Advertisement
২০ মে ২০২৪

গেস্ট হাউসের বন্ধ ঘরে দম্পতির দেহ

পুলিশ সূত্রের খবর, মৃতদের নাম সুব্রত নিয়োগী (৭৮) ও কাঁকন নিয়োগী (৭১)। পুলিশ জানিয়েছে, দক্ষিণেশ্বরের ওই গেস্ট হাউসে জমা দেওয়া ভোটার কার্ড অনুযায়ী, তাঁদের বাড়ি চারু মার্কেট থানার ১১এ/১বি/২ ব্রজেন্দ্রলাল গাঙ্গুলি লেনে।

দক্ষিণেশ্বরের এই গেস্ট হাউসেই মেলে দেহ। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র

দক্ষিণেশ্বরের এই গেস্ট হাউসেই মেলে দেহ। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৩০
Share: Save:

ভোরে মঙ্গলারতি দেখবেন, তাই স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে আগের রাতেই দক্ষিণেশ্বর মন্দির এলাকার একটি গেস্ট হাউসে উঠেছিলেন এক বৃদ্ধ। তাঁদের কথা মতো শনিবার সকালে কেয়ারটেকার বারবার ডেকেও সাড়া পাননি। দরজা ধাক্কা দিলেও খোলেননি ওই দম্পতি। শেষে পুলিশ এসে ঘরের দরজা ভেঙে দেখলেন বিছানায় মৃত অবস্থায় শুয়ে রয়েছেন ওই দম্পতি। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, তাঁরা বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, মৃতদের নাম সুব্রত নিয়োগী (৭৮) ও কাঁকন নিয়োগী (৭১)। পুলিশ জানিয়েছে, দক্ষিণেশ্বরের ওই গেস্ট হাউসে জমা দেওয়া ভোটার কার্ড অনুযায়ী, তাঁদের বাড়ি চারু মার্কেট থানার ১১এ/১বি/২ ব্রজেন্দ্রলাল গাঙ্গুলি লেনে। তবে এ দিন ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বহু দিন আগেই ওই ঠিকানা ছেড়েছেন তাঁরা। স্থানীয়েরা জানালেন, ১০ বছর আগে সুব্রতবাবুরা সেখানকার ফ্ল্যাট বিক্রি করে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। পরে অনেক খোঁজ করে পুলিশ ঢাকুরিয়া এলাকার বাসিন্দা ওই দম্পতির ছেলের খোঁজ পেয়ে তাঁকে খবর পাঠান। কিন্তু কী কারণে কিংবা কী ভাবে ওই দম্পতির এমন অস্বাভাবিক মৃত্যু হল, তা এখনও স্পষ্ট নয় বেলঘরিয়া থানার তদন্তকারীদের কাছে। পুলিশ জানায়, গেস্ট হাউসের ঘর থেকে কোনও সুইসাইড নোটও মেলেনি।

এ দিন সকালে দক্ষিণেশ্বরের টি এন বিশ্বাস রোডের ওই গেস্ট হাউসে গিয়ে দেখা গেল, একতলায় পাঁচ নম্বর ঘরটি তালা দিয়ে সিল করে দিয়েছে পুলিশ। গেস্ট হাউসের মালিক নিকুঞ্জবিহারী মুদলী জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ একটি ছোট ব্যাগ হাতে সুব্রতবাবু ও কাঁকনদেবী সেখানে আসেন। শনিবার ভোরে মঙ্গলারতি দেখবেন ও লাইন দিয়ে প্রথমেই পুজো দেবেন, তাই আগের দিন থেকে মন্দিরের কাছে থাকতে চলে এসেছেন বলেও ওই দম্পতি জানান নিকুঞ্জবাবুকে। এর পরে ভোটার কার্ডের ফোটোকপি দিয়ে গেস্ট হাউসের রেজিস্টারে নাম-ঠিকানা নথিভুক্ত করেন তাঁরা। এ দিন নিকুঞ্জবাবু বলেন, ‘‘ওঁদের পাঁচ নম্বর ঘরটি দিয়েছিলাম। রাতে আমাদের থেকেই ভাত-মাছ নিয়ে খাওয়াদাওয়া করলেন দু’জনে।’’

গেস্ট হাউসের কর্মীরা জানান এ দিন ভোরে তাঁদের ঘুম থেকে ডেকে দিতে বলেছিলেন সুব্রতবাবু। সেই মতো ভোর সাড়ে ৫টা থেকে বেশ কয়েক বার ডেকেও সাড়া না পাওয়ায় সকাল ৭টা নাগাদ নিকুঞ্জবাবু বেলঘরিয়া থানায় খবর পাঠান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন স্থানীয় কাউন্সিলর শঙ্করী ভৌমিকও। সকলের উপস্থিতিতে পুলিশ ৫ নম্বর ঘরের দরজা ভাঙে। ভিতরে বিছানায় পাশাপাশি ওই দম্পতিকে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। তবে মৃত অবস্থায়। পরে পুলিশ দেহ দু’টি সাগরদত্ত হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এ দিন চারু মার্কেটের থানার অদূরেই ব্রজেন্দ্রলাল গাঙ্গুলি লেনে গিয়ে জানা যায়, কুড়ি বছর আগে সেখানে ফ্ল্যাট কিনেছিলেন জামশেদপুরের স্টিল কারখানার কর্মী সুব্রতবাবু। চারতলার ফ্ল্যাটে স্ত্রী, ছেলে, বৌমা ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে ছিল সংসার। সেই বহুতলের অন্য বাসিন্দারা ওই দম্পতির এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘সুব্রতবাবু ও আমি এক সঙ্গে ফ্ল্যাট কিনেছিলাম। তবে ওঁরা কারও সঙ্গে মেলামেশা করতেন না। পরে আর যোগাযোগ ছিল না।’’ দশ বছর আগে সুব্রতবাবুর ফ্ল্যাটটি যে ব্যক্তি কিনেছিলেন, তিনি বলেন, ‘‘উনি কোথায় গিয়েছিলেন, তা আমাদের জানা নেই।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ঢাকুরিয়া এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন ওই দম্পতি। ছেলের পরিবার থাকে অন্য একটি বাড়িতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE