আধুনিক আলোক ব্যবস্থা না কি স্থানীয় ঠিকাদারদের স্বার্থ সুরক্ষা? এই দ্বন্দ্বে আটকে আছে বিধাননগরকে এলইডি আলোয় মুড়ে ফেলার ‘আলো আমার আলো’ প্রকল্প।
‘আলো আমার আলো’ প্রকল্পে বিধাননগরকে এলইডি আলোয় মুড়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিধাননগর পুর নিগম। পুর নিগমের দাবি, এতে বিদ্যুতের খরচ কমবে। পাশাপাশি দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাই রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বহন করায় পুর নিগমের সঞ্চয় হবে। কিন্তু অভিযোগ, পুরকর্তাদের একাংশ এই প্রকল্পে স্থানীয় ঠিকাদারদের কাজ দেওয়ার দাবি তুলেছেন। ফলে এই প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ঠিক হয়েছে কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠকে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিধাননগর পুরকর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, ভুবনেশ্বর, জামনগর, গাঁধীনগর এবং দুর্গাপুরের মতো বিধাননগর জুড়ে এলইডি আলো লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পুর নিগমের দাবি, শুধু এলইডি লাগানোই নয়, আলোক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে তৈরি হবে একটি কন্ট্রোল ইউনিট। কোথাও আলোর সমস্যা হলে কয়েক সেকেন্ডেই তা কন্ট্রোল ইউনিটে ধরা পড়বে। ফলে দ্রুত সেই সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।
কিন্তু এই প্রকল্পের অভিনবত্ব আয়-ব্য য়ের পরিকল্পনায়। প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাকেই রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিতে হবে। ফলে রক্ষণাবেক্ষণের পুরো খরচটাই সঞ্চয় হবে পুর নিগমের। পুর নিগমের দাবি, বর্তমান আলোক ব্যবস্থায় বছরে পুরসভার ১৮ কোটি টাকা খরচ হয়। এলইডি লাগানোর ফলে সেই খরচ আনুমানিক আট কোটি টাকা কমবে। পাশাপাশি আলোর রক্ষণাবেক্ষণে পুর নিগমের বছরে প্রায় ছ’কোটি টাকা খরচ হয়। এই প্রকল্পে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনও খরচ বহন করবে না পুর নিগম। ফলে সব মিলিয়ে বছরে ১৪ কোটি টাকা বাঁচবে বলে দাবি পুর নিগমের।
পুর নিগম সূত্রে খবর, ঠিক ছিল পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি করা হবে। এ নিয়ে দরপত্রও ডাকা হয়ে গিয়েছে। তাতে বেশ কয়েকটি সংস্থা অংশ নেয়। যে সংস্থা সর্বনিম্ন দর দিয়েছে, তার সঙ্গে পুর নিগম আলোচনাও শুরু করে।
সূত্রের খবর, কিন্তু এই প্রকল্পে স্থানীয় ঠিকাদারদের কাজ দিতে হবে বলে কয়েক জন মেয়র পারিষদ দাবি তোলেন। এর পরে সংস্থাটি পুর নিগমকে চিঠি পাঠায়। সূত্রের দাবি, স্থানীয় ঠিকাদারদের কাজ দিতে হলে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তারা নিতে পারবে না বলে সংস্থাটি জানিয়েছে। এমনকী স্থানীয় ঠিকাদারদের কাজে লাগালে পুর নিগমকে প্রতি মাসে বাড়তি আনুমানিক ২০ লক্ষ টাকা দিতে হবে বলেও সংস্থাটি দাবি করেছে। এর ফলে উল্টে আলোর পিছনে পুর নিগমের খরচ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যটিই পূরণ হবে না।
সূত্রের খবর, পুর-কর্তাদের একাংশের দাবি নিয়ে পুর নিগমের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। এক পুরকর্তা জানান, এই ধরনের প্রযুক্তি নির্ভর প্রকল্পে বিনিয়োগকারী কেন স্থানীয় ঠিকাদারদের কাজ দিতে যাবে। স্থানীয় ঠিকাদারদের কাজ দিতে গেলে যে অতিরিক্তি অর্থব্যয় হবে তাতে প্রকল্পটি নিয়ে এগনোর কোনও মানে হয় না। এ নিয়ে শাসক দলের অভ্যন্তরেই ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
তা হলে এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কী? বিধাননগর পুর নিগমের মেয়র পারিষদ (আলো) সুধীর সাহার কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে মেয়র সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘আলো নিয়ে আধুনিক পরিকল্পনা কার্যকরী হবে না কি স্থানীয় ঠিকাদারদের স্বার্থ সুরক্ষায় বেশি নজর দেওয়া হবে তা কাউন্সিলররা ঠিক করবেন। কাউন্সিলরদের বৈঠকে প্রকল্প নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy