কলকাতা ও হাওড়ার বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লক্ষ লক্ষ টাকা জমা পড়ার পরেই তা তুলে নেওয়া হত দু’ঘণ্টার মধ্যে। এর পরে পাকিস্তানের নম্বর থেকে হোয়াট্সঅ্যাপে আসা নির্দেশ মতো ভারতীয় টাকার ছেঁড়া অর্ধেক টুকরো নিয়ে কোনও ‘এজেন্ট’ এসে দেখালেই তাঁর হাতে তুলে দিতে হত সমস্ত টাকা। যে অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়েছিল, এক মাস পরে তা বন্ধ করে দিয়ে ফের অন্য ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলে এ ভাবেই চলত টাকা পাচার।
একটি ব্যাঙ্ক জালিয়াতির তদন্তে নেমে টাকা পাচার চক্রের এমনই দুই পাণ্ডা-সহ সাত প্রতারককে গ্রেফতার করেছে হাওড়া সিটি পুলিশ। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ৩০টি এটিএম কার্ড-সহ প্রায় সাত লক্ষ টাকা। কিন্তু ওই টাকা কারা পাঠাত, এর পিছনে কোনও হাওলা-চক্র আছে কি না বা ওই টাকা ঘুরপথে জঙ্গিদের কাছে যেত কি না, তা এখনও জানা যায়নি। তবে প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, এই চক্রের শিকড় রয়েছে অনেক গভীরে। কাদের, কোথাকার অ্যাকাউন্ট থেকে ওই টাকা পাঠানো হত, তা জানতে তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২০ নভেম্বর সালকিয়ার একটি ব্যাঙ্কের শাখা থেকে অভিযোগে জানানো হয়, তাঁদের গয়া শাখার এক গ্রাহকের চেক জাল করে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা তুলে নিয়েছে হাওড়ার এক গ্রাহক। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথমে সালকিয়ার বাসিন্দা অনীশকুমার ঠাকুর নামে ওই গ্রাহককে গ্রেফতার করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই যেন কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়ে। সন্ধান মেলে একটি বড়সড় চক্রের। গ্রেফতার করা হয় ওই চক্রের অন্যতম মাথা রঞ্জন যাদবকে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গ্রেফতার করা হয় জুনেদ আলম ওরফে রিঙ্কু নামে আর এক মাথাকে। রিঙ্কুর কাছ থেকেই উদ্ধার হয় ৩০টি এটিএম কার্ড ও আটটি মোবাইল ফোন। পুলিশ জানায়, ওই সমস্ত মোবাইলের হোয়াট্সঅ্যাপে আসা নির্দেশ থেকেই মেলে পাকিস্তানি যোগাযোগের সূত্র। তার পরেই উদ্ধার করা হয় প্রায় সাত লক্ষ টাকা।
পুলিশ জানায়, বিহারের সিওয়ানের বাসিন্দা রঞ্জন ও রিঙ্কু মিলেই বিভিন্ন ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য মাসে ১০ হাজার টাকা বেতনে বেকার যুবকদের নিয়োগ করত। তাদের কাজ ছিল, যে সব ব্যাঙ্কে তারা অ্যাকাউন্ট খুলেছিল, এক মাস পরে সেগুলি বন্ধ করে ফের অন্য ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলা। তদন্তে নেমে এমনই পাঁচ যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
হাওড়া সিটি পুলিশের ডি সি (নর্থ) অমিতকুমার রাঠৌর বলেন, ‘‘এই ঘটনার পিছনে আরও লোকজন জড়িত রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ঠিক কী উদ্দেশ্যে এত টাকার গোপন লেনদেন হয়েছে, তা এখনও পরিষ্কার হয়নি। তদন্ত চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy