সিসি ক্যামেরা বসল সোনারপুর ভাগাড়ে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
পচা মাংস পাচারের সঙ্গে সমাজের নানা স্তরের প্রভাবশালীরা জড়িয়ে রয়েছেন। নারকেলডাঙা হিমঘরের গুদামের অন্যতম মালিক বিশ্বনাথ ঘড়ুইকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমনই তথ্য উঠে এসেছে বলে ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশ সূত্রের খবর। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, প্রথমে মনে করা হয়েছিল বিশ্বনাথই মাংস পাচার চক্রের মূল পাণ্ডা। কিন্তু তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই নানা স্তরের প্রভাবশালীদের জড়িয়ে থাকার তথ্য উঠে আসছে।
শুধু বিশ্বনাথই নয়, হিমঘরের অন্য এক অবাঙালি মালিকও এই মাংস পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। ওই মালিক এবং বিশ্বনাথ যৌথ ভাবে বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলত। ওই ব্যক্তিকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
শনিবার রাত ও রবিবার সারা দিন বিশ্বনাথের গড়িয়া ও মধ্যমগ্রামের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছেন ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশের আধিকারিকেরা। এখনও পর্যন্ত ওই বাড়ির দলিল, অন্য একটি ফ্ল্যাট ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে দু’টি অ্যাকাউন্টের হদিস পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। ফ্ল্যাটটি বিশ্বনাথের এক স্ত্রীর নামে। প্রসঙ্গত, বিশ্বনাথের দুই স্ত্রী। তাঁদের দু’জনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
সেই সঙ্গে ভাগাড়-কাণ্ডে জড়িত পরিবহণ ব্যবসায়ী মহম্মদ এখলাককে বিশ্বনাথের মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও সূত্রের খবর। পারস্পরিক বয়ান মিলিয়ে দেখা হবে। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, এখলাক জেরায় দাবি করেছেন, তিন বছরের জন্য বিশ্বনাথের সঙ্গে তাঁর ব্যবসা সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছিল। সেই অনুযায়ীই তিনি কাজ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর গাড়িতে যে পচা মাংস পাচার করা হত, তা তিনি জানতেন না। তদন্তকারীরাও মনে করছেন, পরিবহণ ব্যবসায়ীর এই দাবি সত্যি। তাই ভাগাড়ের মাংস-কাণ্ডে এখলাককে অন্যতম সাক্ষী হিসেবে ধরা হবে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। তবে তদন্তকারীদের অনুমান, শুধু এখলাকই নন, অন্য অনেক পরিবহণ ব্যবসায়ীও চক্রের সঙ্গে জড়িত। তাঁদেরও শনাক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে।
ভাগাড়ের মাংস ফ্রিজার ভ্যানে করে যে শুধু শহর ও শহরতলিতেই নয়, পাড়ি দিত শিলিগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেও, এখলাককে জেরা করে ইতিমধ্যেই সে তথ্য উঠে এসেছে। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, দেশের সীমান্ত পেরিয়ে সেই মাংস পাড়ি দিত ভুটানেও। কারা কারা সেই মাংস নিয়েছেন, তা শনাক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে।
ছোট ফ্রিজার ভ্যানে করে প্রতিদিন গড়ে ১০০-১৫০ কেজি মাংস উত্তর, মধ্য কলকাতার একাধিক বড় রেস্তরাঁ, নামী মাংসের দোকানে পৌঁছে যেত। স্থানীয় ভাবে মাংস সরবরাহের জন্য বিশ্বনাথ ওই ভ্যান ব্যবহার করত। এখলাকের কাছে যে ‘চালান’ রয়েছে, সেগুলি দেখে তদন্তকারীরা ওই রেস্তরাঁ, দোকান চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছেন। সংশ্লিষ্ট দোকানের মালিকদেরও ডাকা হবে বলে তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy