কালীপুজোয় বাবার কাছে এলইডি লাইট চেয়েছিল বছর বারোর অর্কপ্রভ। তার স্কুলের বন্ধু অর্ঘ্য তার বাবার সঙ্গে গিয়ে সুন্দর এলইডি লাইট চেন কিনে এনেছে কয়েকদিন আগেই। কিন্তু অর্কপ্রভর বাবা চাইছিলেন প্রদীপই কিনবেন। শেষপর্যন্ত বাবার জোরাজুরিতেই অর্ক বাবার সঙ্গে এসে হাজির হল কুমারটুলিতে। পরপর বিভিন্ন দোকানে সারি সারি প্রদীপের বাহার দেখে থ’ সে নিজেই। শেষমেশ সাড়ে বারোশো টাকায় বিভিন্ন রকমের প্রদীপ কিনে বাবার সঙ্গে বাড়ি ফিরল সে।
লক্ষ্মীপুজো মিটতেই প্রতি বছরই আতসবাজির সঙ্গে দীপাবলীতে হিড়িক পড়ে এলইডি আলো কেনার। প্রতি বছরের মত এ বছরেও চাঁদনি চক মার্কেটে পসরা সাজিয়ে বসেছেন এলইডি লাইট বিক্রেতারা। পাওয়া যাচ্ছে হরেক রকমের বিভিন্ন রকম টুনি বাল্ব ছাড়াও ৫ থেকে ২৫ মিটারের এলইডি লাইট চেন, ডিস্কো লাইট, ফ্লাশ বাল্ব, ইউএফও, পদ্মফুলের আলো। রয়েছে এলইডি আলোয় প্রদীপ, মোমবাতি। বাজারে নতুন বিক্রি হচ্ছে চিনা উইন্ডচ্যাম্পের আদলে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড পটকা লাইটও। বিদ্যুৎ সংযোগে আলো জ্বলার সঙ্গে সঙ্গে পটকা ফাটার মত আওয়াজ হবে এই আলোয়। নতুন ধরনের এই আলো মানুষ ভিড় করে কিনছেনও।
চাঁদনি চকের বাজারে যখন সাধারণ মানুষ এলইডি আলো কিনতে ভিড় করছেন, তখন পিছিয়ে নেই কুমোরটুলিতে প্রদীপ বা জানবাজারে মোমবাতি বিক্রেতারাও। পুরনো দিনের আনকোরা মাটির প্রদীপ ছেড়ে সব বিক্রেতারাই ঝুঁকছেন টেরাকোটার কাজ করা ফ্যান্সি প্রদীপের দিকে। দামও এলইডি-র তুলনায় অনেক কম। কুমারটুলির প্রদীপ বিক্রেতা সুবীর পাল, কল্পনা পালরা জানান, চায়না লাইট বাজারে আসার পর প্রথম দিকে প্রদীপের ব্যবসা মার খেয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তার পরে গত কয়েক বছরে প্রদীপের নকশায় আমূল পরিবর্তন এনে লাভের পরিমাণ বেড়েছে অনেকটাই। এ বছরও আনা হয়েছে বিভিন্ন নতুন ধরনের প্রদীপ। এ বছর বাজারে নতুন এসেছে শঙ্খ প্রদীপ, উট বা হাতির পিঠে নকশা করা প্রদীপ। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন প্লেটে নকশা প্রদীপ, হ্যারিকেন বা বিভিন্ন কাঠামোয় কেটে তৈরি করা প্রদীপ।
মুক্তো বসানো বা বিভিন্ন চিকনের কাজ করা ভাসমান মোমবাতি দানিও প্রদীপের পাশাপাশি হুড়মুড়িয়ে বিকোচ্ছে বিভিন্ন দোকানে। জানবাজারে বিকোচ্ছে কম ধোঁয়ার বিভিন্ন রকমের ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের, রঙের এবং আলাদা আলাদা নকশার মোমবাতিও। রয়েছে চীনা ডিজাইনার বিভিন্ন সুগন্ধী মোমবাতি। যা আলোর সঙ্গে সুগন্ধে ভরিয়ে দেবে ক্রেতার মনকেও। উত্তর ২৪ পরগনার নিমতার এক মোমবাতি কারখানার মালিক গৌতম দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘মোমবাতি বিক্রি বছরে এখন খুবই কম। কিন্তু দীপাবলিতে দম ফেলার ফুরসত থাকে না।’’
কিন্তু প্রতি বছর যেখানে এলইডি আলোতে প্রদীপ, মোমবাতি-সহ বিভিন্ন ডিজাইনার লাইট ঢেলে বিক্রি হচ্ছে, সেখানে প্রদীপ বা মোমবাতি কেন কিনবেন ক্রেতারা? জানবাজারের এক বিক্রেতার কথায়, এলইডি আলো বাজারে নতুন নকশা আনতেই পারে, কিন্তু প্রদীপ বা মোমবাতির দাম যেমন ভীষণ কম, ঠিক তেমনই তা পরিবেশে পুনর্ব্যবহারযোগ্য। অনেকে ক্ষেত্রেই ক্রেতারা এলইডি আলোর অল্পে খারাপ হয়ে যাওয়া এবং তা সারাতে না পারার অভিযোগ তোলেন। সে ক্ষেত্রে প্রদীপ বা মোমবাতিতে সেই অসুবিধা নেই বললেই হয়। একই সঙ্গে কম দামে পরিমাণে অনেক হওয়ায় বাঙালি থেকে অবাঙালি অনেকেই পছন্দ করেন। কিন্তু প্রদীপ বা মোমবাতি উল্টে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও অনেক ক্ষেত্রে রয়ে যায়? ‘‘ঠিক জায়গায় রেখে সতর্ক রাখলে সে সম্ভাবনা অনেকটাই কম’’-মন্তব্য ওই মোমবাতি বিক্রেতার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy