অভিনব: ‘বিটল্স’-এর অ্যালবামের ছবি দিয়ে পার্ক সার্কাসে চলছে পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের প্রচার। মঙ্গলবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
পার্ক সার্কাস মোড়ে পুলিশের গার্ডরেলের সঙ্গে ঝুলছে রক ব্যান্ড বিটল্সের সত্তরের দশকে সাড়া ফেলে দেওয়া অ্যালবাম ‘অ্যাবে রোড’-এর প্রচ্ছদের ছবি। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, লন্ডনের অ্যাবে রোডে জ়েব্রা ক্রসিং দিয়ে সুশৃঙ্খল ভাবে হেঁটে যাচ্ছেন জন লেনন, রিংগো স্টার, পল ম্যাককার্টনি ও জর্জ হ্যারিসন। নীচে লেখা, ‘ইফ দে ক্যান, হোয়াই কান্ট ইউ?’ ওরা যদি পারে, তা হলে তোমরা পারো না কেন?
পথ-নিরাপত্তা সপ্তাহে পথচারীদের সচেতন করতে বিখ্যাত এই অ্যালবামের প্রচ্ছদের ছবি ব্যবহার করছে পুলিশ। নানা মহলে লালবাজারের এই ভূমিকা প্রশংসা কুড়োলেও অনেকেরই প্রশ্ন, কলকাতার পথচারীদের অধিকাংশই সাধারণ মানুষ। বিটল্স সম্পর্কে তাঁদের ধারণা আছে তো? এই প্রশ্নও উঠছে, ২০১৩ সালে এক বার এমন পদক্ষেপ করার পরে সে ভাবে সাড়া মেলেনি। তার পরেও ফের এমন ছবি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত কেন? লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা যদিও জানাচ্ছেন, গত রবিবার থেকে শুরু হওয়া পথ-নিরাপত্তা সপ্তাহে তাঁদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ রাস্তায় বেপরোয়া হাঁটাচলা (জে ওয়াকিং) বন্ধ করা। তাই সব রকম ভাবে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ওই কর্তার কথায়, ‘‘বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন ধরনের বিষয়কে সচেতনতা প্রচারে আনা হয়। বিটল্সের অ্যাবে রোড-কে সামনে রেখে প্রচার এক শ্রেণির মানুষকে মাথায় রেখে করা হয়েছে।’’ যদিও পাল্টা প্রশ্ন উঠছে, যেখানে জরিমানা করেও এক সময়ে কার্যোদ্ধার করা যায়নি, সেখানে লেননের অ্যালবামের ছবি দেখিয়েও কি কাজের কাজ কিছু হবে? সচেতন নাগরিকদের বড় অংশ আবার মনে করছেন, বড় অঙ্কের জরিমানা ছাড়া যেমন খুশি হাঁটা এবং তার জেরে হওয়া পথ দুর্ঘটনা কমানো যাবে না।
এমনিতে সভা বা মিছিল থাকলে তো কথাই নেই। হাঁটা নিষিদ্ধ, এমন সেতুর উপর দিয়ে যেমন খুশি রাস্তা পারাপার করতে গিয়ে, একই সময়ে স্টেশনে ঢুকে পড়া একাধিক ট্রেন ধরার তাড়নায় হাঁটতে গিয়ে বা তড়িঘড়ি চলন্ত বাস থেকে নামতে গিয়ে অনেক সময়েই দুর্ঘটনা ঘটে। আশঙ্কা আরও বেড়েছে কলকাতা পুলিশেরই একটি সমীক্ষায়। যেখানে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩ সালে পথ দুর্ঘটনায় মৃতদের ৩৮ শতাংশই পথচারী। কিন্তু তার পরেও যেমন খুশি হাঁটা বন্ধ করা যাচ্ছে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের পথ-নিরাপত্তা সপ্তাহে এ নিয়ে আলাদা করে গুরুত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। লালবাজার জানাচ্ছে, দীর্ঘদিন বাদে এ জন্য জরিমানা করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।
সোমবার যেমন পার্ক স্ট্রিট এবং বেহালা চত্বরে যেমন খুশি হাঁটার জন্য জরিমানা করেছে পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, ৫০ জন পথচারীকে অপরাধ বুঝে ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়েছে। এমনিতে কেন্দ্রীয় মোটর যান আইনে ‘জে-ওয়াকিং’ বা নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে পথ চলার জন্য জরিমানার পরিমাণ ধার্য করার ক্ষমতা রাজ্যগুলিকে দেওয়া হয়েছে। কলকাতায় পথচারীদের জরিমানার অঙ্ক ঠিক হয়ে আছে রাজ্য স্বরাষ্ট্র (পুলিশ) দফতরের এক নির্দেশিকায়। এ ক্ষেত্রে জে-ওয়াকিংয়ের মামলা করতে হয় কলকাতা পুলিশ আইনের ৬৬ নম্বর ধারায়, যাতে জরিমানা মাত্র ১০-৫০ টাকা। নিয়মভঙ্গকারী পথচারীর সেই সময়ে কতটা সামর্থ্য আছে, তা বুঝে ট্র্যাফিক সার্জেন্ট নিজের বিবেচনা অনুযায়ী জরিমানার অঙ্ক ঠিক করেন। কিন্তু অনেকেরই বক্তব্য, জরিমানার অঙ্ক বাড়িয়ে এমন করা উচিত, যাতে এক বার জরিমানা দিলে ফের নিয়ম ভাঙার আগে কোনও পথচারী দু’বার ভাবেন। কিন্তু সরকারি নিয়মে জরিমানার পরিমাণ বাড়াতে হলে নতুন নির্দেশ জারি করতে হবে।
পুলিশ কি সেই পথে হাঁটবে? বুঝিয়ে কার্যোদ্ধারের পথ ছেড়ে বহু বছর বাদে জরিমানা শুরু করা লালবাজার আপাতত বিটল্স-এর অ্যালবামের ছবির উপরেই ভরসা রাখছে বলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy