অস্বাস্থ্যকর: ধুলোয় ঢাকা এই রাস্তা দিয়েই চলে নিত্য যাতায়াত। কাশীপুরের খগেন চ্যাটার্জি রোডে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
শহরের রাস্তার মোট যে দৈর্ঘ্য, তাতে বর্তমান পরিকাঠামোয় সর্বত্র ধুলো-দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এমনটাই জানাচ্ছে কলকাতা পুর প্রশাসনের একটি অংশ। তাই পরিকল্পনা করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এলাকার ধুলো-দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে কলকাতা পুরসভা। এ জন্য নির্দিষ্ট রূপরেখাও তৈরি করা হচ্ছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের রাস্তার মোট দৈর্ঘ্য ৪৬৩৬ কিলোমিটার। যার মধ্যে শুধু প্রধান রাস্তারই দৈর্ঘ্য ১৮৫০ কিলোমিটার। অথচ ধুলো-দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য পুরসভার হাতে এই মুহূর্তে মাত্র ২১টি জলের গাড়ি (ওয়াটার স্প্রিঙ্কলার) রয়েছে। নিছক অঙ্কের হিসেবই বলছে, ওই সংখ্যক গাড়ি দিয়ে অত দৈর্ঘ্যের রাস্তায় জল দেওয়া যে সম্ভব না। এমনকি, প্রতিটি গাড়ি যদি দু’টি করে ট্রিপ দেয়, সে ক্ষেত্রেও কতটা ফলপ্রসূ ভাবে ধুলো-দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে বলে মনে করছেন পুরকর্তাদের অনেকেই।
শহরের যে সব এলাকা ধুলো-দূষণের নিরিখে উপরের সারিতে রয়েছে, সেখানে আগে জল দিয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে পুরসভা। সেই জন্য রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্যের
পাশাপাশি একাধিক রিপোর্টের তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তারা। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘এক দিনে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব না। কারণ, সেই আর্থিক ক্ষমতা বা পরিকাঠামো আমাদের নেই। তাই যেখানে যেখানে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা (পিএম ১০) এবং অতিসূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম ২.৫) পরিমাণ বেশি, সেখানে আগে দূষণ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা রয়েছে।’’
জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মতো শহরে দূষণের উৎস সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সংগ্রহে ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটকে (নিরি) নিয়োগ করেছিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। গত বছর নিরি প্রাথমিক রিপোর্টও জমা দেয়। ওই রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক যান, নির্মাণকাজ-সহ একাধিক কারণে শ্যামবাজার মোড়ে ভাসমান ধূলিকণার সর্বোচ্চ মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ৬৩২.৫ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত ছুঁয়েছে। তার পরেই রয়েছে চেতলা (৩৮৪), মৌলালি (৩৭৩)-সহ একাধিক এলাকা। আবার গ্রীষ্ম থেকে শীতে দূষণের পরিমাণ কোথাও ৪৩২ শতাংশ, কোথাও ২৮০ শতাংশ, কোথাও আবার ১৭৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
ফলে ধুলো-দূষণ রোধের জন্য যে মানচিত্র তৈরি করা হচ্ছে, সেখানে এই সমস্ত তথ্যকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। শহরের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে গত নভেম্বরেই একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করেছিল পুরসভা। তার পাশাপাশি দূষণ নিয়ন্ত্রণে জরুরি ভিত্তিতে কী কী করণীয়, তার জন্য গত মাসেই পুরসভা আরও একটি অন্তর্বর্তী কমিটি তৈরি করেছে। পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ, বিল্ডিং, রাস্তা, সিভিল, পার্কিং, জল সরবরাহ, উদ্যান, আলো, নগর পরিকল্পনা ও আইন দফতরের মোট ১০ জন আধিকারিক ওই কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন।
যদিও বায়ুদূষণ মামলার আবেদনকারী পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত জানাচ্ছেন, পুরসভা যে ভাবে রাস্তায় জল দেয়, তা বিজ্ঞানসম্মত নয়। কারণ, পুরসভার জলের গাড়ি মাঝরাস্তায় জল দেয়। কিন্তু সেই অংশ থেকে তেমন ধুলো ওড়ে না। সুভাষবাবুর কথায়, ‘‘ধুলোর উৎস প্রধানত রাস্তার দু’ধার। শহরে রাস্তার যে হাল, তাতে রাস্তার ধারে গাড়ির চাকা পড়লেই তা থেকে ধুলো ওড়ে। ফলে দূষণ কমাতে আগে ওই ধুলো নিয়ন্ত্রণ জরুরি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy