Advertisement
১৭ মে ২০২৪
sweet shop

Haji Allauddin Sweets: নয়া ঠিকানায় নিশান ওড়াতে প্রস্তুতি হাজি আলাউদ্দিনে

বছরভর চন্দ্রপুলি, মনোহরা, পান্তুয়া, মিহিদানায় মজে থাকা বঙ্গজীবনের এ আর এক ঐতিহ্য।

রিপন স্ট্রিটে হাজি আলাউদ্দিনের নতুন দোকান। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

রিপন স্ট্রিটে হাজি আলাউদ্দিনের নতুন দোকান। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২১ ০৬:৪৫
Share: Save:

ফজরের নমাজের ব্রাহ্ম মুহূর্তেরও আগে তখন অন্ধকারে মিশে গলিটা। কলুটোলার সেই চেনা ঠিকানার সামনে গা ছমছম করে। অনেকেই দেখেছেন, হাজি আলাউদ্দিনের শাটার খুলে বেরিয়ে আঁধারে মিলিয়ে যাচ্ছে সাদা জোব্বাধারী কোনও অবয়ব! এলাকার লোকবিশ্বাস, রাত্তিরে জিনরাও আলাউদ্দিনে মিষ্টি খেতে ঢোকেন।

ইদের আগে এখনও এ শহরের হাওয়ায় ভাসে এ সব কিসসা। রমজানি ইদের আগের চাঁদ-রাতে শতাব্দীপ্রাচীন মিষ্টি বিপণি খোলাই থাকে রাতভর। ইদুজ্জোহাতেও আলাউদ্দিনের মিষ্টি, হালুয়া বিনা ইদ, ইদ বলে মনেই হয় না! প্রতিষ্ঠানের বর্তমান প্রজন্ম ইজাজ আহমেদ হাসেন, “সিউড়ি, বর্ধমান, দিনাজপুর থেকে কত লোকে এসে বলেছে, সেখানে আমাদের নাম দিয়ে দোকান খুলে কারা ব্যবসা ফেঁদেছে। আমাদের কাছ থেকে কয়েকশো কেজির খাজলা, লাচ্চা কিনে বিক্রি করছে, দোকানে আমাদের নাম বসিয়েই।”

বছরভর চন্দ্রপুলি, মনোহরা, পান্তুয়া, মিহিদানায় মজে থাকা বঙ্গজীবনের এ আর এক ঐতিহ্য। বয়সেও নিউ মার্কেটের নাহুমের সমবয়সি, ছ’কুড়ি ছুঁইছুঁই আলাউদ্দিন। কয়েক বছর হল, বড়দিনের নাহুমের মতোই ইদের আগের কলুটোলা, জাকারিয়াও ভিড়ে পাল্লা দিচ্ছে। তবু এখনও অনেকেই তা শহরের মূল স্রোত বলে মানতে নারাজ। আলাউদ্দিনের কর্তারা কিন্তু জোর গলায় বলবেন, ‘চেখে দেখুন আমাদের রসগোল্লা, মিষ্টি দই, ম্যাঙ্গো কালাকাঁদ বা ছানার রোল! কারও থেকে কম যাবে না!’

৪০ ছুঁইছুঁই ইজাজ বা তাঁর থেকেও অনেকটা ছোট বিলেত-ফেরত খুড়তুতো ভাই হামজ আহমেদের প্রপিতামহ হাজি আলাউদ্দিনের আমলে দোকানের লক্ষ্য ছিল, উত্তর ভারতের প্রবাসীদের বাজারটা ধরা! পুরি-ভাজি, গুলাবজামুন, উমদা মুসকাট হালুয়া, করাচি হালুয়া বা সারা দেশে আজও অদ্বিতীয় আলাউদ্দিন সাহেবের সিলমোহর বাত্তিসি হালুয়াই তখন দোকানের সর্বস্ব। ঠাকুরদা নাসিরুদ্দিন স্বাধীনতার আগেই মেনুতে বালুশাহি, ফিউশন মহীশূরপাক যোগ করেন। ইজাজদের প্রজন্মের কিন্তু লক্ষ্য অন্য! ভারতের নানা প্রান্তের মিষ্টি, ইফতার স্পেশাল মাংসের শিঙাড়া, বাঙালি ক্ষীরকান্তি বা চন্দ্রকলার তুতো ভাই ‘মাওয়া কা কচৌরি’, অনবদ্য ঘিয়ে ভাজা অমৃতি তো আছেই! বাংলার মিষ্টির হকও তাঁরা ছাড়তে নারাজ।

বিশ শতকের গোড়ায় লখনউয়ের কাছের গোলা গোকর্ণনাথ শহর থেকে কলকাতায় আসে এই পরিবার। ইজাজ বলেন, “গোটা কলকাতাতেই ছড়িয়ে পড়তে চাইছি।’’ অতিমারিতে শহরের অন্যতম উলটপুরাণ, বেকবাগান, রিপন স্ট্রিট, খিদিরপুর, মেটিয়াবুরুজে আলাউদ্দিনের নতুন শাখা। তপসিয়ায় ঝকঝকে কারখানা। মেশিনে নিরন্তর জন্ম নিচ্ছে গুলাবজামুনের গুল্লি। ম্যানেজার সোমনাথ বিশ্বাস তপসিয়ায় কোম্পানির ফ্ল্যাটে সপরিবার থাকেন। পুরনো কারিগর মধুবনীর মুর্তাজা, লখনউয়ের আসলাম, মুকুটমণিপুরের উত্তম সাহুদের সঙ্গে এখন যোগ দিয়েছেন মেদিনীপুরের পিন্টু নায়েক বা বাপি সাহু। ইজাজ বলেন, “ঠাকুরদাকে দেখেছি, এক বার ব্যবসার খুব খারাপ সময়ে দোকানে মার্বেল বসাচ্ছেন। আমরাও ভাবলাম, করোনার দুঃসময়ে ব্যবসা বাড়ানোর প্ল্যান বন্ধ রাখব না!’’

ঘিয়ের আইটেমের মানেও আপস হয়নি। যদিও ভাজার এমন কায়দা, ক্ষীরের কচুরি-টচুরি খেলেও মুখ মেরে যায় না। একটু সস্তায় কলুটোলাতেই ডালডাজাত নোনতা, মিষ্টির ঠেক নাসিরুদ্দিনও খুলেছেন ইজাজেরা। তাতে বিকেলে চিকেন শিঙাড়া মেলে।

মিষ্টির দোকানের তরুণতর প্রজন্ম পড়াশোনা শিখে এখন বাপ-দাদার ব্যবসায় থাকতে চায় না। এখানেও আলাউদ্দিনে উলটপুরাণ। লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্সের স্নাতক হামজ বা কমার্সের ছাত্র ইজাজেরা ব্যতিক্রম। তাঁদের পরিকল্পনা, এক বছরের মধ্যে গড়িয়াহাট, কসবা বা রাসবিহারীর মোড়ের মতো ঠিকানায় ডানা মেলা। কয়েকটি শপিং মলের মিষ্টি উৎসবে নকুড়, ফেলু মোদকদের পাশে মাঠে নেমে জল মাপাও হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতিটি পার্বণেই নতুন করে নিজেদের আবিষ্কার করছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Zakaria Street sweet shop Haji Allauddin Sweets
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE