Advertisement
১৯ মে ২০২৪

মমতার দাবি দলের কেউ নেই, মানেন না কর্মীরা

বিভিন্ন সময়ে দলের নানা অনুষ্ঠানে এলাকার নেতানেত্রীদের পাশে পাশেই থেকেছে তারা। ভোটের ‘কাজ’ই হোক বা কামদুনি ‘পুনর্দখল’— সব ব্যাপারে তারাই থেকেছে সবার আগে। এলাকার মানুষের কাছে কেউ যদি শাসক দলের বিধায়কের অনুগত বিসেবে পরিচিত, তো কারও পরিচয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে তাঁর প্রবল প্রতিপক্ষ সাংসদের ঘনিষ্ঠ হিসাবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৫ ০৩:৫৬
Share: Save:

বিভিন্ন সময়ে দলের নানা অনুষ্ঠানে এলাকার নেতানেত্রীদের পাশে পাশেই থেকেছে তারা। ভোটের ‘কাজ’ই হোক বা কামদুনি ‘পুনর্দখল’— সব ব্যাপারে তারাই থেকেছে সবার আগে। এলাকার মানুষের কাছে কেউ যদি শাসক দলের বিধায়কের অনুগত বিসেবে পরিচিত, তো কারও পরিচয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে তাঁর প্রবল প্রতিপক্ষ সাংসদের ঘনিষ্ঠ হিসাবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তথা শাসক দলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিনও দাবি করলেন, সিন্ডিকেটের সেই চাঁইরা তাঁর দলের কেউ নয়। রাজারহাট-নিউটাউনে তৃণমূলের কর্মীরা অবশ্য বলছেন, এলাকার মানুষ এ কথা বিশ্বাস করবেন না।

কী বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী?

শুক্রবার একটি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মমতা বলেন, ‘‘ক্ষমতায় যাঁরা থাকেন, তাঁদের নাম ভাঙিয়ে অনেকে এ কাজ করে। এরা দলের কেউ নয়।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘সিন্ডিকেটের নামে ব্যক্তিগত ভাবে কেউ কেউ পকেট ভরছে। আমি মনে করি, বাড়ি তৈরি করতে কার থেকে মালমশলা নেব, সেই স্বাধীনতা থাকা উচিত।’’ এর পাশাপাশি তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘দলের নাম করে কেউ সিন্ডিকেট রাজ করলে তা বরদাস্ত করা হবে না। আমি খুব কড়া!’’

মুখ্যমন্ত্রীর দায় এড়ানো দেখে তাই বিষ্মিত নিউটাউনে দলের কর্মীদেরই একাংশ। স্থানীয় এক নেতার প্রশ্ন, ‘‘ধরা পড়া সিন্ডিকেট চাঁই ভজাই সর্দারের ছেলে প্রসেনজিৎ আজও মহিষবাথান ২ নম্বর পঞ্চায়েতে দলের টিকিটে জিতে আসা প্রধান। বাবা-ছেলে দু’জনেই স্থানীয় তৃণমূলের দাপুটে নেতা। হায়দর-রুইসদের রাজনৈতিক পরিচিতি নিয়েও এলাকায় কারও ধন্দ নেই। এর পরও মুখ্যমন্ত্রী বললেই মানুষ বিশ্বাস করে নেবেন যে এরা দলের কেউ নয়?’’

সিন্ডিকেটের চাঁইদের রাতারাতি এ ভাবে নিজেদের ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলার এই চেষ্টা অবশ্য এ দিন নতুন প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য— এর আগেও মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সিন্ডিকেটের সঙ্গে দলের কেউ জড়িত থাকলে তিনি বরদাস্ত করবেন না। কিন্তু তার পরেও এলাকার বিধায়ক ও সাংসদের ঘনিষ্ঠরা সিন্ডিকেটের রমরমা কারবার চালিয়ে গিয়েছে। এই সব চাঁইদের বিরুদ্ধে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে বার বার অভিযোগ জানিয়েও ফল পাননি সাধারণ মানুষ। বস্তুত, পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে তাঁদের একাংশ নিজেদের অসহায়তার কথা জানিয়ে অভিযোগকারীকে মিটমিট করে নেওয়ার পরামর্শই দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কড়া মনোভাবের কোনও বাস্তব প্রতিফলন দেখতে পাননি সাধারণ মানুষ। বরং একের পর এক নির্বাচনে তৃণমূলের সক্রিয় নেতা হিসাবে নিজেদের আরও প্রতিষ্ঠিত করেছে ভজাই, হায়দর, রুইসেরা।

কেন মুখ্যমন্ত্রী রাতারাতি সিন্ডিকেট চাঁইদের ঘাড় থেকে নামিয়ে ফেলতে তৎপর হলেন?

তৃণমূলের একাংশের মতে, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ মাত্রাছাড়া হয়েছে বুঝতে পেরেই মুখ্যমন্ত্রী দায় এড়াতে চাইছেন। এর মধ্যেই তিনি সিন্ডিকেটের তিন চাঁইকে হাজতে পুরে সাধারণ মানুষকে বার্তা দিতে চেয়েছেন, দল এ সব বরদাস্ত করে না। এলাকার যে সব নেতা-নেত্রী এই সব চাঁইদের ‘গড ফাদার’ হয়ে বসেছেন, তাঁদের কাছেও আর সিন্ডিকেট নিয়ে বাড়াবাড়ি না-করার বার্তা তিনি এ ভাবে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন। আবার তৃণমূলের একটি মহলের বক্তব্য— এর পাশাপাশি এই সব চাঁইদের হাজতে পুরে তিনি আগামী দিনে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ দলের কোনও ‘যুবাপুরুষ’-এর হাতে তুলে দেওয়ার পথই পরিষ্কার করে রাখলেন।

মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তা প্রসঙ্গে কী বলছেন এলাকার সাংসদ-বিধায়ক? এ দিন রাতে বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘উনি আমাদের দলের নেত্রী। তিনি যা বলেছেন নিশ্চয় ভেবেচিন্তেই বলেছেন।’’

আর নিউটাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘উনি যা বলেছেন, তার উপরে আমার আর কী-ই বা বলার থাকতে পারে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE