বড়দিনের রাত সাড়ে এগারোটায় এক বন্ধুকে মেসেজ পাঠিয়েছিলেন মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা এক স্কুলশিক্ষিকা। লিখেছিলেন, ‘‘পা়ড়ায় বিচিত্রানুষ্ঠান হচ্ছে। রাতের ঘুমের বারোটা বেজে গেল!’’ বাস্তবে হয়েছেও তাই। শব্দের উৎপাতে রাত দু’টো পর্যন্ত জেগে বসে থাকতে হয়েছে তাঁকে!
দুর্গাপুজো, কালীপুজোর পরে এ বার বর্ষবরণ। পাড়ায় পাড়ায় ফের শুরু হয়ে গিয়েছে জলসা। এ দিকে, আইন অনুযায়ী রাত দশটার পরে মাইক বাজানো নিষিদ্ধ। কিন্তু মধ্যমগ্রামের ওই স্কুলশিক্ষিকার অভিজ্ঞতা বলছে, পাড়ার জলসা বা উৎসবে সে সব আইনের তোয়াক্কাই করেন না উদ্যোক্তারা। বর্ষবরণের আবহে এই মাইকের উৎপাত আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছেন পরিবেশকর্মীরা। সঙ্গে জুড়বে শব্দবাজির তাণ্ডবও। এই পরিস্থিতিতে বর্ষশেষে শব্দের উৎপাতে লাগাম টানার আর্জি জানিয়ে পরিবেশমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছে পরিবেশকর্মীদের যৌথ সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’।
পরিবেশকর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছর ধরেই পাড়ায় পাড়ায় রাতভর বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের চল বাড়ছে। বিভিন্ন আবাসন, ফ্ল্যাটবাড়ির ছাদেও মাইক বাজিয়ে পার্টির চল হয়েছে। শীতের নিশুতি রাতে এই সব অনুষ্ঠানের আওয়াজ, বাজির শব্দে দূষণ বাড়ছে বলেও অভিযোগ পরিবেশকর্মীদের। শহরে শব্দদূষণ নিয়ে কর্মরত এক পরিবেশবিদের মন্তব্য, ‘‘মাইক্রোফোন, বাজি তো রয়েইছে। তার উপরে এখন জুটেছে ডিজে-র (পেল্লায় মাপের সাউন্ডবক্স) তাণ্ডব। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমশই হাতের বাইরে যাচ্ছে।’’
সবুজ মঞ্চ পরিবেশমন্ত্রীর কাছে যে সব দাবি জানিয়েছে, সেগুলি হল: বর্ষবরণের সময়ে প্রকাশ্যে ডিজে বাজিয়ে অনুষ্ঠান করা চলবে না। রাত দশটার পরে খোলা জায়গায় মাইক বাজিয়ে অনুষ্ঠান চলবে না। এমনকী, বিভিন্ন আবাসন এবং অনুষ্ঠান বাড়ির ছাদেও যেন রাত দশটার পরে মাইক না বাজানো হয়। এ ছাড়া, বর্ষবরণে শহরের বিভিন্ন ক্লাব নৈশপার্টির আয়োজন করে। তা কখনও কখনও ক্লাবের প্রেক্ষাগৃহ বা অন্দরমহল থেকে উঠোনেও চলে আসে। মাত্রাতিরিক্ত আওয়াজে আশপাশের এলাকার লোকজনের অসুবিধা হয়। গভীর রাতে এই সব অনুষ্ঠানেও যেন রাশ থাকে, সে দাবিই জানিয়েছেন পরিবেশকর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, মাইক বাজানোর ক্ষেত্রে পুলিশের অনুমতি বাধ্যতামূলক করা হোক। বর্তমানে পুলিশকে শুধু লিখিত ভাবে জানানো হয়। কোনও অনুমতির প্রয়োজন হয় না। দাবি উঠেছে মাইকে সাউন্ড লিমিটার বাধ্যতামূলক করারও।
বর্ষবরণে বাজি নিয়েও একই দাবি পরিবেশকর্মীদের। তাঁদের বক্তব্য, শব্দবাজি তো নিষিদ্ধ। রাত দশটার পরে নিয়মমাফিক কোনও বাজিই ফাটানো যায় না। সে দিকেও নজর দিক পরিবেশ দফতর। শব্দ আইন ভাঙলে পুলিশ যাতে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে ব্যবস্থা নেয়, পরিবেশমন্ত্রীর কাছে সেই দাবিও জানিয়েছে সবুজ মঞ্চ।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র জানান, দুর্গাপুজো বা দীপাবলির মতো বর্ষবরণের উৎসবেও নির্দিষ্ট শব্দমাত্রা এবং আইন মেনে অনুষ্ঠান করতে হবে। শব্দবাজি নিষিদ্ধ করা উচিত। সেগুলি ফাটালে পুলিশের উচিত ব্যবস্থা নেওয়া। পর্ষদ সূত্রে খবর, সোমবার এ নিয়ে ফের নির্দেশিকা জারি করা হতে পারে। পুলিশ-প্রশাসনের কাছে সেই নির্দেশিকা পৌঁছবে।
যদিও পরিবেশকর্মীদের অনেকেরই বক্তব্য, দীপাবলিতে শব্দবাজিতে লাগাম পরাতে পারেনি পুলিশ-প্রশাসন। বর্ষবরণে কী হবে, তার আঁচ মিলেছে বড়দিনেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy