এই বাড়িতেই মেলে বৃদ্ধার দেহ। শনিবার, সার্ভে পার্কে। নিজস্ব চিত্র
গন্ধ বেরোচ্ছিল ক’দিন ধরেই। শনিবার সকাল থেকে সেই গন্ধের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। দুর্গন্ধে টিকতে না পেরে পড়শিরা খবর দেন থানায়। পুলিশ এসে দোতলা বাড়ির উপরের তলা থেকে উদ্ধার করে গৃহকর্ত্রীর পচাগলা দেহ। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম মঞ্জু সাহা (৭০)।
পুলিশ সূত্রের খবর, দক্ষিণ কলকাতার সার্ভে পার্কের বি ব্লকে ওই দোতলা বাড়ির নীচের তলায় থাকেন মৃতার অশীতিপর স্বামী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী গোষ্ঠ সাহা। দোতলায় থাকতেন মঞ্জুদেবী। শুক্রবার বিকেল থেকেই দুর্গন্ধ বেরোতে শুরু করায় প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়। শনিবার সকালে তাঁরা দেখেন, ওই বাড়িতে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি ভনভন করছে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে বৃদ্ধার দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠায়। স্থানীয় সূত্রের খবর, গোষ্ঠবাবু ও মঞ্জুদেবীর দুই ছেলে বাইরে থাকেন।
মৃতার স্বামী পুলিশকে জানিয়েছেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় উঠতে পারতেন না। পরিচারিকাই স্ত্রীর দেখাশোনা করতেন। সেই পরিচারিকা গত বুধবার থেকে ছুটি নিয়ে গোসাবায় নিজের বাড়ি গিয়েছেন। বৃদ্ধ পুলিশকে জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে তিনিও গন্ধ পেয়েছিলেন। শনিবার সকালে এক প্রতিবেশীর ফোন আসার পরে ওই বৃদ্ধও সার্ভে পার্ক থানায় ফোন করে বিষয়টি জানান।
এই ঘটনায় মৃতার স্বামীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রতিবেশী অপর্ণা হালদারের দাবি, ‘‘শুক্রবার রাতেই বাড়ি থেকে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ বেরোতে থাকায় গোষ্ঠবাবুকে ডেকে কথা বলি। উনি বলেছিলেন, রাতে আর এটা নিয়ে কাউকে কিছু না বলতে। সকাল হলে দেখা যাবে।’’ স্থানীয় সূত্রের খবর, মঞ্জুদেবী গোষ্ঠবাবুর দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রতিবেশীদের অভিযোগ, প্রথম পক্ষের স্ত্রীরও অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল। গোষ্ঠবাবুর সঙ্গে মঞ্জুদেবীর সুসম্পর্ক ছিল না বলেই এলাকা সূত্রের খবর।
প্রতিবেশীদের অভিযোগ মানতে চাননি গোষ্ঠবাবু। তিনি বলেন, ‘‘সিঁড়ি ভেঙে উপরে ওঠার ক্ষমতা আমার নেই। শনিবার গন্ধ বেরোতে থাকায় আমিই নিজে পুলিশকে খবর দিই।’’ এ দিনই ওই বাড়ির পরিচারিকা বিভা মণ্ডল কাজে যোগ দিতে আসেন। তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে মঞ্জুদেবী অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। গত মঙ্গলবার যখন ওঁকে খাবার দিতে গিয়েছিলাম, তখনই ওঁর হাত-মুখ ফুলে গিয়েছিল। কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না।’’
প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতার কারণেই ওই বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। তবে এই মৃত্যুর পিছনে অন্য কোনও রহস্য লুকিয়ে রয়েছে কি না, সে বিষয়ে তদন্ত করছে পুলিশ। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘মৃতার স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বাড়ির পরিচারিকাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy