জনসমাগম: ইফতারের খাবার চেখে দেখার ভিড় জ়াকারিয়া স্ট্রিটে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
শহরের ঝকঝকে মলেও ইফতারের রকমারি আয়োজন। পার্ক সার্কাসের একটি শপিং মলের চারতলার ফুড কোর্টে এ বারই প্রথম চালু করা হয়েছে ইফতারের থালি।
রমজান মাসে সারা দিন উপবাস বা রোজা রাখার পরে ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষজন সূর্যাস্তের পরে যে খাবার খান, তাকেই বলে ইফতার। এত দিন নাখোদা মসজিদ সংলগ্ন জ়াকারিয়া স্ট্রিট, কলুটোলা, নিউ মার্কেট থেকে শুরু করে পার্ক সার্কাস, রাজাবাজার, মেটিয়াবুরুজের বিভিন্ন রাস্তা ইফতারের বিশেষ খাবারের গন্ধে ম-ম করত। এ বার শপিং মলেও ইফতারের আয়োজন। চারতলার রেস্তরাঁয় বসে ইফতার সারার জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত আসন। ম্যানেজার রহমত হোসেন বলেন, ‘‘এক সঙ্গে ৪০০ জন মিলে ইফতার করতে পারবেন।’’ খেজুর, নানা রকমের ফলের সম্ভার, অঙ্কুরিত ছোলা, হরেক রকম পকোড়া, স্যালাডের আয়োজন থাকছে। থাকবে শীতল সরবতের স্নিগ্ধতাও।
রাজপথে নানা রকম খাবারের পসরায় এখনও যে কোনও শহরের সঙ্গেই পাল্লা দিতে পারে কলকাতা। সন্দেশ, রসগোল্লা, রোল, কাটলেটেই এই খাবারের শেষ নয়। ইফতার উপলক্ষে রকমারি স্বাদ-সম্ভারও জাতধর্মের বেড়া ডিঙিয়ে সর্বস্তরের মানুষের কাছে সমান আদরের হয়ে উঠেছে। রমজানে সন্ধ্যার জ়াকারিয়া স্ট্রিট বা খিদিরপুর এক কথায় হয়ে ওঠে এক ‘খুদে বাংলা’ বা ‘মিনি ভারতভূমি’। রোজাদারদের প্রভাতী খাদ্য দুধে ভিজিয়ে চাখার লাচ্চা, সিমুই বা সাধারণ খাদ্যরসিকদের প্রিয় ফিরনি, ফালুদা সব পাবেন ওই তল্লাটে।
কয়েক বছর আগেও হালিম কাকে বলে তা জানত না গ্রামবাংলার সাধারণ মুসলিম পরিবার। নানা ধরনের ডালের মিশেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাংস ফুটিয়ে যে থকথকে ‘সুপ’ তৈরি হয়, তার জন্যও এখন বছরভর রমজানের অপেক্ষায় থাকে গোটা কলকাতা। এই সুপই হল হালিম। আগে স্রেফ শহরের মুসলিম অধ্যুষিত বা কিছু পাঁচমিশেলি মহল্লায় হালিমের দেখা মিলত। এখন হাতিবাগান-নাগেরবাজার-অজয়নগরের মতো অ-মুসলিম প্রধান এলাকাতেও হালিমের রমরমা। শহরের বহু মোগলাই রেস্তরাঁর সামনে একটি প্রকাণ্ড হাঁড়ি এখন রমজান মাসের চেনা দৃশ্য! বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের একটি রেস্তরাঁ কর্তৃপক্ষের দাবি, রোজ প্রায় ৭০০ প্লেট হালিম বিক্রি হয়।
তবে ইফতারের ভোজেও মাছ ছাড়া বহু বাঙালি মুসলিমের চলে না। জ়াকারিয়া স্ট্রিট এ মরসুমে শহরকে উপহার দিচ্ছে তাদের বিশেষ পদ ‘মাহি আকবরি’। মানিকতলা বাজারের সুবিশাল কাতলা পেটি সর্ষের তেলে ভেজে নানা কিসিমের মশলায় মেখে পেশ করা হয় ওই তল্লাটে। মাছের দোসর আবার তন্দুরি মুরগির আদলে ‘চিকেন চাঙ্গিসি’। ভোরবেলা মুসলিম জনতা সেহরির খাবার খেয়ে সারা দিনের ‘প্রাণশক্তি’ সঞ্চয় করে নেন। তত ক্ষণ পর্যন্ত কার্যত গোটা রাতই খোলা থাকে নাখোদা মসজিদ লাগোয়া জ়াকারিয়া স্ট্রিটের রকমারি খাদ্য-বিপণি। খিদিরপুর, মেটিয়াবুরুজ, পার্ক সার্কাস, টিপু সুলতান মসজিদের গলি, রিপন স্ট্রিটের কয়েকটি এলাকাও থাকে
এমনই সরগরম।
নানা কিসিমের কাবাবের স্বাদে লখনউ-হায়দরাবাদের সঙ্গে রীতিমতো লড়তে পারে জ়াকারিয়া স্ট্রিট। এ ছাড়া, সংলগ্ন ফিয়ার্স লেন, কলুটোলা স্ট্রিট, লাল মসজিদের কাছাকাছি অঞ্চলেও ঝেঁটিয়ে রমজানি খাবার চাখতে আসে গোটা কলকাতা। সাবেক খাবারে কিছু বদলও এসেছে বইকি। চিংড়ি মাছ ভাজাও এখানে পাবেন। বাঁধা গতের ফিরনি ছাড়া চকলেট ফিরনি, স্ট্রবেরি ফিরনিরও আজকাল দেখা মিলছে। মোটামুটি বিকেল থেকেই ছড়িয়ে পড়ে স্বাদগন্ধের সুরভি।
স্বাদে বাজিমাত করেই বড়দিনের পার্ক স্ট্রিট, দুর্গাপুজোর বাগবাজার-গড়িয়াহাটের মতো রমজানের জ়াকারিয়া স্ট্রিটও দ্রুত জায়গা করে নিচ্ছে কলকাতার দর্শনীয়
জায়গার তালিকায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy