মেয়র ফিরহাদ হাকিম বাজেট বিবৃতিতে ‘বিজ্ঞাপন-নীতি’র ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু এক বছর পরেও এই নীতি এখনও কার্যকর করা হয়নি। ফাইল ছবি।
শহরের পথে বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ‘বিজ্ঞাপন-নীতি’র ঘোষণা করা হয়েছিল গত বছরের মার্চে। মেয়র ফিরহাদ হাকিম বাজেট বিবৃতিতে সেই ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু এক বছর পরেও এই নীতি এখনও কার্যকর করা হয়নি। ফলে সৌন্দর্যায়নকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শহরে বিজ্ঞাপনী হোর্ডিংয়ের রমরমা চলছেই। চলতি মাসে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের পুর বাজেট পেশ করবেন মেয়র। এই অবস্থায় নয়া বিজ্ঞাপন-নীতি কবে চালু হবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।
গত ২৮ নভেম্বর বর্তমান পুর বোর্ডের বর্ষপূর্তিতে ফিরহাদ বলেছিলেন, ‘‘হোর্ডিং-নীতি এখনও আমরা করতে পারিনি। এটাআমাদের অনেক দিনের স্বপ্ন। এখনও মূল রাস্তায় বড় বড় হোর্ডিং রয়েছে। কোন রাস্তায় কত হোর্ডিং থাকবে, তা নিয়েই এই নীতি তৈরি করার কথা।’’ পুরসভা সূত্রের খবর, বিজ্ঞাপন-নীতির খসড়া রাজ্য সরকারের কাছেপাঠানোর পরে তা ইতিমধ্যে অনুমোদনও হয়ে গিয়েছে। পুর বিজ্ঞাপন দফতরের এক শীর্ষকর্তার কথায়, ‘‘ওই খসড়ায় কিছু সংশোধন বাকি রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, তিন মাসের মধ্যে বিজ্ঞাপন-নীতি চালু হবে।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, এই নীতি বাস্তবায়িত হলে শহরের উদ্যানগুলিতে বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং দেওয়া বন্ধ করা হবে। শহরের কোনও স্থাপত্য, হেরিটেজ ভবনেরসামনের অংশকে বিজ্ঞাপনের আড়ালে ঢেকে দেওয়া চলবে না। হোর্ডিং লাগানোর লোহার কাঠামোটিও ঢাকা থাকতে হবে। এই বিজ্ঞাপন-নীতি অনুযায়ী কোনও বিপজ্জনক বাড়িতে বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং থাকা চলবে না। হোর্ডিং বোর্ডের পরিমাপ এবং দু’টি হোর্ডিংয়েরমাঝের ন্যূনতম দূরত্বও নির্দিষ্ট করা হয়েছে সেখানে। এই নয়া নীতিতে হোর্ডিং বসানোর ক্ষেত্রে একাধিক নতুন নিয়ম বাস্তবায়িত হওয়ার কথা। কিন্তু এখনও তা না হওয়ায় শহর জুড়ে বেআইনি হোর্ডিংয়ের রমরমা চোখে পড়ার মতো বলে অভিযোগ।
পুরসভার বিজ্ঞাপন দফতর সূত্রের খবর, শহরের রাজপথের দু’ধারে হোর্ডিং থেকে আয়ের জন্য গতদু’বছর ধরে পুরসভা টেন্ডার ডাকলেও তাতে কোনও সংস্থাই অংশগ্রহণ করেনি। কিন্তু রাস্তায় রাস্তায় বেআইনি হোর্ডিং রয়েই গিয়েছে বলে অভিযোগ। পার্ক স্ট্রিট, ক্যামাক স্ট্রিট, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড, পার্কসার্কাস, গড়িয়াহাট, ঢাকুরিয়া থেকে শুরু করে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, শ্যামবাজার, বিবেকানন্দ রোড-সহ শহরের বিভিন্ন এলাকাতেই দেখা যায় বেআইনি হোর্ডিংয়ের রমরমা। পুরসভা সূত্রের খবর, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে বিজ্ঞাপন দফতর ১৫ কোটি৫ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় করেছিল। চলতি অর্থবছরে এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞাপন বাবদ কর আদায়ের পরিমাণ ১১ কোটি টাকা। অতিমারির আগে পুর বিজ্ঞাপন দফতরে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ গড়ে ২৫-৩০ কোটি টাকা। কিন্তু করোনার পরে চলতি বছরে মাত্র ১১ কোটি রাজস্ব আদায় যেআশানুরূপ নয়, তা স্বীকার করছেন দফতরের আধিকারিকেরা।
আধিকারিকদের একাংশের মতে, গত দু’বছরে হোর্ডিং বসানোর টেন্ডারে কোনওসংস্থা না আসায় তা রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ার কারণ হিসাবে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি, শহর জুড়ে বেআইনি হোর্ডিংয়ের বিরুদ্ধে পুরকর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিলে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ আরও বাড়তে পারত। বিজ্ঞাপন দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘নতুনঅর্থবর্ষ শেষ হতে এখনও বাকি প্রায় এক মাস। আশা করছি, গত বছরের তুলনায় বিজ্ঞাপন দফতরে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বাড়বে। বেআইনি হোর্ডিংয়ের বিরুদ্ধে পুরসভা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy