এ যেন সিঙ্গুরেরই ছোটখাটো প্রতিফলন। সিঙ্গুরে চাষের জমিতে কারখানা গড়তে গিয়ে আন্দোলনের মুখে ফিরে যেতে হয়েছিল টাটা গোষ্ঠীকে। এ বার ‘চাষের জমি রক্ষার’ দাবিতে বিক্ষোভের জেরে বাধা পেল পুলিশ অ্যাকাডেমি গড়ার উদ্যোগ। তফাৎ শুধু একটাই। সিঙ্গুরে আন্দোলনের মুখ ছিলেন আজকের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর শুক্রবার স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধায় আটকে গেল হাওড়ার আড়ুপাড়ায় খোদ মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবিত পুলিশ অ্যাকাডেমি তৈরির কাজ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার রাতে আড়ুপাড়ায় প্রস্তাবিত পুলিশ অ্যাকাডেমির জন্য বরাদ্দ জমিতে মাটি ভরাট করতে আসে ২০-২৫টি ডাম্পার। খবর পেয়ে বাসিন্দারা ঝাঁটা, কাস্তে, লাঠি নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে ডাম্পারগুলি আটকে দেন। তাঁদের দাবি, ওই জমি সরকারের হলেও তাঁরা সেখানে তিরিশ বছর ধরে চাষ করছেন। তাই উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ না পেলে ওই জমিতে তাঁরা মাটি ফেলতে দেবেন না। বিক্ষোভ অবস্থান চলে শনিবার সকাল পর্যন্ত। অবশেষে ফিরে যায় ডাম্পারগুলি।
কয়েক বছর আগে হাওড়া পুরসভার ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের আড়ুপাড়ায় হাওড়া উন্নয়ন সংস্থার (এইচআইটি) মোট ৪৫ একর জমির মধ্যে ২৩ একরে ‘পুলিশ অ্যাকাডেমি’ তৈরির সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাজের বরাত পায় একটি বেসরকারি সংস্থা। জমি জরিপের পাশাপাশি এলাকায় নোটিস দেওয়া হয়। কলকাতা পুলিশের বোর্ডও লাগানো হয়। এরই মধ্যে ওই জমিতে যাঁরা এতদিন চাষ করছিলেন, তেমন ২০-২৫টি পরিবার আড়ুপাড়া ভূমি বাঁচাও কমিটি তৈরি করে আন্দোলন শুরু করে। বাসিন্দাদের দাবি, এলাকাটিতে আগে সমাজবিরোধীদের আড্ডা ছিল। বাসিন্দারাই জঙ্গল কেটে চাষাবাদ, পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন। গত তিরিশ বছর এ ভাবেই চলছিল।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাতে ওই সব পরিবারের লোকজনই রাস্তা অবরোধ করে ডাম্পারগুলিকে মাটি ফেলতে বাধা দেন। এ দিন বিক্ষোভকারীদের তরফে মৌসুমি প্রামাণিক বলেন, ‘‘চাষের জমি ভরাট করতে দেব না। মা-মাটি-মানুষের সরকার বিকল্প ব্যবস্থা না করলে খাব কী?’’ প্রদীপ দলুই নামে এক চাষীর প্রশ্ন, ‘‘এক দিকে রাজ্য সরকার যখন জলাজমি ভরাটের বিরোধিতা করছে, তখন নিজেই জলাজমি ভরাট করছে কী করে? আমরা বাধা দেবই।’’
কিন্তু সরকারি জমি দখল করে চাষাবাদ করা বাসিন্দারা কী এ ভাবে সরকারি কাজে বাধা দিতে পারেন?
হাওড়ার জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাস বলেন, ‘‘কিছুই জানি না। খোঁজ নিয়ে জানাব।’’ হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘বিষয়টি পুরসভা এলাকার মধ্যে হলেও কিছু জানি না। আমাদের এক্তিয়ারে পড়ে না।’’ হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ঘটনাটি জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হলে নিশ্চয়ই দেখব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy