Advertisement
১৬ মে ২০২৪
New Year 2024

বড়দিনের চিড়িয়াখানাকে বর্ষশেষে টেক্কা দিতে পারল ইকো পার্ক? ভিড়ের যুদ্ধে কে এগিয়ে আর কে পিছিয়ে

রবিবার সকাল থেকেই পিকনিকের মেজাজে দেখা গিয়েছে ময়দান এলাকাকে। দল বেঁধে জড়ো হয়ে দেদার খাওয়াদাওয়া চলল সেখানে। তার পর সেই ভিড়ই আবার ছড়িয়ে পড়ল শহরের নানা প্রান্তে।

চিড়িয়াখানায় বর্ষশেষে ভিড়।

চিড়িয়াখানায় বর্ষশেষে ভিড়। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:৩৮
Share: Save:

বড়দিনে ভিড়ের লড়াইয়ের মাঠে দাঁড়াতেই পারেনি ইকো পার্ক! গত বছরের হারের বদলা নিয়ে সেরার মুকুট উঠেছিল চিড়িয়াখানার মাথায়। তখন থেকেই বর্ষশেষ এবং নতুন বছরের শুরুর দিনের লড়াই নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছিল। রবিবার, বছরের শেষ দিনের সেই লড়াইয়ের ফলাফল হাতে চলে এল। ভিড় মিটারে কে কাকে টেক্কা দিল, হারের বদলা কেউ নিতে পারল কি না, তারই মার্কশিট বানাল আনন্দবাজার অনলাইন।

শীত-উৎসবের আবহাওয়া বলতে যা বোঝায়, সেই হিমেশ পরশ সকাল থেকে তেমন ছিল না। কিন্তু বছরের শেষ দিন, তায় রবিবার বলে কথা! জমিয়ে ‘আহা মরি’ না হলেও এই হাল্কা শীতের স্পর্শেও অখুশি নয় শহর। উৎসবের মেজাজটা সকাল থেকেই মালুম হচ্ছিল। কলকাতা ছাড়িয়ে পিকনিকে শামিল হবে, না শহরের ভিতরে চিরাচরিত চিডি়য়াখানা-ভিক্টোরিয়ার বাগানের শীত-পার্বণে যোগ দেওয়া হবে— সেই ধন্দ যথারীতি উঁকি দিয়েছে। গত কয়েক বছরে এই দিনগুলিতে শহরের অন্যতম সেরা আকর্ষণ হয়ে উঠেছে নিউটাউনের ইকো-ট্যুরিজ়ম পার্ক। বছরের শেষ দিনটিতে ইকো পার্কের সাতটি বিস্ময় না আলিপুরের পশুপাখির বাগানে সিংহ-জাগুয়ার-ক্যাঙারুদের চাক্ষুষ করার মজা— বেছে নেওয়া সহজ কাজ ছিল না কলকাতার জন্য।

রবিবার সকাল থেকেই পিকনিকের মেজাজে দেখা গিয়েছে ময়দান এলাকাকে। দল বেঁধে জড়ো হয়ে দেদার খাওয়াদাওয়া চলল সেখানে। তার পর সেই ভিড়ই আবার ছড়িয়ে পড়ল শহরের নানা প্রান্তে। দুপুরে আলিপুর চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা গেল, টিকিট কাউন্টারের সামনে কার্যত তিল ধারণেরও জায়গা নেই। দিনভর চলেছে অত্যুৎসাহী যুবকদের বাঘকে ছোলা খাওয়ানোর পালা। জিরাফ ও জেব্রার খাঁচায় নির্বিচারে ছুড়ে দেওয়া হয়েছে বিস্কুট, কমলালেবু বা কমলালেবুর খোসা। বাঘের খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে তার হালুম ডাকে চমকে উঠেছিল বেহালার স্কুল ছাত্র অতীন্দ্র মণ্ডল। তার কথায়, ‘‘সামনে থেকে বাঘ এই প্রথম দেখলাম। তাই এত কাছ থেকে ডাক শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’’ অতিরিক্ত ভিড় দেখে ঘাবড়ে গিয়ে বাঘ-সিংহদেরও বারবার খাঁচার ভিতরের ঘরে লুকোতে দেখা গেল। তা সত্ত্বেও চিড়িয়াখানায় এসে বাঘ-সিংহ দেখে খুশি দর্শকেরা। ব্যারাকপুর থেকে বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে রবিবার সারাদিন চিড়িয়াখানায় সপরিবার কাটালেন রহমত আলি। রহমতের কথায়, ‘‘আমরা পিকনিকের আমেজে ছিলাম। আজ আসব বলে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। বাড়ি থেকে সারাদিনের খাবার নিয়ে এসেছিলাম।’’

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

ইকো পার্কেও তা-ই। সকালে ভিড় একটু কম হলেও তা বাড়তে শুরু করে বেলার দিকে। কিন্তু রাত ৮টা পর্যন্ত পাওয়া পরিসংখ্যান বলছে, বড়দিনের পর বর্ষশেষেও বাজিমাত করল সেই চিড়িয়াখানাই। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছেন, বড়দিনের চেয়েও রবিবার বেশি ভিড় হয়েছে সেখানে। বড়দিনে এসেছিলেন ৬৩ হাজার ৮২০ জন। বর্ষশেষে তা বেড়ে হল ৭০ হাজার ২০০। অন্য দিকে, বড়দিনকেই টপকাতে পারল না ইকো পার্ক। ওই দিন সেখানে ৫৭ হাজার ৬০৩ জনের ভিড় হয়েছিল। বছরের শেষ দিনে হয়ে ৫৭ হাজার ৩৯৫ জনের। যদিও এই ভিড়ের পরিসংখ্যান গত বছরের তুলনায় অনেকটাই কম। ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর চিড়িয়াখানা ও ইকো পার্কে জনজোয়ার ছাড়িয়েছিল ৮০ হাজার। তবে গত বছর ইকো পার্কের সঙ্গে লড়াইয়ে বার বার পিছিয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছিল আলিপুরকে। এ বার ভিড় কমলেও চিড়িয়াখানার হারানো গৌরব ফিরেছে!

চিড়িয়াখানা ও ইকো পার্কের পাশাপাশি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ভারতীয় জাদুঘর, ইকো পার্ক, নিকো পার্ক, মিলেনিয়াম পার্কও ভিড়ে ঠাসা ছিল। রবিবার ভিক্টোরিয়া আর ভারতীয় জাদুঘরের টিকিট কাউন্টারের সামনে লাইন কয়েকশো মিটার ছাড়িয়ে যায় বেলা বাড়তেই। গাড়ির চাপে যানজট তৈরি হয় গোটা রাস্তায়। সামাল দিতে কার্যত হিমশিম খেতে হয় পুলিশকর্মীদের। নিকো পার্কে ৯ হাজার ৮০০ জন গিয়েছিলেন রবিবার। ভারতীয় জাদুঘরে গিয়েছিলেন ৮ হাজার ৮১২ জন। সায়েন্স সিটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সেখানে ২৩ হাজার ৩৫২ জন মানুষের ভিড় হয়েছিল।

নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে গভীর রাতে শহরের রাস্তাঘাটে বিপুল জনসমাগম হয়ে থাকে। এ বার তার ব্যত্যয় হওয়ার কথা নয়। সেই উন্মাদনা, কখনও কখনও উন্মত্ততাকে লাগাম পরাতে মরিয়া কলকাতা পুলিশও। পার্ক স্ট্রিট, মির্জা গালিব স্ট্রিট, রাসেল স্ট্রিট, মিডলটন রো-সহ অন্যান্য রাস্তার প্রতিটি মোড়ে পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। শ্লীলতাহানির চেষ্টা, গন্ডগোল পাকানো, মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো-সহ বিভিন্ন অপরাধের ঘটনা ঘটেই থাকে। তা মাথায় রেখেই আরও কড়া হয়েছে লালবাজার। এ সব কারণে সকাল থেকেই বেশ কয়েক জন আটক করা হয়েছে শহর জুড়ে। গ্রেফতার হয়েছেন ২৯৭ জন। বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৪৭.৪ লিটার মদ। হেলমেট ছাড়া বেপরোয়া গতিতে মোটরবাইক চালানোর জন্যও একাধিক কেস হয়েছে। বেশিক্ষণ কোথাও জটলা থাকলেই লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে গিয়েছে পুলিশ। এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘এ সবের মধ্যেও হুড খোলা গাড়ি, মোটরবাইকে ঝড়ের গতিতে পার্ক স্ট্রিটে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন একদল যুবক-যুবতী। কখনও একটা বাইকের পিছনে চার জন পুলিশ তাড়া করেছে কখনও বা চলন্ত বাইক থেকে চাবি টেনে খুলে নিয়েছে পুলিশ। মোটরবাইকের দৌরাত্ম্য অবশ্য তাতে ম্লান হয়নি তেমন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

New Year 2024 Alipore Zoo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE