Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
শহর জুড়ে ডেঙ্গির বলি বাড়ছে লাফিয়ে, তবু হুঁশ ফিরছে না প্রশাসনের
Dengue

ডেঙ্গিতে গর্ভে মৃত সন্তান, কোমায় মা

ডেঙ্গি মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী কাউন্সিলরদের আরও বেশি করে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিলেও ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডের ওই কাউন্সিলরের ভূমিকায় স্থানীয়েরাও প্রবল ক্ষুব্ধ। তাঁদের অভিযোগ, এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও কাউন্সিলরকে দেখা যাচ্ছে না।

জেসমিতা হালদার

জেসমিতা হালদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৭ ০২:২২
Share: Save:

বিয়ের এক বছর হতে এখনও কিছু দিন বাকি। মা হতে চলেছিলেন উল্টোডাঙার বাসিন্দা জেসমিতা হালদার। ডেঙ্গির আক্রমণে ক’দিনের মধ্যেই গোটা পরিবারের স্বপ্ন চুরমার!

বাপের বাড়ি কসবার হালতু এলাকায়। কালীপুজোর আগে সেখানে গিয়েছিলেন জেসমিতা। তার পরেই আক্রান্ত হন ডেঙ্গিতে। অন্তঃসত্ত্বা ওই বধূকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরে গত সপ্তাহেই মৃত সন্তান প্রসব করেন তিনি। তার দিন সাতেকের মধ্যে অবস্থার আরও অবনতি ঘটে এখন পুরোপুরি কোমায় চলে গিয়েছেন জেসমিতা।

আরও পড়ুন: মশা মারতে অচল ব্লিচিংই অস্ত্র মেয়রের

অথচ, এত কাণ্ডের পরেও স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর পুরোপুরি নির্বিকার। ত্রুটি স্বীকার তো দূরস্থান, তিনি বরং প্রশ্ন তুলেছেন মশার ভৌগোলিক পরিচিতি নিয়ে। তাঁর দাবি, কসবার নয়, জেসমিতাকে কামড়েছিল উল্টোডাঙার মশা!

জেসমিতার স্বামী অমিত সাহা বলেন, ‘‘গত ২৪ অক্টোবর সকালে আমার স্ত্রীর জ্বর শুরু হয়। সে দিনই ওকে দক্ষিণ কলকাতার এক হাসপাতালে ভর্তি করি। পরের দিন রাতে চিকিৎসকেরা জানান, জেসমিতার ডেঙ্গি হয়েছে।’’ অমিতবাবু জানিয়েছেন, জ্বরের সঙ্গে জেসমিতার শিরদাঁড়ায় খুব ব্যথা ছিল। ২৬ অক্টোবর তাঁর রক্তে প্লেটলেটের পরিমাণ ছিল দেড় লক্ষ। পরের দিনই তা কমে দাঁড়ায় তিরিশ হাজার। জেসমিতার পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, ২৯ অক্টোবর সকালে ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর গর্ভস্থ শিশুটির কোনও হৃৎস্পন্দন পাওয়া যাচ্ছে না। এ কথা শোনার পরে সে দিনই জেসমিতাকে ই এম বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ২৯ তারিখ জেসমিতাকে আইসিইউ-তে ভর্তি করা হয়। তার দু’দিন পরে, অর্থাৎ ৩১ অক্টোবর জেসমিতার স্বাভাবিক প্রসব হয়। কিন্তু দেখা যায়, শিশুটি মৃত। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গত রবিবার জেসমিতার মস্তিষ্কের সিটি স্ক্যান ও এমআরআই করা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, ডেঙ্গির কারণে তাঁর মস্তিষ্কের একাধিক অংশ ক্ষতিগ্রস্ত।

গত বছরের ৯ ডিসেম্বরে বিয়ে হয়েছিল জেসমিতা ও অমিতের। বিয়ের এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর এমন অবস্থার জন্য কলকাতা পুরসভা তথা প্রশাসনকেই দায়ী করছেন জেসমিতার স্বামী। পেশায় বেসরকারি সংস্থার কর্মী অমিতবাবুর অভিযোগ, ‘‘কলকাতা পুরসভার ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত কসবার হালতু এলাকায় ২২ নম্বর লালবাহাদুর শাস্ত্রী রোডে আমার স্ত্রীর বাপের বাড়ি। শুধু ওই বাড়িতেই কালীপুজোর পর থেকে চার জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। বাড়ির সামনেই জঞ্জাল জমে থাকে। নিয়মিত সাফাই হয় না। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীদেরও কখনও সেখানে দেখা যায় না।’’ অমিতবাবুর সাফ কথা, ‘‘ডেঙ্গি নিয়ে প্রশাসন তথা সরকার তথ্য লুকোচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমার বিনীত আবেদন, ডেঙ্গি নির্মূলে সরকার যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কাজ করুক।’’

নানা মুহূর্তে অমিত ও জেসমিতা। ছবি পারিবারিক সূত্রে পাওয়া।

অমিতবাবুর অভিযোগ শুনে অনেকটা সাফাইয়ের সুরে এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর মধুমিতা চক্রবর্তীর জবাব, ‘‘কেবল ২২ নম্বর লালবাহাদুর শাস্ত্রী রোডই নয়, প্রতিটি ওয়ার্ডেই ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে। গোটা রাজ্যেই ডেঙ্গি হচ্ছে। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ওই মহিলা উল্টোডাঙায় থাকতেন। তাঁকে ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডের মশা কামড়ায়নি।’’

ডেঙ্গি মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী কাউন্সিলরদের আরও বেশি করে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিলেও ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডের ওই কাউন্সিলরের ভূমিকায় স্থানীয়েরাও প্রবল ক্ষুব্ধ। তাঁদের অভিযোগ, এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও কাউন্সিলরকে দেখা যাচ্ছে না। অভিযোগ অস্বীকার করে কাউন্সিলর বলেন, ‘‘আমি গোটা ওয়ার্ডেই ঘুরে বে়ড়াই। মশা ঠেকানোর জন্য নিয়মিত অভিযানও চলছে। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE