Advertisement
১৭ মে ২০২৪

শৌচাগারে ছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ, নার্সিং ছাত্রীর অপমৃত্যুতে তাণ্ডব

এ দিন পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠায় ঘটনাস্থলে যান ডিসি (ইডি) রূপেশ কুমার। সিদ্ধান্ত হয়, বিকেলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পড়ুয়াদের বৈঠক হবে।

রিঙ্কি ঘোষ।

রিঙ্কি ঘোষ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৮ ০৩:২৫
Share: Save:

কোনও রোগীর মৃত্যু নয়। কলেজের হস্টেলে এক নার্সিং পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুতে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়াল পিয়ারলেস হাসপাতাল চত্বরে। দু’দিন ধরে বিক্ষোভ হল দফায় দফায়। পরিস্থিতি এতটাই ঘোরালো যে, ওই কলেজ আপাতত বন্ধ রাখার কথা ভাবছেন হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার রাতে হস্টেলের শৌচাগার থেকে ওই ছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের পরে এক দফা বিক্ষোভ হয়। শুক্রবার সকালে ফের শুরু হয় বিক্ষোভ। দফায় দফায় বিক্ষোভের পরে হাসপাতাল সংলগ্ন নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষের ঘর ভাঙচুর করা হয়। হাসপাতালে ঢুকতে দেওয়া হয়নি চিকিৎসকদেরও। সমস্যায় পড়েন রোগীদের দেখতে আসা আত্মীয়েরা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ওই ছাত্রী আত্মঘাতী হয়েছেন।

পুলিশ জানায়, মৃত ছাত্রীর নাম রিঙ্কি ঘোষ (২১)। তাঁর বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে। বৃহস্পতিবার রাতে নার্সেস হস্টেলের শৌচাগারে সিলিংয়ের সঙ্গে গলায় ওড়নার ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলছিল রিঙ্কির দেহ। তাঁর অপমৃত্যুতে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন হস্টেলের আবাসিকেরা। রক্ষীদের সঙ্গে তাঁদের হাতাহাতি হয়। খবর সংগ্রহে গিয়ে হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে আক্রান্ত হন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও।

তৃতীয় বর্ষে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ফল বেরোনোর পরে বৃহস্পতিবার রিঙ্কি এবং তাঁর সহপাঠীদের অভিভাবকদের ডেকে পাঠিয়েছিল কলেজ। রিঙ্কির মা মিঠু ঘোষের অভিযোগ, সকলের সামনে পিঙ্কির বাবাকে অপমান করেন শিক্ষকেরা। ‘‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রিঙ্কি ফোন করে বলে, ‘আমাকে কখনও কষ্ট দেয়নি বাবা। সবার সামনে তাঁকেই অপমানিত হতে হল!’ এটা সহ্য করতে না-পেরেই আত্মঘাতী হয়েছে মেয়ে,’’ বললেন মিঠুদেবী। রিঙ্কির বাবা আনন্দ ঘোষের দাবি, ‘‘মেয়েকে পড়তে পাঠিয়েছিলাম। কেন এমন হল, কলেজকে তা জানাতে হবে।’’

রিঙ্কির অনেক সহপাঠী মিঠুদেবীর সঙ্গে একমত। কলেজে বছরে চারটি পরীক্ষা হয়। তিনটি পরীক্ষা অভ্যন্তরীণ। শেষ পরীক্ষা হয় ইন্ডিয়ান নার্সিং কাউন্সিলের আওতায়। পড়ুয়াদের অভিযোগ, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার নম্বর কলেজের হাতে। তাই কথা না-শুনলে কম নম্বর দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হত। এই নিয়ে পড়ুয়ারা চাপে ছিলেন। তৃতীয় বর্ষের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় বেশির ভাগ পড়ুয়ারই ফল খারাপ হওয়ায় অনেকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন বলে ছাত্রী-অভিভাবকের অভিযোগ।

এক ছাত্রীর অভিযোগ, শিক্ষকেরা বৃহস্পতিবার অভিভাবকদের ডেকে কথা বলেন। সেখানেই পড়ুয়াদের নানা ভাবে অপমান করা হয়। অপমানেই আত্মঘাতী হয়েছেন রিঙ্কি। হস্টেলের সুপার, কলেজের অধ্যক্ষ এবং দোষী শিক্ষকদের এই ঘটনার দায় স্বীকার করতে হবে বলে দাবি তুলেছেন পড়ুয়াদের একাংশ। প্রাক্তন পড়ুয়ারাও কলেজ-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সোশ্যাল সাইটে মুখ খুলেছেন। প্রাক্তন পড়ুয়াদের কেউ কেউ সাইটে জানান, ওখানকার শিক্ষকেরা কথায় কথায় দুর্ব্যবহার করেন। মা-বাবা তুলে গালিগালাজ করেন পড়ুয়াদের। নম্বর কমে যাওয়ার আশঙ্কায় পড়ুয়ারা কিছু বলতে সাহস করেন না। ছাত্রীর অপমৃত্যুর পরে প্রাক্তনীদের আবেদন, ‘‘লড়াই চালিয়ে যেতে ওখানকার বর্তমান পড়ুয়াদের সাহায্য করুন।’’

দুর্ব্যবহার বা অপমানের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পিয়ারলেস হাসপাতালের সিইও সুদীপ্ত মিত্র। তিনি বলেন, ‘‘রিঙ্কির মৃত্যু দুঃখজনক। তবে প্রতি বারেই পরীক্ষার পরে অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক হয়। এ বারেও হয়েছে। শিক্ষকেরা অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। পড়ুয়া বা অভিভাবকদের কোনও অপমান করা হয়নি।’’

এ দিন পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠায় ঘটনাস্থলে যান ডিসি (ইডি) রূপেশ কুমার। সিদ্ধান্ত হয়, বিকেলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পড়ুয়াদের বৈঠক হবে। অভিযোগ, তার আগেই কিছু ছাত্রছাত্রী ডেপুটেশনের নাম করে ঢুকে কলেজের অধ্যক্ষের ঘরের দরজা ভেঙে দেন। হাসপাতালের লবিতে ঢুকে রোগীর পরিজনদের আটকে রাখেন। সন্ধ্যায় দু’পক্ষের বৈঠক হয়।

পরে সিইও সুদীপ্তবাবু বলেন, ‘‘অভিযোগ থাকতেই পারে। স্বাভাবিক ভাবে ডেপুটেশন দিলে কোনও সমস্যা ছিল না। হাসপাতালে ঢুকে ওই পড়ুয়ারা যা করলেন, তা মানা যায় না।’’ তাঁর অভিযোগ, বিকেলে নার্সিং কলেজের পড়ুয়া নন, এমন লোকজনকেও ক্যাম্পাসে দেখা গিয়েছে। ‘‘এমন অচলাবস্থার মধ্যে হাসপাতাল চালানো সম্ভব নয়। আপাতত নার্সিং কলেজ বন্ধ রাখা হতে পারে। ইন্ডিয়ান নার্সিং কাউন্সিলকে আমরা বিষয়টি জানাচ্ছি,’’ বলেন সুদীপ্তবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rinki Ghosh Death Unnatural death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE