শহর জুড়ে আন্ত্রিকের দাপট কমার কোনও লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। রবিবার রাতেও বেলেঘাটা আই ডি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে এক বৃদ্ধের। অনিল দে (৮৫) নামে বাগুইআটির ওই বাসিন্দা তিন দিন ধরে ভুগছিলেন। এ নিয়ে এই মরসুমে আন্ত্রিকে মৃত্যু হল মোট তিন জনের।
সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আই ডি হাসপাতালে ভর্তি আন্ত্রিকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২৭৮। অন্য সরকারি হাসপাতালগুলিতে পরিস্থিতি এমন যে এক শয্যায় রাখতে হচ্ছে দু’-তিন জনকে। ওয়ার্ডে বাড়তি শয্যা রাখতে হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালেও বাড়ছে আন্ত্রিকের রোগীর সংখ্যা।
তবে এত কিছুর পরেও কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ সোমবার বলেন, ‘‘কলেরা বা আন্ত্রিক যা-ই বলুন, কলকাতার বাসিন্দাদের তা হয়নি। হয়েছে সাধারণ ডায়েরিয়া।’’ তিনি জানান, এখনও পর্যন্ত ১২৩ জনের ডায়েরিয়া হয়েছে, যাঁরা দু’এক দিনে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। পুরসভা যে সব এলাকার জলের নমুনা পরীক্ষা করেছিল, তার রিপোর্ট আজ, মঙ্গলবার মিলবে বলে জানান তিনি।
এ দিকে, কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী জেলার কলেরা পরিস্থিতিতে নজরদারি, মলের নমুনা পরীক্ষা তথা গবেষণা চালানো যাঁদের কাজ, সেই ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টারিক ডিজিজেজ (নাইসেড) ও কেন্দ্রীয় বায়োটেকনোলজি বিভাগের বেশ ক’জন গবেষকও পেটের গোলমাল, বমি নিয়ে শয্যাশায়ী। এঁদের মধ্যে রয়েছেন খোদ নাইসেড-এর অধিকর্তা শান্তা দত্ত-ও।
শান্তাদেবীর বাড়ি বেলেঘাটা এলাকায়, যেখান থেকে কলেরার মতো উপসর্গ নিয়ে আই ডি-তে ভর্তি হন বহু রোগী। সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে এই অঞ্চলের অনেকটা অংশেই পানীয় জলের কল ও পাইপ জলে ডুবে ছিল। তার থেকে পানীয় জলে মল ও দূষিত জিনিস মিশে ডায়েরিয়া, বিশেষত কলেরা (এ-ও এক ধরনের ডায়েরিয়া যা ‘ভিব্রিও কলেরি’ জীবাণু থেকে ছড়ায়) হতে পারে। একই উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ নাইসেডের ডেপুটি ডিরেক্টর ব্যোমকেশ মান্না, সিনিয়ার রিসার্চ অফিসার সুমন কানুনগো ও ভারত সরকারের বায়োটেকনোলজি বিভাগের উপদেষ্টা দীপিকা সুরও।
এ দিকে, হাওড়া পুরসভার ভট্টনগর ও চকপাড়ায় জল নামতেই রোগ ছড়িয়েছে। সত্যবালা আই ডি-তে রোজ গড়ে ৪০-৪৫ জন ভর্তি হচ্ছেন। সুপার সুস্মিতা দাশগুপ্ত ঘোষ বলেন, ‘‘রোগী বাড়ছে। লোকবল কম থাকায় সমস্যা হলেও পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে।
সোমবার দক্ষিণ শহরতলির বিষ্ণুপুর ১ নম্বর ব্লকের রঘুদেবপুর এলোকেশী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে পানীয় জল খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে কিছু পড়ুয়া। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ওই স্কুলে পানীয় জল সরবরাহ করে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। এ দিন জল খেয়ে বেশ কিছু ছাত্রী জানায় তাদের পেটে যন্ত্রণা হচ্ছে। কয়েক জন বমিও করে। তাদের ভর্তি করা হয় আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালে। দ্রুত বাড়তে থাকে সংখ্যাটা। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, প্রায় শ’দেড়েক পড়ুয়া অসুস্থ। আমতলা গ্রামীণ হাসপাতাল, এম আর বাঙুর, সামালি স্বাস্থ্য কেন্দ্র, বেহালা বিদ্যাসাগর হাসপাতালে ভর্তি তারা। জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের নেতৃত্বে চিকিৎসকদের একটি দল তাদের পর্যবেক্ষণ করছেন। জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ তরুণ রায় বলেন, ‘‘জেলা ও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের চিকিৎসকদের কয়েকটি দল পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন।’’
অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, জনস্বাস্থ্য-কারিগরি দফতরের জল সরবরাহকারী পাইপে অনেক জায়গায় ফুটো রয়েছে। পাইপের অধিকাংশ থাকে মাটির তলায়। রক্ষণাবেক্ষণেও অভাব রয়েছে। বর্ষার নোংরা জল পাইপের জলে মিশেই সংক্রমণ হয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা গার্গী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তরুণবাবু জানান, স্কুলের জলের নমুনা পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছে। দরকারে জন-স্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy