Advertisement
২১ মে ২০২৪
Durga Puja Shopping

শেষ রবিবারে কালো মাথার ঢল, বন্ধ মণ্ডপেও ঢুকতে দেওয়ার দাবি

এ দিন উত্তর থেকে দক্ষিণে ঘুরে দেখা গেল, বাজার এলাকাগুলির মধ্যে সব চেয়ে বেশি ভিড় ধর্মতলায়। সিম পার্ক মলের কাছের রাস্তায় রীতিমতো দমবন্ধ করা পরিস্থিতি।

An image of overcrowd

জনজোয়ার: পুজোর কেনাকাটা করতে তিল ধারণের জায়গা নেই নিউ মার্কেট চত্বরে। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:২৪
Share: Save:

চার দিকে শুধু কালো কালো মাথা। একসঙ্গে যেন এগিয়ে আসছে! পুজোর আগে শেষ রবিবার নিউ মার্কেটের নতুন ভবনের তেতলায় দাঁড়িয়ে বাইরে তাকালেই চোখে পড়ে এমন দৃশ্য। শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার জন্য সকলে হাজির ধর্মতলায়। কিছু পরে নেমে মালুম হল, পরিস্থিতি এমন যে, পা ফেলার জায়গা নেই। হাঁটতে গেলেই ধাক্কা খেতে হচ্ছে।

এতটা না হলেও অনেকটা এক অবস্থা বহু পুজো মণ্ডপে। উদ্বোধন হোক বা না-হোক, আগত সকলেরই দাবি, ঠাকুর দেখতে দিতেই হবে। কেন মণ্ডপের গেট খুলে দেওয়া হচ্ছে না, তা নিয়ে মিনিটে মিনিটে ঝামেলা বাধছে দর্শনার্থীদের সঙ্গে পুজোকর্তাদের। মহালয়ার রাত থেকেই এমন ভিড় সামলাতে নাজেহাল উদ্যোক্তাদের অনেকেই এখন ভেবে পাচ্ছেন না, প্রতিপদে এই অবস্থা হলে চতুর্থী, পঞ্চমী থেকে শুরু হওয়া পুজোর আসল দিনগুলিতে ভিড় সামাল দেওয়া হবে কী ভাবে?

এ দিন উত্তর থেকে দক্ষিণে ঘুরে দেখা গেল, বাজার এলাকাগুলির মধ্যে সব চেয়ে বেশি ভিড় ধর্মতলায়। সিম পার্ক মলের কাছের রাস্তায় রীতিমতো দমবন্ধ করা পরিস্থিতি। তার মধ্যেই দাঁড়িয়ে চিৎকার করে চলেছেন এক হকার। নতুন ব্যাগ তুলে দেখানোর মাঝেই বলছেন, ‘‘এ বার করোনা ফ্রি পুজো, তাই দুটো কিনলে একটা ফ্রি।’’ পাশেই আর এক বিক্রেতা বললেন, ‘‘যে হারে লোক হয়েছে, তাতে বিনামূল্যে কিছু না দিলেও ব্যাপক ব্যবসা হবে। আজ মধ্যরাত পর্যন্ত বাজার থাকবে।’’

ওই পথেই দেখা গেল, কেনাকাটা সেরে বেরিয়ে আসার পথে তিতিবিরক্ত এক তরুণী। ব্যাপার কী জানতে চাইতেই ঝাঁঝিয়ে উঠে বললেন, ‘‘জুতো ছিঁড়ে গিয়েছে। শেষ রবিবার বলে এত ভিড় হবে ভাবতে পারিনি।’’ কিছু দূরেই সন্তান কোলে প্রচণ্ড ঠেলাঠেলির মধ্যে কোনও মতে এগিয়ে আসতে থাকা এক মহিলা বললেন, ‘‘ঢুকে পড়েছি, এখন বেরোনোর রাস্তা পাচ্ছি না। এই ভিড়ের মধ্যে কেনার চেয়ে পুজোয় নতুন কিছু না পরা ভাল।’’

গড়িয়াহাটে আবার দেখা গেল, মানুষের ঢল রাস্তায় নেমে আসায় সিগন্যালে দীর্ঘক্ষণ গাড়ি দাঁড়িয়ে। আটকে থাকা একটি ট্যাক্সির যাত্রী বললেন, ‘‘আধ ঘণ্টা সিগন্যালে দাঁড়িয়ে। এ ভাবে মানুষ রাস্তায় নেমে কেনাকাটা করছে, আর পুলিশ চুপ?’’ কাছেই থাকা ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীকে বিষয়টা বলতে তাঁর মন্তব্য, ‘‘হাজার হাজার মানুষ কেনাকাটা করছেন। সকাল থেকে আর পারছি না।’’

না পারার এই চিত্র হাতিবাগান চত্বরেও। ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের নামিয়েও সেখানকার সিগন্যালে যানজট রোখা যাচ্ছে না। এক সময়ে হাতিবাগান দিয়ে যাওয়া বাসও ঘুরিয়ে দিতে দেখা গেল! এক বিক্রেতার মন্তব্য, ‘‘পুজোর আগে শেষ রবিবার কোনও বারই এই রাস্তায় বাস চলতে পারে না। এ বার এত শেষে বাজার এমন জমল কেন, ভেবে পাচ্ছি না।’’

একই রকম ভেবে না পাওয়ার দৃশ্য মণ্ডপে মণ্ডপে। বালিগঞ্জ কালচারালের পুজোকর্তা অঞ্জন উকিল বললেন, ‘‘ইউনেস্কোর জন্য আমাদের মণ্ডপের তরফে কিছু পাস ছাপানো হয়েছে। শুধু ওই পাস থাকলেই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বিকেলে আলো জ্বলার সঙ্গে সঙ্গে যে হারে দর্শনার্থীরা হাজির হচ্ছেন, তাতে পেরে উঠছি না। ঠাকুর দেখতে দিতেই হবে বলে ঝগড়া বেধে যাচ্ছে।’’ একই দাবি একডালিয়া এভারগ্রিনের পুজোকর্তা স্বপন মহাপাত্রের। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এখনও উদ্বোধনই হয়নি। তার মধ্যেই কাতারে কাতারে লোক শুধু মণ্ডপ দেখতে আসছেন।’’ হিন্দুস্থান পার্কের পুজোকর্তা সুতপা দাস বললেন, ‘‘মাঝরাতে গাড়ি করে লোক আসছেন। সবিনয়ে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। আমাদের তো এখনও উদ্বোধনই হয়নি।’’

বেলেঘাটা ৩৩ পল্লির পুজোকর্তা পরিমল দে জানালেন, তাঁদের মণ্ডপেও মহালয়া থেকেই ঠাকুর দেখা শুরু হয়ে গিয়েছে। পরিমলের মতে, দুর্গাপুজো আর চার দিনে সীমাবদ্ধ নেই। বহু পুজো কমিটির কর্তারাই বলছেন, ‘‘মণ্ডপে ভিড় দেখলে বোঝার উপায় নেই যে আজ প্রতিপদ না সপ্তমীর সন্ধ্যা! দেখে মনে হচ্ছে, অন্য সব বারের দর্শনার্থী-ভিড়ের রেকর্ড ভেঙে যেতে চলেছে এ বছর।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja Shopping Durga Puja 2023 overcrowded
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE