Advertisement
১৬ মে ২০২৪
Sister Nivedita

Sister Nivedita: ছবিতে ঐতিহ্যের গল্প তুলে ধরবে নিবেদিতার বাড়ি

১৮৯৮ সালে কলকাতায় আসার পরে মে মাসে স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে দেশভ্রমণে বেরিয়েছিলেন নিবেদিতা।

রঙিন: ছবিতে সাজানো হচ্ছে ভগিনী নিবেদিতার বাড়ি। বৃহস্পতিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

রঙিন: ছবিতে সাজানো হচ্ছে ভগিনী নিবেদিতার বাড়ি। বৃহস্পতিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:২৪
Share: Save:

১৮৯৮ সালের ২৮ জানুয়ারির সকাল। ইংল্যান্ড থেকে কলকাতা বন্দরে এসে ভিড়েছিল জাহাজ ‘মোম্বাসা’। তা থেকে নেমে আসা মার্গারেট এলিজ়াবেথ নোবেলকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। আজ, শুক্রবার সেই দিন। ১২৪ বছর আগে এই দিনেই ভারতের মাটিতে প্রথম পা রেখেছিলেন ভগিনী নিবেদিতা।

আগামী বছর নিবেদিতার ভারতে আসার ১২৫তম বর্ষপূর্তি। সেই উপলক্ষে বাগবাজারের ১৭, বোসপাড়া লেনের যে বাড়িটিতে তিনি দীর্ঘদিন কাটিয়েছিলেন, সেটির দেওয়ালে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে বিভিন্ন ঘটনার ছবি। পথচলতি মানুষকে বাড়িটির ঐতিহ্য সম্পর্কে অবহিত করতে শ্রী সারদা মঠ ও রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের তরফে সেটির দেওয়ালে ছবিগুলি আঁকা হয়েছে। যেমন, সরস্বতী পুজোর আয়োজনে ব্যস্ত মেয়েরা। দূরে ঝুড়ি হাতে দাঁড়িয়ে নিবেদিতা। সেই ঝুড়িতে কিছু ফেলছে একটি মেয়ে।

১৮৯৮ সালে কলকাতায় আসার পরে মে মাসে স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে দেশভ্রমণে বেরিয়েছিলেন নিবেদিতা। কলকাতায় ফিরে মেয়েদের শিক্ষার প্রসারে ১৪ নভেম্বর থেকে ১৬, বোসপাড়া লেনের বাড়িতে বিদ্যালয়ের কাজ শুরু করেন তিনি। সেই প্রচেষ্টাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে ১৮৯৯ সালে পুনরায় বিদেশে পাড়ি দেন। ১৯০২-এর ফেব্রুয়ারিতে আবার ভারতে ফিরে ১৭ নম্বর বোসপাড়া লেনের বাড়িটি ভাড়া নেন। তার কিছু দিন পরেই ছিল সরস্বতী পুজো। পাড়ার ছোট মেয়েদের ও প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণ করে পুজোর আয়োজন করেন নিবেদিতা। ‘ম্লেচ্ছ মেমসাহেব’ হওয়ায় পুজোর কাজে তিনি যুক্ত না থাকলেও, ব্যবহৃত জিনিস যত্রতত্র ফেলে নোংরা না-করা এবং সেবাকাজে মেয়েদের অনুপ্রেরণা দিতে কিছুটা দূরে ঝুড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন নিবেদিতা।

সেই দিনের ছবিই ফুটে উঠেছে বোসপাড়া লেনের তেতলা বাড়ির দেওয়ালে। ওই বাড়িতেই এক দিন এসেছিলেন নন্দলাল বসু ও সুরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁরা সোফায় বসলেও নিবেদিতা এসে তাঁদের মেঝেতে আসন করে বসতে বলেছিলেন। তাতে প্রথমে খুব রাগ হয়েছিল বলে নিজের লেখায় উল্লেখ করে নন্দলাল এ-ও লিখেছেন, ‘আমাদের ভাব বুঝে সিস্টার বললেন, ‘তোমরা বুদ্ধের দেশের লোক। তোমাদের সোফায় বসা দেখতে আমার ভাল লাগে না। তোমরা এই যে ভাবে বসেছ, ঠিক বুদ্ধের মতো। ভারী ভাল লাগছে আমার দেখতে।’’ সেই দিনের সাক্ষাতের ছবি পরে এঁকেছিলেন নন্দলাল। সেই ছবিও আঁকা হয়েছে বাড়ির দেওয়ালে।

বোসপাড়া লেনের এই ১৭ নম্বর বাড়ি থেকে তাঁর কর্মপরিধি অনেক বাড়িয়েছিলেন নিবেদিতা। সারদাদেবী ছাড়াও স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জগদীশচন্দ্র বসু, গোখলে, ঋষি অরবিন্দ, দীনেশচন্দ্র সেন, র‌্যাটক্লিফ, রমেশচন্দ্র দত্ত-সহ বহু মানুষ এসেছেন সেখানে। তাঁদের ছবিও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নিবেদিতা বিদ্যালয়ের জন্য সরস্বতীর একটি ছবি এঁকেছিলেন নন্দলাল। সেই অনুকরণেই বাড়ির দেওয়ালে সরস্বতীর ছবি আঁকার পাশাপাশি ছোট মেয়েদের চোখে বিদ্যার দেবী কেমন ছিল, তা-ও ফুটিয়েছেন শিল্পী দেবনাথ রায়, শঙ্কর হালদার, ধীরাজ চক্রবর্তীরা।

১৭ নম্বরের এই বাড়িতে এক দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন নিবেদিতা। সেই স্বপ্নপূরণের প্রচেষ্টাতেই রয়েছে শ্রী সারদা মঠ ও রামকৃষ্ণ সারদা মিশন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sister Nivedita Swami Vivekananda Bagbazar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE