Advertisement
১৭ জুন ২০২৪
Kolkata Book fair

Kolkata book fair: দু’বছর বাদে নতুন বইয়ের গন্ধে আত্মহারা

আলেক্সেই ইদামকিন বললেন, “রাশিয়াকে ভুল বুঝবেন না। হামলাবাজ নই, আমরাও আত্মরক্ষারই চেষ্টা করছি।’’ ইটালির স্টলের দেওয়াল জুড়ে উপল সেনগুপ্তের আঁকা কমিক স্ট্রিপে কলকাতার ছোট্ট মেয়ে পুঁচকির ইটালি বেড়ানোর গল্প। মনে মনে গ্যালিলিয়ো, মার্কোপোলো থেকে পাওলো রোসির সঙ্গে তার ঝটপট ভাব হয়ে যায়।

বইমেলায় রাশিয়ার স্টলে আঁকা শেখাচ্ছেন রুশ চিত্রশিল্পী। মঙ্গলবার। ছবি: সুমন বল্লভ

বইমেলায় রাশিয়ার স্টলে আঁকা শেখাচ্ছেন রুশ চিত্রশিল্পী। মঙ্গলবার। ছবি: সুমন বল্লভ

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২২ ০৫:২৮
Share: Save:

—তুই কোথায়! আমি ইটালি।

— আমি তো রাশিয়ার পিছনে।

— সে কী রে! রাশিয়ার পিছনে তো দমকলের গাড়ি।

—ওই হল, দমকলের পিছনে।

মঙ্গলবার বিকেলে মোটামুটি এমনই সংলাপ উড়ে এল বইমেলার ধুলোয়। সত্যি বলতে, সেই ধুলোর বহর ইদানীংকালে নামমাত্র। তবু সেই ময়দান-যুগ থেকে বইমেলার প্রতীক বলতে ধুলোর কথাই মনে পড়ে বাঙালির। অগ্নিস্নানে ধরা শুচি হওয়ার মরসুম পড়তে এখনও খানিকটা দেরি। তবে দু’বছর ধরে বইমেলার পথ চেয়ে থাকা কলকাতা বা মফস্সল চাতকের মতো বইমেলার ধুলোয় স্নাত হওয়ারই দিন গুনছিল। কিন্তু পাকা রাস্তা ও মাঠের মিশেলে মেলার চলার পথে অগুনতি পদাতিকের দাপাদাপিতেও এখন বাতাস ধূলিকণায় তত ভারী হয় না। উদ্যোক্তাদের তরফে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের দুই কর্তা ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং সুধাংশুশেখর দে বলছিলেন, “সল্টলেকের এই মাঠটা পাকাপাকি ভাবে বইমেলা প্রাঙ্গণ ঘোষিত হওয়ার পরে আমরা পরিবেশের দিকে আরও নজর দিতে পারব। গিল্ডের অফিস, দু’-একটি প্রেক্ষাগৃহ বা দমকল কেন্দ্রের জন্য স্থায়ী কাঠামোও তৈরি করা হতে পারে।’’

দীর্ঘ দু’বছর বাদে কোভিড-হানায় বেশ কয়েক বার নির্দিষ্ট তারিখ পিছোনর পরে বইমেলার প্রথম দিনের বিক্রিতেও এক ধরনের চাতকের আকুতি দেখছেন বেশির ভাগ প্রকাশক। জনৈক প্রকাশক মারুফ হোসেনের দাবি, “হয়তো দু’বছর বাদে একসঙ্গে এত বই দেখার বাড়তি আবেগ এটা। কিংবা লকডাউনের নিঃসঙ্গতায় বইয়ের বন্ধুতা আলাদা ভাবে লোকে টের পেয়েছে। বিক্রির হার শতকরা ৩০ ভাগ বেশি মনে হচ্ছে। উদ্বোধনের দিনে যাঁদের স্টল রেডি ছিল, তাঁরাও বিশেষ সুফল টের পেয়েছেন।’’ গিল্ডকর্তাদের আশা, সকাল দেখেই বাকি দিনটার মেজাজ আঁচ করা যায়, কথাটা ফলে গেলে গত বইমেলার চেয়ে দেড় গুণ বেশি বিক্রি হবে এ বারের মেলায়।

বইমেলার মানচিত্রে গোটা তল্লাটের দিকে চোখ রেখে স্মৃতিকাতরতায় আচ্ছন্ন হতেই হবে। মাঠ জুড়ে দিলীপকুমার,
লতা মঙ্গেশকর, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় থেকে অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, হাসান আজিজুল হক, আনিসুজ্জামান, শঙ্খ ঘোষদের নামে সরণি। তবে এই রাস্তাগুলিতে উপযুক্ত দিকচিহ্ন বসানো নেই। ম্যাপের বাইরে রাস্তার নামগুলি চেনা শক্ত। লকডাউনের আর্থিক সঙ্কটের ফলেই এই ত্রুটি বলে মানছেন উদ্যোক্তারা। বিধান শিশু উদ্যান নিয়ে গত বছর প্রয়াত শঙ্খ ঘোষের কিশোর-কাহিনি ‘বন্দনার বাগান’-এর আনুষ্ঠানিক প্রকাশও দেখল বইমেলার প্রথম দিনটি। বিধান শিশু উদ্যানে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা থেকেই এই বই তিনি লিখেছিলেন।

অতীতের সংযোগ-সেতু এই বইমেলাই কলকাতার দূরের জানলাও। রাশিয়ার স্টলে হাওড়ার মেয়ে বর্ণালী বন্দ্যোপাধ্যায় রুশ প্যানকেক বা ব্লিনির আপ্যায়নে ব্যস্ত। শীত শেষের এই রাশিয়া নাকি বসন্তের আবাহনে প্যানকেক বা ব্লিনির উৎসবে মাতে। আপনভোলা চিত্রশিল্পী কনস্তানচিন পালিকোভ আঁকা শেখাচ্ছেন। স্টলে তাঁর আঁকা গান্ধী এবং শিবঠাকুরের ছবির ছড়াছড়ি। যুদ্ধ প্রসঙ্গে অবশ্য থমথমে গুমোট। কলকাতার রুশ কনসাল জেনারেল আলেক্সেই ইদামকিন বললেন, “রাশিয়াকে ভুল বুঝবেন না। হামলাবাজ নই, আমরাও আত্মরক্ষারই চেষ্টা করছি।’’ ইটালির স্টলের দেওয়াল জুড়ে উপল সেনগুপ্তের আঁকা কমিক স্ট্রিপে কলকাতার ছোট্ট মেয়ে পুঁচকির ইটালি বেড়ানোর গল্প। মনে মনে গ্যালিলিয়ো, মার্কোপোলো থেকে পাওলো রোসির সঙ্গে তার ঝটপট ভাব হয়ে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Book fair
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE