মর্মান্তিক: পড়ে আছে মৃতের ছাতা। বৃহস্পতিবার, তারাতলায় টাঁকশালের সামনে। ছবি:সুমন বল্লভ
উড়ালপুলের ঢাল ধরে ঝড়ের গতিতে নেমে আসে নিয়ন্ত্রণ হারানো একটি বাস। প্রাণ বাঁচাতে পথচারীরা তখন ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়চ্ছেন। এরই মধ্যে ওই বাসের ধাক্কায় একটি বাতিস্তম্ভ ভেঙে পড়ে এক যুবকের উপরে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম বিনয়কুমার রাম (৩৪)। তাঁর বাড়ি বজবজে। বৃহস্পতিবারের ওই ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রায় দশ জন।
পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ ডায়মন্ড হারবার-ধর্মতলা রুটের একটি বেসরকারি বাস তারাতলা উড়ালপুল থেকে খিদিরপুরের দিকে নামার সময়ে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। হঠাৎ ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ায় চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটিকে রাস্তার বাঁ দিক ঘেঁষে চালাতে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তারাতলা উড়ালপুল থেকে নামার সময়ে বাসটির ইঞ্জিন থেকে বিকট আওয়াজ হতে থাকে। চালক তখন আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন বাসটিকে বাঁ দিক ঘেঁষে চালাতে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বাসটি প্রথমেই একটি বাতিস্তম্ভে ধাক্কা মারলে সেটি ভেঙে পড়ে বিনয়কুমারের মাথায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। ওই যুবক বাস ধরবেন বলে সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, দু’টি বাতিস্তম্ভ ও একটি গাছে ধাক্কা মারার পরে বাসটি টাঁকশালের সামনে দাঁড়ানো অন্য একটি বাসের পিছনে ধাক্কা মারে। রাস্তা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সেই বাসটির ভাঙা জানলার কাচের টুকরো। নিয়ন্ত্রণ হারানো বাসের যাত্রীরা তখন আতঙ্কে চিৎকার করছেন। আতঙ্কে হুড়মুড়িয়ে নামতে গিয়ে বেশ কয়েক জন আহত হন। স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশ দুর্ঘটনা ঘটানো বাসটিকে আটক করেছে। চালক অবশ্য ফেরার। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘উড়ালপুল থেকে নামার পথে ইঞ্জিনের যান্ত্রিক ত্রুটি বুঝতে পেরেই চালক বাসটিকে রাস্তার বাঁ দিক ধরে চালাতে থাকেন। বাসটি সোজাসুজি এলে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।’’
এ দিন দুর্ঘটনার সময়ে ওই রাস্তা ধরেই সাইকেল চালিয়ে মোমিনপুরে যাচ্ছিলেন সরশুনার বাসিন্দা বিনয়কুমার শর্মা। তাঁর কথায়, ‘‘টাঁকশালের কাছাকাছি আসতেই শুনি বিকট আওয়াজ। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি, একটি বাস আমার খুব কাছে চলে এসেছে। নিজেকে বাঁচাতে সাইকেল ফেলে ফুটপাতে ঝাঁপ দিই।’’ হাত কেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে তাঁর। স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছাড়া পান।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তায় ছড়িয়ে ভাঙা কাচের টুকরো। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, ‘‘টাঁকশালের সামনে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। অথচ, প্রশাসন বা পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয় না।’’
দুর্ঘটনার পরে সেই বাস। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
ওই টাঁকশালেই চাকরি করতেন মৃত বিনয়কুমারের বাবা রামেশ্বর রাম। অবসর নিয়েছেন বছর দুই আগে। বড় ছেলে বিনয়ের এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ওই এলাকাটি দুর্ঘটনাপ্রবণ। তা সত্ত্বেও নিয়মিত ট্র্যাফিক পুলিশের দেখা পাওয়া যায় না।’’ মৃতের ভাই নবীনকুমারের অভিযোগ, ‘‘তারাতলা উড়ালপুল থেকে মাঝেরহাটের দিকে নামার সময়ে কোনও স্পিড ব্রেকার নেই। উড়ালপুল থেকে নামার পরেই টাঁকশালের সামনে বাসস্ট্যান্ড। স্পিড ব্রেকার থাকলে পথ দুর্ঘটনা অনেকটা এড়ানো যায়।’’ ডি সি (ট্র্যাফিক) সুমিত কুমার বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, বাসটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ায় চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাঁ দিকে ধরে চালাতে থাকেন। ওই বাসের যাত্রীরা জানিয়েছেন, তারাতলা উড়ালপুল থেকে নামার সময়ে ইঞ্জিনে একটা বিকট শব্দ হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।’’ ডি সি (ট্র্যাফিক) আরও জানান, দুর্ঘটনা ঠেকাতে তারাতলা উড়ালপুল থেকে নামার সময়ে স্পিড ব্রেকার বসানোর ভাবনাচিন্তা চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy