Advertisement
১৩ জুন ২০২৪
Kolkata Metro

বেসরকারি হাতে যেতে পারে মেট্রো, আশঙ্কা কর্মী মহলে

কলকাতা মেট্রোর সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ইস্ট-ওয়েস্টের পরিষেবা সংক্রান্ত একাধিক দায়িত্ব ভোটের পরেই বেসরকারি হাতে দেওয়ার কথা মেট্রোর কর্মী সংগঠনকে শুনিয়ে রাখা হয়েছে বলে খবর।

কলকাতা মেট্রো।

কলকাতা মেট্রো। —ফাইল চিত্র।

ফিরোজ ইসলাম 
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২৪ ০৮:০৮
Share: Save:

ঢাকঢোল পিটিয়ে একাধিক নতুন লাইনের উদ্বোধন হলেও কলকাতা মেট্রো যেন এক ‘নেই রাজ্য’। চাহিদা ও পরিকাঠামোর জোগানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ব্যবধান ক্রমেই মেট্রোয় বেসরকারিকরণের ছায়াকে দীর্ঘতর করছে বলে কর্মী মহলের আশঙ্কা। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর হাওড়া-এসপ্লানেড পথে ইতিমধ্যেই প্রায় ১০০ জন বেসরকারি সংস্থার কর্মীকে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাঁরা স্টেশনের ‘টিকেটিং জ়োনে’ কাজ করছেন। নিউ গড়িয়া-রুবি এবং জোকা-মাঝেরহাট মেট্রোপথেও একাধিক কাজে বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তারক্ষীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এর পরে টিকিট বিক্রি-সহ অন্যান্য ব্যবস্থাও বেসরকারি হাতে যেতে পারে বলে খবর।

কলকাতা মেট্রোর সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ইস্ট-ওয়েস্টের পরিষেবা সংক্রান্ত একাধিক দায়িত্ব ভোটের পরেই বেসরকারি হাতে দেওয়ার কথা মেট্রোর কর্মী সংগঠনকে শুনিয়ে রাখা হয়েছে বলে খবর। দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশনের মাধ্যমে ট্র্যাফিক ব্যবস্থার একাধিক দায়িত্ব ‘আউটসোর্স’ করা হতে পারে। এ কথা জানাজানি হতেই মেট্রোর কর্মী সংগঠনগুলি আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ‘মেন্স ইউনিয়ন’ এবং ‘মেন্স কংগ্রেস’ তাদের আপত্তি জানিয়েছে। রাজ্যের শাসকদলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত ‘মেট্রো রেলওয়ে প্রগতিশীল কর্মচারী ইউনিয়ন’ মদন মিত্রের নেতৃত্বে আন্দোলনে নামার ডাক দিয়েছে।

মেট্রো সূত্রের খবর, মেট্রোর সব ক’টি লাইন কর্মীসঙ্কটে ভুগছে। নতুন লাইন চালু হলেও মেট্রোয় একটিও নতুন পদের অনুমোদন মেলেনি। ট্রেন চালানোর জন্য মোটরম্যানের সঙ্কটও প্রবল। কর্মীরা অবসর নেওয়ার পরে সেই পদে কম সংখ্যায় লোক মিলছে। ফলে কাজের চাপ অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে।

রেলের অন্য জ়োন থেকে চালক চেয়ে দু’বার অভ্যন্তরীণ বিজ্ঞাপন দেওয়া হলেও সাড়া মেলেনি। ফলে চালকের সঙ্কটের জেরে জোকা-মাঝেরহাট ও নিউ গড়িয়া-রুবি মেট্রোর পরিষেবা সম্প্রসারণ প্রশ্নের মুখে। অরেঞ্জ লাইন বা নিউ গড়িয়া-রুবি মেট্রোপথে গার্ড বা কনডাক্টিং মোটরম্যান কেউ নেই। ওই জায়গায় নোয়াপাড়া কারশেড থেকে লোক নিয়ে গিয়ে, কিছু কর্মীকে টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে উন্নীত করে কাজ চালানোর পরিকল্পনা করেছেন কর্তৃপক্ষ। অথচ তাঁদের ট্রেন চালানো সংক্রান্ত কোনও অভিজ্ঞতা নেই। জরুরি কিছু বিষয়ের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের ওই কাজে নামানোর কথা ভেবেছেন কর্তৃপক্ষ। যাত্রী-সুরক্ষার দিক থেকে এই সিদ্ধান্ত ভয়াবহ বলে মনে করছেন অনেকে। যদিও মেট্রোর কর্তাদের একাংশের দাবি, উন্নত রেডিয়ো ফ্রিকোয়েন্সি-নির্ভর সিগন্যালিং ব্যবস্থায় চালকের ভূমিকা গৌণ হবে। এতে বিপদের কিছু নেই। কিন্তু এ ভাবে আপৎকালীন পরিস্থিতি কতটা সামলানো যাবে, সেই সংশয় থাকছেই।

কর্মী-সঙ্কট রয়েছে ট্র্যাফিক এবং রেলরক্ষী বিভাগেও। উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোয় প্ল্যাটফর্মে নিয়মিত রেলরক্ষীদের মোতায়েন করা যাচ্ছে না। মেট্রোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের বহু কাজ টাকার অভাবে করানো যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। মেট্রোর ‘মেন্স ইউনিয়ন’-এর নেতা শিশির মজুমদার বলেন, ‘‘পরিষেবার বেসরকারিকরণ করে মেট্রোকে রেল থেকে আলাদা করার চেষ্টা চলছে।’’ আগামী বুধবার এ নিয়ে ‘মেট্রো রেলওয়ে প্রগতিশীল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন’ ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। তবে আধিকারিকেরা এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE