কলকাতায় কৃষক সভার ডাকে সমাবেশ। —নিজস্ব চিত্র।
কৃষক আন্দোলনের জেরে পিছু হটতে হয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে। মোদী ‘অপরাজেয়’ নন, কৃষক আন্দোলনের এই শিক্ষাকে কাজে লাগিয়েই আগামী দিনে লড়াই চালানোর ডাক দেওয়া হল সিপিএমের কৃষক সভার সমাবেশ থেকে। সেই সঙ্গেই কৃষক আত্মহত্যা, ফসলের দান না পাওয়ার অভিযোগকে সামনে রেখে রাজ্যে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কথাও বললেন কৃষক নেতারা। সারা দেশের কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে এ রাজ্যে আগামী ২৬ নভেম্বর ডাক দেওয়া হয়েছে রাজভবন অভিযানের।
পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষক সভার ডাকে মঙ্গলবার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে সমাবেশে ভিড় হয়েছিল চোখে পড়ার মতো। উপস্থিত ছিলেন কৃষক সংগঠনের সর্বভারতীয় নেতৃত্ব। দু’টি দলে ভাগ হয়ে সোমবারই তাঁরা গিয়েছিলেন পূর্ব বর্ধমান ও পশ্চিম মেদিনীপুরে আত্মঘাতী কৃষক এবং নিহত গ্রামীণ মানুষের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে। সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত ভোটে প্রকৃত জনমত প্রতিফলিত না হওয়ার অভিযোগ তুলেই সমাবেশে কৃষক সভার সর্বভারতীয় সভাপতি এবং সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য অশোক ধওয়ালে বলেছেন, ‘‘আমরা বাংলার জেলায় জেলায় গিয়েছি। লাল ঝান্ডার কর্মীদের তৃণমূল খুন করেছে। তাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছি। তারা এত আক্রমণ সত্ত্বেও লাল ঝান্ডা ছাড়েননি। এ রাজ্যের মতো এত জঘন্য নির্বাচন দেশের কোথাও হয়নি। তার জবাব দিতে হবে!’’ বিজেপির পাশাপাশি রাজ্যে তৃণমূলকে পরাস্ত করার ডাক দিয়েছেন তিনি। সংগঠনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বিজু কৃষ্ণনের প্রশ্ন, ‘‘কৃষক আত্মঘাতী হলে বাংলার সরকার কেন ক্ষতিপূরণ দেবে না? কৃষি সঙ্কট মোকাবিলার বদলে কেন্দ্রের সরকার সাম্প্রদায়িক বিভেদ ছড়াচ্ছে। ত্রিশূল নিয়ে মিছিল করলে কি কৃষক আত্মহত্যা বন্ধ হবে?’’
দিল্লিতে কৃষক আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠক ছিলেন কৃষক সভার প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কৃষকেরা পারলে অন্যেরাও মোদীকে হারাতে পারবে। মোদী অপরাজেয়, এই মিথ ভেঙেছেন দেশের কৃষকেরা। তিন কৃষি আইন বাতিল করতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। কিন্তু তার পরে কোনও প্রতিশ্রুতি রাখেননি প্রধানমন্ত্রী!’’ পাশাপাশিই হান্নানের অভিযোগ, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকার কৃষক আত্মহত্যা আড়াল করতে পারিবারিক বিবাদের কথা বলে। জঘন্য মিথ্যা!’’
এ রাজ্যে কৃষকের আয় তিন গুণ বেড়েছে, এ কথা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে বলে দাবি করে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় অবশ্য পাল্টা বলেছেন, ‘‘সাত বছর ধরে দেশে যে কৃষি সম্মান চালু হয়েছে, তার ৬ বারই প্রথম হয়েছে এ রাজ্য। এটা গোপন করে সিপিএম রাজনীতি করছে। গোটা দেশের মধ্যে মাথা পিছু কৃষি ঋণ এ রাজ্যে অনেক কম। আমরা কৃষকের যে বিমা প্রকল্প চালু করেছি, তার ফলে আত্মহত্যার ঘটনা এখন মিথ্যা প্রচার ছাড়া কিছু নয়।’’ আর রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘কৃষক সভার আন্দোলন কতটা কৃষকের দুঃখ-দুর্দশার স্বার্থে আর কতটা রাজনৈতিক অবস্থানের স্বার্থে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। মোদী সরকার যে ভাবে কৃষক, শ্রমিক-সহ খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, অতীতে কোনও সরকার সেই কাজ করেনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy