Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

প্রতারককে বোকা বানিয়ে ধরল পুলিশ

পুলিশের অভিযোগ, ঋণ পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে প্রতারণা করতেন সৌমেন। সম্প্রতি বালি-নিশ্চিন্দার এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট থেকে সা়ড়ে ৮৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন তিনি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৮ ১৮:১৪
Share: Save:

বিউটি পার্লারের ব্যবসায়ী মহিলা যে এমন ফাঁদ পেতেছেন, ঘুণাক্ষরেও তা বুঝতে পারেননি বালি-নিশ্চিন্দার বাসিন্দা সৌমেন বাগচী!

ঋণ পাইয়ে দেওয়ার জন্য ওই মহিলার কাছ থেকে ব্যাঙ্কের চেক, ফর্ম— সবই চেয়েছিলেন তিনি। সেই নথিপত্র নিতে গিয়েই বড়বাজার থানার হাতে ধরা পড়ে গেলেন সৌমেন। পুলিশের অভিযোগ, ঋণ পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে প্রতারণা করতেন সৌমেন। সম্প্রতি বালি-নিশ্চিন্দার এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট থেকে সা়ড়ে ৮৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন তিনি।

পুলিশ সূত্রের খবর, নিশ্চিন্দার বাসিন্দা ওই ব্যক্তির নাম কার্তিকচন্দ্র দে। সম্প্রতি তিনি জানতে পারেন, মহাত্মা গাঁধী রোডের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে সাড়ে ৮৩ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। যে চেক দিয়ে টাকা তোলা হয়েছে, তা তিনি দিয়েছিলেন ঋণ পাইয়ে দেওয়া এক সংস্থাকে। এর পরেই বড়বাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন কার্তিকবাবু। ওই সংস্থার নম্বরও পুলিশকে দেন। এর পরেই সেই সূত্র ধরে তদন্ত এগোয়। কিন্তু পুলিশ দেখে, ওই ফোনের সিম ভুয়ো নথি দিয়ে তোলা হয়েছে। যে যুবকেরা নথি সংগ্রহ করেছেন, তাঁরাও
নেহাতই কর্মী। এই জালিয়াতির পিছনে কে রয়েছে, তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই প্রতারককে জালে ফেলতে ফাঁদ পাতার কথা ভাবেন তদন্তকারীরা।

পুলিশ জানিয়েছে, থানার এক মহিলা গ্রিন পুলিশকে বিউটি পার্লারের ব্যবসায়ী সাজিয়ে ওই নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়। ফোন ধরেন সৌমেন। সব শুনে এক যুবককে পাঠানোর কথা বলেন তিনি। ওই মহিলা প্রস্তাব দেন, শুক্রবার সন্ধ্যার পরে যেন নথি নেওয়া হয়। সেই মতো এক যুবক এসে নথি নিয়ে যান। এর পরে সেই যুবকের পিছু নেন তদন্তকারীরা।
দেখা যায়, বরাহনগরে থাকেন ওই যুবক। শনিবার সকালে ওই যুবক বেরিয়ে আরও কিছু নথি সংগ্রহের পরে বালি হল্ট স্টেশনের কাছে ওই নথি এক জনকে হস্তান্তর করতে যাচ্ছিলেন। সে সময়েই পুলিশ হানা দিয়ে ওই যুবককে পাকড়াও করে।

লালবাজারের একটি সূত্র জানাচ্ছে, থানায় নিয়ে আসার পরে ওই যুবক দাবি করেন, তিনি কর্মী মাত্র। তাঁকে নথি আনতে বলা হয়েছিল। পরে অবশ্য জেরার মুখে তিনি জানান, এই চক্রের চাঁই তিনিই। নিজের নামও স্বীকার করেন। এর পরে রবিবার রাতে বড়বাজার থানার এক এসআই এবং দুই কনস্টেবল তাঁকে বালি হল্ট স্টেশনের কাছে নিয়ে যান। সেখানে একটি ঝোপের ভিতর থেকে মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। পুলিশ দেখে মোবাইলটি ঝোপের ভিতরে ফেলে দিয়েছিলেন সৌমেন। ওই ফোন এবং কল রেকর্ডের মধ্যেই প্রতারণার প্রমাণ রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের দাবি।

পুলিশ জানায়, সৌমেনের এই প্রতারণার ব্যবসা পুরোটাই মোবাইল ফোনে চলত। বেকার যুবকদের নিয়োগ করে তিনি কলকাতা এবং লাগোয়া জেলায় হ্যান্ডবিল সাঁটাতেন। সেখানে যে নম্বর থাকত, তা ভুয়ো নথি দিয়ে তোলা। প্রতারণা-চক্র ফাঁস হয়ে যেতে পারে, এমনটা
আঁচ করলেই পুরনো সিম ফেলে দিয়ে নতুন সিম নিয়ে নিতেন। বদলে ফেলতেন কর্মীদেরও। তাঁর কোনও কর্মীই সৌমেনের বা়ড়ি বা অফিস চিনতেন না। পুলিশ সূত্রের দাবি, ফর্মে থাকা সই জাল করে চেকে বসিয়ে দিতেন সৌমেন। তার পরে কোনও কর্মীকে দিয়ে টাকা তোলাতেন। নথি এবং টাকা বিভিন্ন অচেনা জায়গায় হাতবদল হত।

পুলিশ সূত্রের খবর, সৌমেন বেলুড়ের একটি কলেজে পড়তেন। মাঝপথেই পড়াশোনা ছেড়ে দেন। পরে হোটেল ম্যানেজমেন্ট পাশ করেন এবং কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে শিক্ষানবিশিও করেন। দু’টি নামী রেস্তরাঁয় চাকরিও করেছেন সৌমেন। পরে এই ব্যবসার জাল বিছোন।

লালবাজারের একটি সূত্র বলছে, এত লোককে ঘোল খাইয়ে দেওয়ার পরে এ ভাবে নিজেই যে ফেঁসে যাবেন, তা ভাবতে পারেননি সৌমেন। আদালতের নির্দেশে ৫ মে পর্যন্ত তাঁকে পুলিশি হেফাজতে থাকতে হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Fraud Case সৌমেন বাগচী
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE