ইঞ্জিনিয়ারদের পদোন্নতির নীতি বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েও পিছু হটতে হচ্ছে কলকাতা পুর প্রশাসনকে। পুরসভার মেয়র পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, পুর ইঞ্জিনিয়ারদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে যে নীতি ছিল, তা বদলানো হবে। বর্তমান নীতি অনুযায়ী, বিভিন্ন দফতরের ইঞ্জিনিয়ার পদে ৬০ শতাংশ থাকেন স্নাতক ইঞ্জিনিয়ার। আর বাকি ৪০ শতাংশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। এত কাল সেই নিয়ম মেনেই পদোন্নতি হয়েছে। সম্প্রতি পুরসভার মেয়র পরিষদের বৈঠকে পার্সোনেল দফতর ওই শতাংশের হার বদলানোর প্রস্তাব দেয়। তাতে বলা হয়েছে, স্নাতক ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য ৮৫ শতাংশ এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য ১৫ শতাংশ বরাদ্দ করা হোক। বৈঠকে তা অনুমোদিতও হয়ে যায়। এর পরেই ঠিক হয়, আজ, সোমবার পুরসভার অধিবেশনে সেই প্রস্তাব পাশ করানো হবে। কিন্তু শাসক দলের ইউনিয়নের চাপে পড়ে আপাতত অধিবেশনে ওই প্রস্তাব পেশ না করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে পুর প্রশাসন।
কলকাতা পুরসভায় স্নাতক ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে লড়াই বহু দিনের। স্নাতক ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশের অভিযোগ, ডিপ্লোমাধারীরা কাজে ফাঁকি দেন। কথা শোনেন না। পুরসভায় কাজের গতি ফেরাতে স্নাতক ইঞ্জিনিয়ারদের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। পুরসভার এক আধিকারিক জানান, পূর্ত দফতরের নীতি অনুসারেই ওই বদলের সিদ্ধান্ত। যা শুনে শাসক দলের ইউনিয়নের নেতা হৃষিকেশ রায় বলেন, ‘‘পূর্ত দফতরের নীতিতে এক জন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার আট বছর কাজ করার পরে পদোন্নতির জন্য পরীক্ষায় বসার সুযোগ পান। অকৃতকার্য হলে দু’বছর পরে আবার সুযোগ আসে। অথচ পুরসভায় আট বছর পরে পরীক্ষার সুযোগ নেই।’’ তা ছাড়া, অনেক ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ২৫-৩০ বছর ধরে কাজ করছেন। পদোন্নতির অপেক্ষায় রয়েছেন। নতুন সিদ্ধান্তে পদোন্নতির হার কমে গেলে তাঁরা বঞ্চিত হবেন।
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশের অভিযোগ, পুরসভারই কয়েক জন পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার স্বজনপোষণ চালানোর ব্যবস্থা করতে চাইছেন। তাই এই উদ্যোগ। দু’পক্ষের চাপান-উতোরে গত কয়েক দিনে পুরসভার কাজকর্ম শিকেয় উঠেছে। শেষে বিদ্যুৎমন্ত্রী তথা পুরসভায় তৃণমূলের কর্মী ইউনিয়নের নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের সমর্থনে নামেন। শোভনদেব বলেন, ‘‘চলতি নিয়মে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের কেউ কেউ আগেই পদোন্নতি পেয়েছেন। একই সংস্থায় ২০-২৫ বছর ধরে কাজ করে বাকিরা কেন বঞ্চিত হবেন, তা-ই লিখিত ভাবে পুরকর্তাদের জানিয়েছি।’’ ২৭ বছর চাকরির পরে কারও পদোন্নতি না হলে তা প্রতিষ্ঠানের পক্ষেও ভাল নয় বলে মত শোভনদেবের। তাঁর কথায়, ‘‘আমার প্রস্তাবে বলেছি, যাঁদের এখনও পদোন্নতি হতে বাকি, তাঁদের সেই সুযোগ দেওয়ার পরে নতুন নিয়ম চালু করা যেতে পারে।’’ শুক্রবার শোভনদেবের চিঠি পৌঁছয় পুর প্রশাসনের কাছে। এ প্রসঙ্গে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’’ পুরসভা সূত্রের খবর, আপাতত ঠিক হয়েছে, সোমবারের অধিবেশনে সেই প্রস্তাব তোলা
হচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy