Advertisement
১৮ মে ২০২৪
পাভলভ

উধাও খুনের দায়ে অভিযুক্ত মনোরোগী

পাভলভ মানসিক হাসপাতাল থেকে উধাও এক খুনে অভিযুক্ত। তা-ও যে সে অভিযুক্ত নয়! বন্দর এলাকার নাদিয়ালে নিজের হাতে বোনের মুণ্ড কেটে থানায় এসে জমা দেওয়া মেহতাব আলম মোল্লা।

এই সেই জানলা। —নিজস্ব চিত্র।

এই সেই জানলা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:০০
Share: Save:

পাভলভ মানসিক হাসপাতাল থেকে উধাও এক খুনে অভিযুক্ত। তা-ও যে সে অভিযুক্ত নয়! বন্দর এলাকার নাদিয়ালে নিজের হাতে বোনের মুণ্ড কেটে থানায় এসে জমা দেওয়া মেহতাব আলম মোল্লা। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের সন্দেহ, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকালের মধ্যে তিন তলার শৌচাগারের ছোট্ট জানলার গ্রিল ভেঙে পাশে রাজমিস্ত্রিদের লাগানো বাঁশের মাচা বেয়ে পালিয়েছে সে। শুক্রবার রাত পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি। যদিও হাসপাতালের একাংশের দাবি, গ্রিল আগে থেকেই ভাঙা ছিল।

সরকারি মানসিক হাসপাতাল থেকে এক জন খুনে অভিযুক্ত মানসিক রোগীর এ ভাবে পালিয়ে যাওয়া নিয়ে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। পুলিশ বলছে, নিরাপত্তায় ফাঁক রয়েছে। হাসপাতালের জানলা ভেঙে আগেও পালানোর চেষ্টা হয়েছে। এ ঘটনায় হাসপাতালের কেউ জড়িত বলে সন্দেহ পুলিশের। পাভলভের সুপার গণেশ প্রসাদের পাল্টা দাবি, ‘‘হাসপাতালে কোনও ফাঁকফোকর নেই। বন্দির নিরাপত্তার দায় পুলিশেরই।’’

২০১২ সালের ৭ ডিসেম্বর চমকে উঠেছিল নাদিয়াল। প্রকাশ্যে এক হাতে রক্তমাখা তরোয়াল এবং অন্য হাতে বোনের কাটা মুণ্ড নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল মেহতাব। সেই দৃশ্য মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করেছিলেন অনেকে। ওই ভাবে হাঁটতে হাঁটতেই সোজা নাদিয়াল থানায় গিয়ে হাজির হয়েছিল সে। পুলিশ সূত্রের দাবি, রক্তমাখা তরোয়াল ও কাটা মাথা নামিয়ে রেখে মেহতাব বলেছিল, ‘‘থোড়া পানি মিলেগা?’’ তার পরে সে পুলিশকে জানায়, বোন নিলোফার বেগমের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে আপত্তি ছিল তার। তাই সবক শেখাতে খুন করেছে সে। সেই ঘটনার পর থেকে জেলেই বন্দি ছিল মেহতাব। চলতি বছরের গোড়ায় তার কিছু মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। ২১ মার্চ আদালতের নির্দেশে পাভলভে ঠাঁই হয়েছিল তার। হাসপাতাল সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাতেও দেখা গিয়েছিল মেহতাবকে। এ দিন সকাল থেকে তার খোঁজ মেলেনি।

পুরুষ বিভাগে তিনতলায় থাকত মেহতাব। বাইরে তপসিয়া থানার তিন কর্মী পাহারায় থাকতেন। সম্প্রতি তিন তলার শৌচাগারে মেরামতির কাজ শুরু হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ওই জানলার গ্রিল আগে থেকে ভাঙা ছিল। সারাতে আসা মিস্ত্রিরাও তা স্বীকার করে নিয়েছেন। ওই ভাঙা জানলা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সাবধানও করা হয়েছিল। মানসিক রোগী হওয়ায় ওয়ার্ডে পুলিশকর্মীরা ঢুকতেন না বলে দাবি লালবাজারের। হাসপাতালের সুপার অবশ্য এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, নিরাপত্তার দায় পুলিশকেই নিতে হবে। হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীদেরও কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। সুপার বলেন, ‘‘জানলা ভাঙা ছিল না। আফতাব জানলা ভেঙে পালিয়েছে।’’

এ দিন পাভলভে গিয়ে দেখা যায়, জানলার পরে পাঁচিলের উপরে কাঁটাতারের জাল রয়েছে। তার পাশে রয়েছে পাঁচিলের সমান উচ্চতার একটি ঘর। তার ছাদ লাগোয়া পাঁচিলের কাঁটা তারের জাল ভাঙা। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, এই জায়গা দিয়ে অনেকেই পালানোর চেষ্টা করেন। যদিও সুপারের দাবি, ‘‘গোটা হাসপাতালে এমন কোনও জায়গা নেই। আপনারা অন্য জায়গার ছবি তুলে মিথ্যা প্রচার করছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

pavlov mental hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE