ শেষ করার সময়সীমা ধার্য করা হয়েছিল গত বছরের ৩০ জুন। তার পরেও এক বছর কেটে গিয়েছে। সিটের পিছনে হেল্পলাইন নম্বর ছাড়া কোনও নির্দেশই কার্যকর হয়নি।
কেন নির্দেশ কার্যকর করা যায়নি? রাজ্য পরিবহণ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, শাসক দলের বাধাই প্রধান অন্তরায়। রাজ্য পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘বাম আমলের মতো এ আমলেও অটো রুটগুলির ইউনিয়নের ৯০ ভাগই শাসক দলের দখলে। এ সব নিয়ম কার্যকর করতে গেলে ভোটবাক্সে তার প্রভাব পড়তে পারে বুঝে নেতারাই বাধা দিচ্ছেন। যার জেরে কমিটির সুপারিশ থাকলেও তা কার্যকর করা যাচ্ছে না।’’ ওই কর্তার দাবি, ‘‘এখন আমাদের মন্ত্রী মদন মিত্রও জেলে। উনি থাকলে তা-ও কিছুটা শাসন করা যেত। এখন পুরো ব্যাপারটাই অদৃষ্টের হাতে ছেড়ে দিয়ে বসে থাকা ছাড়া কোনও উপায় নেই।’’
প্রশাসনের এই অভিযোগ অবশ্য মানছেন না শাসক দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র নেতা মেঘনাথ পোদ্দার। তাঁর কথায়, ‘‘বারবার সংগঠনের তরফে জানিয়ে দিয়েছি, কোনও বেআইনি কাজ, যাত্রী হেনস্থা বরদাস্ত করা হবে না। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিলে আমরা তাতে বাধাও দেব না।’’ তবে মেঘনাথবাবু যতই দাবি করুন না কেন, ঘনিষ্ঠমহলে শাসক দলের নেতারাই মানছেন, চাইলেও অটোর উপরে রাজনৈতিক প্রভাব বন্ধ করার উপায় কার্যত নেই। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘অটো এখন কলকাতা শহরের লাইফলাইন। শহরের ষুবকদের একটি বড় অংশ অটো চালান। তাঁদের খেপিয়ে তুললে ভোটব্যাঙ্কে তার ছাপ পড়বে বুঝেই কোনও শাসক দলই এ নিয়ে কড়া হতে চায় না। সিপিএম-ও চায়নি, আমরাও চাই না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy